মোস্তাফিজ, তালতলী (বরগুনা)

  ১৯ সেপ্টেম্বর, ২০২২

বিলুপ্তির পথে শুভ সন্ধ্যা সৈকতের ঝাউবন

বঙ্গোপসাগরের তীরবর্তী বিস্তীর্ণ এলাকাজুড়ে শুভ সন্ধ্যা সমুদ্রসৈকত। বাতাসের ঝিরঝির শব্দে দোল খায় সৈকতের সবুজ ঝাউবন। বালুময় দীর্ঘ সৈকত আর ঝাউবনের সবুজ সমীকরণের এ দৃশ্যটি যেন প্রকৃতি প্রেমের একটি উদাহরণ।

উপকূলীয় জেলা বরগুনার তালতলী উপজেলার নিশানবাড়িয়া ইউনিয়নের নলবুনিয়ার চরে অবস্থিত এই শুভ সন্ধ্যা সমুদ্রসৈকত। অবৈধভাবে বালু উত্তোলন, দুর্যোগ, জলোচ্ছ্বাসসহ নানা কারণে বিলুপ্তির পথে শুভ সন্ধ্যার সমুদ্রসৈকতের ঝাউবন। ৮ বছর আগেও যেখানে হাজার হাজার ঝাউগাছ দাঁড়িয়ে ছিল সেখানে এখন নামমাত্র কিছু গাছের অস্তিত্ব লক্ষ্য করা যায়। যা আছে তাও বিলুপ্তির পথে।

বন বিভাগ সূত্রে জানা যায়, ২০১৪-১৫ সালে সৈকতের ১০ হেক্টর ও ২০২০-২১ সালে ৭ হেক্টর জায়গায় তারা ঝাউগাছের চারা রোপণ করেন। এতে সৈকতে সবুজবেষ্টনী তৈরি হয়। সবুজের সমারোহে সৈকতে এক মনোরম দৃশ্য ফুটে ওঠে। কিন্তু ২০১৮-১৯ সাল থেকে সমুদ্রের ঢেউয়ের ঝাপটায় শুরু হয় বালুক্ষয়। আর অব্যাহত বালুক্ষয়ের কারণে ভাঙতে শুরু করে ঝাউবন। এখন মাত্র ৫০ থেকে ৬০টি ঝাউগাছ টিকে আছে।

স্থানীয়দের অভিযোগ, বন বিভাগের গাফিলতি, সৈকত ব্যবস্থাপনা কমিটির অব্যবস্থাপনা, সৈকত থেকে বিভিন্ন সময়ে অবাধে বালু উত্তোলনের ফলে ঝাউবন ক্রমেই হারিয়ে যাচ্ছে। দ্রুত সুরক্ষার উদ্যোগ গ্রহণ করা না হলে সৈকতে ঝাউগাছের অস্তিত্বই থাকবে না।

সরেজমিনে ঘুরে দেখা গেছে, যে ঝাউ গাছগুলো কেন্দ্র করে এই সৈকতের আকর্ষণ গড়ে উঠেছে সেই গাছগুলোর অস্তিত্বই বিলীন হওয়ার পথে। সমুদ্রের অস্বাভাবিক ঢেউয়ের কারণে অধিকাংশ ঝাউগাছের শিকড় থেকে মাটি সরে গিয়ে গাছ হেলে পড়ছে। এতে সৈকত প্রকৃতিক সৌন্দর্য হারাচ্ছে। দ্রুত সময়ের মধ্যে ভাঙন ঠেকাতে না পরলে আগামী এক বছরের মধ্যে সৈকতের পুরো ঝাউবন সমুদ্র বিলীন হয়ে যাবে বলে আশঙ্কা করছেন স্থানীয়রা।

পর্যটকরা জানান, এখানে উপমহাদেশের সবচেয়ে বড় জোছনা উৎসব অনুষ্ঠিত হয়েছে। উৎসব ঘিরে লাখো মানুষের সমাগম ঘটে। তা ছাড়া প্রতিদিন শত শত পর্যটক আসত। সমুদ্রের মূল আকর্ষণ ছিল ঝাউবন। বিভিন্ন দুর্যোগ, জলোচ্ছ্বাস ও অবৈধ বালু উত্তোলনের কারণে বিলুপ্তির পথে ঝাউবন।

স্থানীয়রা জানান, পর্যটকদের অবহেলা ও সমুদ্র থেকে বালু উত্তোলনে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে সাগর পাড়ের উদ্ভিদ ও সাগরের জীববৈচিত্র্য। সৈকতের সৌন্দর্যবর্ধনকারী ঝাউবন সংরক্ষণের দায়িত্ব না নিলে উপকূলীয় এলাকা ও সৈকত বিপন্ন হতে পারে।

যশোর থেকে আসা পর্যটক শরীফ বলে, এ সৈকত খুবই মনমুগ্ধকর। এখানে এসে আমার খুবই ভালো লেগেছিল। তবে সৈকতে সারি সারি ঝাউগাছ গাছ পড়ে আছে। যেটা দেখতে আমাদের মোটেও ভালো লাগেনি। দেখে মনে হয়েছে এটি একটি ধ্বংসস্তূপ।

ঝাউবন ও সৈকত এলাকার বাসিন্দা মাসুদ মিয়া বলেন, ৮ বছর আগে এখান থেকে প্রায় আরো ২ কিলোমিটার ঝাউবন ছিল পর্যটকরা হেঁটে সৈকতের ঢেউ উপভোগ করতে যেত। এখানে বিশাল ঝাউবন ছিল। কিন্তু এখন ভাঙতে ভাঙতে সমুদ্র বলতে গেলে একেবারে বেড়িবাঁধের কাছে চলে এসেছে।

বরগুনা জেলা পর্যটন উন্নয়ন কমিটির সাধারণ সম্পাদক আরিফ হোসেন ফসল বলেন, প্রাকৃতিক পরিবেশে গড়ে ওঠা পর্যটন এলাকাগুলো আমাদের সম্পদ। এর ব্যবহারে আমাদের সর্বোচ্চ সচেতন হতে হবে। কোনোভাবে যাতে পরিবেশদূষণ না হয় সে ব্যাপারে পর্যটকদের সতর্ক থাকতে হবে। অন্যথায় পরিবেশদূষণের ফলে প্রাকৃতিক পরিবেশ বিপর্যস্ত হবে। উপকূলীয় এলাকার আবহাওয়ার বিরূপ আচরণ ও জলবায়ু পরিবর্তনে মারাত্মক প্রভাব ফেলবে।

পটুয়াখালী বন বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা আবদুল্লাহ আল মামুন বলেন, ঝাউগাছ খুব স্বল্প গভীরের গাছ তাই সমুদ্রের ঢেউয়ের তোড়ে ও ঝাউগাছগুলো বিলীন হচ্ছে। তবে আমাদের পরিকল্পনা আছে আমারা নতুন করে ঝাউগাছ রোপণ করব।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close