কুষ্টিয়া প্রতিনিধি

  ২৩ সেপ্টেম্বর, ২০২২

কুষ্টিয়ায় সংবাদ সম্মেলন

ছাত্রলীগে পাল্টাপাল্টি অভিযোগ

জেলার শীর্ষ ছাত্রলীগ নেতাসহ কয়েকজন ছাত্রলীগ নেতার বিরুদ্ধে অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে বুধবার (২১ সেপ্টেম্বর) বেলা সাড়ে ১১টায় কুষ্টিয়া জেলা আওয়ামী লীগের কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলন করেছে জেলা ছাত্রলীগ। সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য দেন কুষ্টিয়া জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি আতিকুর রহমান অনিক ও সাধারণ সম্পাদক শেখ হাফিজ চ্যালেঞ্জ। জেলা ছাত্রলীগের

সভাপতি আতিকুর রহমান অনিক বলেন, ছাত্রীটির এসব অভিযোগ মিথ্যা, বানোয়াট, ভিত্তিহীন ও ষড়যন্ত্রমূলক। এদিকে জেলা ছাত্রলীগের সহসম্পাদক পদধারী ছাত্রলীগ নেত্রী নওরিন রহমান সংবাদ সম্মেলন করে পাল্টা অভিযোগ বলেছেন, জেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক শেখ হাফিজ চ্যালেঞ্জের হাত ধরে ছাত্রলীগের রাজনীতি শুরু করি। পরে তার ব্ল্যাকমেইলের শিকার হয়েছি। তার কাছ থেকে কুপ্রস্তাব পেয়েছি। এভাবেই পরস্পরকে অভিযুক্ত ও দোষারোপ করেছেন তারা।

সাধারণ সম্পাদক শেখ হাফিজ চ্যালেঞ্জ বলেন, ‘যেসব নেতাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ উত্থাপন করেছে তা সঠিক নয়। কথিত ওই নেত্রী আমাকে ফাঁসানোর চেষ্টা করছে। ছাত্রলীগের নেতাদেরও ফাঁসানোর চেষ্টা করছে। এ ঘটনায় তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি।’ তিনি আরো বলেন, কথিত ওই নেত্রী বিবাহিত, অনেকের সঙ্গে অনৈতিক সম্পর্ক ও মাদকের সঙ্গে সংশ্লিষ্টতা রয়েছে এবং বিভিন্ন পুরুষের সঙ্গে তার অনৈতিক সম্পর্ক রয়েছে। সেসব ছবি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে। কে বা কারা ছড়িয়েছে তা আমাদের জানা নেই।

শেখ হাফিজ চ্যালেঞ্জ দাবি করেন, ‘প্রকৃত অর্থে কুষ্টিয়া জেলা শাখার কমিটি করার আগে যাচাই-বাছাই করতে গিয়ে ওই ছাত্রীর বিরুদ্ধে বিস্তর অভিযোগ পেয়েছিলাম। বিয়ে করে মামলা দিয়ে জোর করে অর্থ আদায় ও অনৈতিক কাজের সঙ্গে সম্পৃক্ততা রয়েছে। যার পরিপ্রেক্ষিতে প্রস্তাবিত ১৫১ সদস্যবিশিষ্ট জেলা কমিটিতে তার নাম দেওয়া হয়নি বলেই ওই ছাত্রী এসব কুৎসা রটনা করছে।’

