আরমান ভূঁইয়া

  ২৬ সেপ্টেম্বর, ২০২২

অনলাইন জুয়ায় অর্থপাচার

প্রমাণ আছে, তদন্ত নেই

অনলাইনে বেটিং, ক্রিকেট অথবা ফুটবল গেমস খেলার নামে জুয়ার বিভিন্ন সাইট ও মোবাইল অ্যাপস রয়েছে। শহর থেকে শুরু করে গ্রামাঞ্চলগুলোতে ছড়িয়ে পড়েছে অনলাইন জুয়ার প্রচলন। এসব জুয়ার সাইটের মাধ্যমে প্রতিদিন কোটি কোটি টাকা লেনদেন হচ্ছে। বিশেষ করে মোবাইল ব্যাংকিংয়ের (বিকাশ, নগদ, রকেট ও ট্রাস্ট এজিয়া) মাধ্যমে অনলাইনে জুয়ার টাকা লেনদেন করা হয়। আর এসব অনলাইন জুয়ার মাধ্যমে দেশের কোটি কোটি টাকা বিভিন্ন দেশে পাচার করছে কয়েকটি সংঘবদ্ধ চক্র।

অনলাইন জুয়ার সাইট ও অ্যাপসগুলো মূলত বিদেশে বসে পরিচালনা করা হয়। তবে কার্যক্রম দেখভালের জন্য রয়েছে দেশীয় বিভিন্ন এজেন্ট। তারা গ্রাহক সংগ্রহ, জুয়ার টাকা হুন্ডিসহ বিভিন্ন মাধ্যমে বিদেশে পাচার করছে। গত কয়েক বছরে অনলাইন বেটিং সাইটগুলোর মাধ্যমে কোটি কোটি টাকা অর্থপাচারের প্রমাণ পেয়েছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। তবে প্রাথমিক তথ্য পেলেও অনুসন্ধান ও অর্থপাচার মামলার অগ্রগতি নেই। অর্থপাচার আইনে তদন্তে দায়িত্বপ্রাপ্ত সংস্থা পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি) থাকলেও নেই কোনো অগ্রগতি।

সম্প্রতি সিআইডির সাইবার পুলিশ সেন্টার অনলাইন জুয়ার সাইট ‘বেটউইনারের’ ৩ বাংলাদেশি এজেন্টকে গ্রেপ্তার করেছে। তাদের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদের সংস্থাটি জানিয়েছিল, বেটউইনার সাইপ্রাসভিত্তিক মারিকিট হোলিডংস লিমিটেডের একটি অনলাইন জুয়ার সাইট, যা রাশিয়া থেকে পরিচালিত হয়। জুয়ার টাকা মোবাইল ফিন্যান্সিয়াল সার্ভিসের মাধ্যমে তুলে ‘বাইন্যান্স’ নামক মানি এক্সচেঞ্জ অ্যাপের মাধ্যমে মার্কিন ডলারে কনভার্ট করে বিভিন্ন দেশে পাচার করেছে। গ্রেপ্তার চক্রের তিন এজেন্ট চার মাসে চার কোটি টাকা বিদেশে পাচার করেছে বলে তথ্য পায় সিআইডি। তবে এখনো এ পাচারের বিষয়ে অর্থপাচার আইনে অনুসন্ধান শুরু হয়নি বলে জানায় সিআইডির সাইবার পুলিশ সেন্টারের বিশেষ পুলিশ সুপার মোহাম্মদ রেজাউল মাসুদ।

অনলাইন জুয়া নিয়ে সিআইডির পাশাপাশি ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি) তদন্ত করে আসছে। ডিবি-সাইবার অ্যান্ড স্পেশাল ক্রাইম বিভাগ ২০২০ সালে শিলং তীর নামে একটি অনলাইন জুয়া পরিচালনাকারীর চার এজেন্টকে গ্রেপ্তার করে। এ মামলার তদন্ত শেষ করে সম্প্রতি আদালতে চার্জশিট দিয়েছেন তারা। তদন্ত-সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, ঢাকায় অবস্থান করে জুয়ার এই এজেন্টরা সেলসম্যানদের কাছ থেকে নেওয়া টাকা মোবাইল ফিন্যান্সিয়াল সার্ভিসের মাধ্যমে সিলেটের জাফলংয়ে পাঠায়। এরপর সেখান থেকে অবৈধ হুন্ডির মাধ্যমে ভারতের শিলংয়ে পাচারের তথ্য পেয়েছে ডিবি।

