নিজস্ব প্রতিবেদক

  ২৫ সেপ্টেম্বর, ২০২২

এক দশক পর গ্রেপ্তার ফাঁসির আসামি

বিরোধের জেরে ২০১২ সালে রাজধানীর শাহ আলী এলাকায় বাসু মিয়াকে প্রকাশ্যে হত্যা করে আলকেস ও তার দলবল। ওই ঘটনায় দায়ের করা হত্যা মামলায় ২০২১ সালে আদালত ৫ আসামির মৃত্যুদণ্ড ও দুজনের যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের আদেশ দেয়। ঘটনার পর থেকেই দীর্ঘ ১০ বছর পলাতক ছিল আলকেস।

শুক্রবার (২৩ সেপ্টম্বর) এ মামলার প্রধান আসামি মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত মো. আলকেসকে বরিশাল শহর থেকে গ্রেপ্তার করে র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নের (র‌্যাব)।

র‌্যাব জানায়, বাসু মিয়া হত্যার পর জামিনে বেরিয়ে প্রায় এক দশক পলাতক ছিল আলকেস। নিজের নামণ্ডপরিচয় গোপন করে ঢাকার সাভারসহ বিভিন্ন এলাকায় আত্মগোপনে ছিল। কখনো বাসচালক, আবার কখনো দিনমজুরের কাজ করেছে। এরপর জড়িয়ে পড়ে ট্রলার ডাকাতিদলে।

শনিবার (২৪ সেপ্টেম্বর) দুপুরে রাজধানীর কারওয়ান বাজার র‌্যাব মিডিয়া সেন্টারে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান র‌্যাব-৪-এর অধিনায়ক (সিও) অতিরিক্ত ডিআইজি মোজাম্মেল হক।

তিনি বলেন, বিরোধের জের ধরে ২০১২ সালের ১৪ মে, বিকাল ৫টার দিকে আলকেস, আজগর, রাজু, খলিল, সেলিম, কদর আলী, লেদুসহ অজ্ঞাতনামা আরো ৬-৭ জন আগ্নেয়াস্ত্র, দেশীয় ধারালো অস্ত্র ও রড নিয়ে বাসু মিয়ার ওপর আক্রমণ করে। একপর্যায়ে আলকেস আগ্নেয়াস্ত্র দিয়ে কয়েক রাউন্ড গুলি করলে বাসু মাথায় লাগে এবং ঘটনাস্থলেই তার মৃত্যু হয়।

এই ঘটনায় ভিকটিমের ভাই চিনু মিয়া বাদী হয়ে আলকেসসহ ১৩ জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাতনামা আরো ৬-৭ জনকে আসামি করে বিরুদ্ধে শাহ আলী থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। হত্যা মামলায় গ্রেপ্তারের পর আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন আলকেস। পরে জামিনে বের হয়ে আত্মগোপনে চলে যান।

মামলার তদন্ত শেষে মোট ১৪ জনের নামে অভিযোগপত্র দাখিল হলে আদালত বিচারকার্য শেষে ২০২১ সালের ১৫ নভেম্বর আসামি মো. আলকেস, আজগর আলী, খলিল, সেলিম ও রাজুকে মৃত্যুদণ্ড এবং কদর আলী ও লেদুকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের আদেশ দেয়।

এদিকে জামিনে থাকা অবস্থায় গ্রেপ্তার আলকেসদের সঙ্গে আজাহার ও সানুর মতবিরোধ সৃষ্টি হয়। সেই ক্ষোভ থেকে আলকেসদের হামলায় সমিতির সদস্য আজাহার ও সানু হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়। এই ডাবল মার্ডারের মূল আসামিও মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আলকেস। ওই ঘটনায় আলকেসের বিরুদ্ধে আরো একটি হত্যা মামলা আদালতে বিচারাধীন।

বাসু হত্যা মামলায় চার মাস হাজতবাস করে জামিন নিয়ে এলাকায় অবৈধ বালুর ব্যবসা শুরু করে আলকেস। বিরোধের জেরে বাসু হত্যা মামলার অপর আসামি আজাহার এবং সানু নির্মমভাবে হত্যার শিকার হয়। সাভার থানা থেকে ওয়ারেন্ট জারির পর আত্মগোপনে যায় আলকেস।

অবৈধভাবে বালু উত্তোলন এবং সংরক্ষণ করার অপরাধে পরিবেশ অধিদপ্তর তার বিরুদ্ধে শাহ আলী থানায় ৪৩১/৩৪ ধারায় হওয়া মামলারও পলাতক ওয়ারেন্টভুক্ত আসামি আলকেস। এছাড়াও তিনি শাহ আলী থানায় ৩৯৯/৪০২ ধারায় ডাকাতির প্রস্তুতি মামলার ওয়ারেন্টভুক্ত পলাতক আসামি।

গত ১০ বছর ধরে আলকেস ঠিকানা পরিবর্তন করে বিভিন্ন ছদ্মবেশ ধারণ করে দেশের বিভিন্ন এলাকায় আত্মগোপনে ছিল। আত্মগোপনে থাকা অবস্থায় নিজের নামণ্ডপরিচয় ও পেশা বদলে ফেলে। প্রথমে সাভারের বিভিন্ন এলাকায় শ্রমিকের কাজের পাশাপাশি হত্যা, ডাকাতি করত। পরে বরিশাল গিয়ে ট্রাকের হেল্পার ও পরে চালক হিসেবে কাজ করেন। বেপরোয়াভাবে বাস চালানের সময় সিলেটে তার বাসের নিচে পড়ে একজন নিহত হয়। ওই ঘটনায় মামলা হলে তিনি পুনরায় পালিয়ে কুয়াকাটায় মাছ ধরার ট্রলারে কাজ শুরু করে। মাছ ধরার পাশাপাশি সাগরে বিভিন্ন ট্রলারে ডাকাতি করত বলে স্বীকার করেছে আলকেস।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close