এ দিকে, ‘থানায় জিডি করে, পুলিশের কাছে লিখিতভাবে অভিযোগ করেও প্রতিকার না পাওয়ার কুষ্টিয়া জেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক শেখ হাফিজ চ্যালেঞ্জের বিরুদ্ধে একাধিক অভিযোগ তুলে সংবাদ সম্মেলন করেছেন জেলা ছাত্রলীগের সহসম্পাদক নেত্রী নওরিন রহমান।’ বুধবার (২১ সেপ্টম্বর) বেলা ১১টায় কুষ্টিয়া শহরের বড়বাজারের এক রেস্টুরেন্টে সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন তিনি। লিখিত বক্তব্যে তিনি বলেন, ‘কুষ্টিয়া জেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক শেখ হাফিজ চ্যালেঞ্জের হাত ধরে ছাত্রলীগের রাজনীতি শুরু করি। তখন থেকে তার বাসায় আমাকে বিভিন্ন কারণে ডাকত। এক দিন তার সঙ্গে দল করতে হলে তার যেকোনো শর্তে রাজি হতে বলে। আমি তার প্রস্তাব এড়িয়ে যাই, কিন্তু আমার এক দাদার সঙ্গে টি-শার্ট পরা একটি পারসোনাল ছবি চ্যালেঞ্জ কোনোভাবে হাতে পায়। পরে তার বাসায় ডেকে ছবিটি দেখিয়ে আমাকে ব্ল্যাকমেইল করে কুপ্রস্তাব দেয়। আমি তার প্রস্তাবে রাজি না হলে ওই ছবি ভাইরাল করার ভয় দেখায়। আমি ভয় পেয়ে তাকে খারাপ মানুষ বলে চলে আসি আর নিজেকে একা রাখার চেষ্টা করি। এই অপমানের প্রতিশোধ নিতে চ্যালেঞ্জ তার ছোট ভাইদের ওই ছবি এবং আমার কিছু এডিট করা ছবি ভুয়া ফেসবুক আইডি খুলে বাজে ভাষায় ক্যাপশন দিয়ে প্রচার করে। রাস্তায় দেখা হলে চ্যালেঞ্জের সহযোগীরা আজেবাজে কথাবার্তাসহ নানাভাবে হুমকি দিচ্ছে। দিন দিন এর মাত্রা বেড়ে যাওয়া আমি কোনো উপায় না পেয়ে গত ১৯ সেপ্টেম্বর কুষ্টিয়া মডেল থানায় একটি লিখিত অভিযোগ দিয়েছি। কিন্তু তিন দিন অতিবাহিত হলেও পুলিশ কোনো ব্যবস্থা নেয়নি। উল্টো চ্যালেঞ্জসহ তার সহযোগীরা আমাকে নানাভাবে হুমকি দিচ্ছে। এমনকি তারপর থেকে বিভিন্ন নামে ফেসবুক আইডি খুলে আমার চরিত্র ও সম্মানহানিকর আজেবাজে লেখা পোস্ট করে সুস্থ সামাজিক ও পারিবারিক নিরাপত্তা রক্ষা করে আমার বেঁচে থাকাকে দুর্বিষহ করে তুলেছে। এ ঘটনার ন্যায় বিচার চেয়ে বারবার পুলিশকে জানালেও কোনো প্রতিকার পাচ্ছি না।’ নিজের সম্মান, সভ্রম, মর্যাদা ও নিরাপদ জীবন নিয়ে প্রতিনিয়ত চরম হুমকির কোনো প্রতিকার না পেলে সর্বশেষ আত্মহননের পথ বেছে নেওয়া ছাড়া আর কোনো বিকল্প থাকবে না বলেও জানান এই ছাত্রলীগ নেত্রী। তিনি আরো বলেন, আমি মঙ্গলবার এসপি অফিসে গিয়েছিলাম, তিনি অফিসে ছিলেন না। আমি এই বিষয়টা জেলা নেতাদের জানিয়েছি, তারা এর কোনো পদক্ষেপ নিচ্ছে না। তারা শুধু আমাকে আশ্বাস দিচ্ছেন যে, হ্যাঁ তোমার ব্যবস্থা আমরা করব। তিনি প্রধানমন্ত্রী ও পুলিশ প্রধানের কাছে হস্তক্ষেপ কামনা করেন সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে। এ ঘটনায় তিনি কুষ্টিয়া মডেল থানায় ২০ সেপ্টেম্বর জেলা ছাত্রলীগের ৬ নেতার নাম উল্লেখ করে একটি এজাহার দেন।

তবে এই পাল্টা পাল্টি অভিযোগের সত্যতা নিশ্চিত করে কুষ্টিয়া মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ পুলিশ পরিদর্শক দেলোয়ার হোসেন খান বলেন, ‘নওরিন রহমান নামে এক ছাত্রলীগ নেত্রীর লিখিত অভিযোগ পেয়েছি। অভিযোগের সত্যতা তদন্ত করে দেখা হচ্ছে। আইনের কাছে সবাই সমান। কাউকে কম বা বেশি গুরুত্ব দিয়ে দেখছে না পুলিশ। ঘটনার সত্যতা পেলে অবশ্যই জড়িতদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close