ডিবি-সাইবার অ্যান্ড স্পেশাল ক্রাইম বিভাগের উপপুলিশ কমিশমনার (ডিসি) মোহাম্মদ তারেক বিন রশিদ বলেন, অনলাইন বেটিং সাইটের মামলার তদন্ত করতে গিয়ে কয়েকজনের বিরুদ্ধে অর্থপাচারের প্রাথমিক প্রমাণ পেয়েছি। এর সঙ্গে সন্দেহভাজন বেটিং সাইটগুলোর তথ্য আমরা সিআইডিতে পাঠিয়েছি। তবে এখনো কোনো বেটিং সাইটের বিরুদ্ধে অর্থপাচার আইনে অভিযোগ আনা হয়নি। অনলাইন জুয়ার বিরুদ্ধে একাধিক অভিযান চালিয়েছে সিআইডির সাইবার পুলিশ সেন্টার ও ডিবি-সাইবার অ্যান্ড স্পেশাল ক্রাইম বিভাগ। এসব সাইটের সঙ্গে যুক্তদের বিরুদ্ধে করা ৬টি মামলার তদন্ত চলছে। এতে ওয়ানএক্সবেট, মোস্টবেট, বেটবুজডট৩৬৫, বেট৩৬৫এনআইসহ বিভিন্ন জুয়ার সাইট রয়েছে।

তদন্ত-সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তরা জানান, এসব অনলাইন বেটিং সাইটগুলোর বিরুদ্ধে শত শত কোটি টাকা পাচারের প্রাথমিক প্রমাণ পাওয়া গেছে। তারা হুন্ডি, ক্রিপ্টোকারেন্সি, বাইন্যান্সসহ বিভিন্ন মাধ্যমে টাকা পাচার এবং লেয়ারিং করেছে। অর্থপাচারের তদন্তের জন্য নির্ধারিত ইউনিট সিআইডির ফিন্যান্সিয়াল ক্রাইম কাজ করে। তদন্তে অর্থপাচারের প্রাথমিক প্রমাণের তথ্য তাদের পাঠানো হয়েছে।

তবে এসব জুয়ার অর্থপাচারের বিরুদ্ধে এখনো কোনো মামলা কিংবা অনুসন্ধান শুরু করেনি সিআইডির ফিন্যান্সিয়াল ক্রাইম ইউনিট। এ ইউনিটের বিশেষ পুলিশ সুপার হুমায়ুন কবির বলেন, সাইবার পুলিশ সেন্টার জুয়ার সাইটের বিরুদ্ধে অভিযান চালিয়েছেন এবং তদন্তের কাজ করছে। অর্থপাচারের অনুসন্ধান তারাই করবেন। অর্থপাচার ও অনলাইন জুয়ার একাধিক তদন্ত কর্মকর্তা জানান, ২০২০ সাল থেকে দেশে অনলাইন জুয়া ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়েছে। এসব সাইটের আসক্তি ও গ্রাহকও বাড়ছে। ফলে অবৈধভাবে অর্থ লেনদেন ও দেশের টাকা অর্থপাচার হচ্ছে। অর্থপাচার একটি মারাত্মক অপরাধ। এর তদন্ত এবং বিচারে ধীরগতি থাকায় অনলাইন জুয়ার বেটিং সাইটগুলো বন্ধ হচ্ছে না। এসব জুয়ার মাধ্যমে দেশের টাকা লেয়ারিং করে বাইরে চলে যাচ্ছে। অর্থপাচার আইনে তদন্ত করে এসব টাকা জব্দ ও ফিরিয়ে আনা সম্ভব।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close