নুর নবী রবিন, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়

  ১৮ আগস্ট, ২০২২

চবি ক্যাম্পাসে উত্ত্যক্ত রোধে নাফির মডেল

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে কোনো নারী শিক্ষার্থী নিপীড়নের শিকার হলে অনলাইনে জেনে যাবেন প্রক্টর। পড়ে দেখবেন যাবতীয় তথ্য। ব্যবস্থা নিতে বলবেন পুলিশকে। নারী শিক্ষার্থীদের নিপীড়ন প্রতিরোধে এমন একটি মডেল দিয়েছেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় সমাজতত্ত্ব বিভাগের ১৬-১৭ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী রাশিদ শাহরিয়ার নাফি।

বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসে প্রায়ই নারী শিক্ষার্থীদের হেনস্তা, উত্ত্যক্ত ও নিপীড়নের ঘটনা ঘটে। কেউ কেউ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনের কাছে অভিযোগ করলেও অনেকে বিড়ম্বনা এড়াতে চুপ হয়ে যান। অনেকে জানেন না কীভাবে অভিযোগ করতে হবে। ফলে সমস্যা বাড়তে থাকে। অনেকে মানসিকভাবে ভেঙে পড়েন। ব্যাহত হয় শিক্ষাকার্যক্রম।

নাফির এই মডেলের মাধ্যমে সহজে অভিযোগ জানানো যাবে। সেই লক্ষ্যে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনকে দুটি কাজ করতে হবে। (১) বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক ছাত্রী হলগুলোতে সিনিয়র ছাত্রীদের সমন্বয়ে কমিউনিটি পুলিশিং মেম্বার গঠন করতে হবে। (২) অন্যটি হলো সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে একটি পেজে গুগল ফর্ম চালু করতে হবে।

ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী চাইলে আবাসিক হলে থাকা কমিউনিটি পুলিশিং মেম্বার সিনিয়র ছাত্রীকে সরাসরি বলতে পারবেন। নতুবা ফেসবুক পেজে থাকা গুগল ফর্মে অভিযোগ জানাতে পারবেন। অভিযোগের কোনো প্রমাণ থাকলে সেসবও যুক্ত করতে পারবেন ফর্মে। এই গুগল ফর্মটি নিয়ন্ত্রণ করবে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টরিয়াল বডি। সেখানে অ্যাকসেস থাকবে বিশ্ববিদ্যালয়ের যৌন নিপীড়ন প্রতিরোধ সেলের সদস্যদের। অভিযোগের গুরুত্ব বুঝে তারা প্রাথমিক ব্যবস্থা নেবে। যদি অভিযোগ গুরুতর হয় তখন ফাইলটি পুলিশ প্রশাসনে পাঠিয়ে দেবে। এভাবে প্রক্রিয়াটি সম্পন্ন হবে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজতত্ত্ব বিভাগের শিক্ষার্থী ফারহা নাজনীন বলেন, ক্যাম্পাসে ও আশপাশ এলাকায় অনেক নারী শিক্ষার্থী প্রতিদিনই হেনস্তা, টিজের শিকার হন। তারা জানেনই না কীভাবে অভিযোগ দিতে হবে। কার কাছে অভিযোগ দিতে হবে। এই মডেলটিতে দেখা যাচ্ছে খুব সহজে গুগল ফর্মে অভিযোগ জানানো যাবে। এটি কার্যকর হলে আশাকরি সমস্যা কিছুটা কমবে। লোকপ্রশাসন বিভাগের স্নাতকোত্তর বর্ষের শিক্ষার্থী ফারহিন খান বলেন, এই মডেলটি দেখে কনভিন্সিং মনে হচ্ছে। এমন হলে তো ভালো, অন্ততপক্ষে যারা আসলেই বিপদে পড়েছেন তারা অভিযোগ করার জন্য একটা পদ্ধতি পাবেন। অনেকেই তো কী করবেন বুঝে উঠতে পারেন না। শেষে গিয়ে আর কোনো সুরাহা হয় না।

তবে ক্রিমিনোলজি ও পুলিশ সায়েন্স বিভাগের শিক্ষার্থী রওজাতুল জান্নাত বলেন, মডেলটিতে জবাবদিহি অবশ্যই থাকা দরকার। এই মডেলে পুলিশ বা প্রক্টরিয়াল বডির জবাবদিহি নিশ্চিত করা হয়নি। কাজের অগ্রগতির ফিডব্যাকের সিস্টেম নেই এখানে। প্রশাসন রাজনৈতিক দলের কর্মীদের ছাড় না দিলে এটা সম্ভব হতে পারে। তা ছাড়া প্রশাসন যে সৎ কাজ করছে- এটি মনিটর করবে কে? ঠিক কত দ্রুত ভুক্তভোগীকে তারা সাপোর্ট দিতে পারবে? কতক্ষণের মাঝে ক্রিমিনাল শনাক্ত করতে পারবে? এমন কোনো ব্যাখ্যা মডেলে দেওয়া হয়নি। এখানে কোনো কন্ট্রাক্ট নম্বরের কথা বলা নেই। কেউ ভিক্টিমাইজ হয়েছে, একটা গুগল ফর্ম পূরণ করার মানসিকতা তো তার থাকবে না তখন।

এদিকে মডেলটি বাস্তবায়ন নিয়ে আন্তরিক বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনও। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে রেজিস্ট্রার (ভারপ্রাপ্ত) প্রফেসর এস এস মনিরুল হাসান প্রতিদিনের সংবাদকে বলেন, এটি একটি ভালো মডেল। উদ্যোগটাও চমৎকার। গুগল ফর্মে খুব সহজে অভিযোগ জানানো যাবে। আমি এই মডেলটি বাস্তবায়নের জন্য উপাচার্য ম্যামের সঙ্গে আলাপ করব।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close