সুমন রায়, নরসিংদী

  ১৮ আগস্ট, ২০২২

কাঁঠালের ‘নিশান উৎসব’

মৌসুমি ফল কাঁঠাল বিক্রির শেষ সময়ে স্থানীয়ভাবে কাঁঠালকে বিদায় জানাতে নরসিংদীর শিবপুরে অনুষ্ঠিত হয়েছে কাঁঠালের ‘নিশান উৎসব’। শত বছরেরও অধিক সময় ধরে এই উৎসব পালন করে আসছে এই অঞ্চলের প্রজন্ম থেকে প্রজন্ম। উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় বিভিন্ন সময় এই উৎসবের আয়োজন করা হয়ে থাকে।

বুধবার (১৭ আগস্ট) সকালে নরসিংদীর শিবপুর উপজেলার বাঘাব ইউনিয়নের বিরাজনগর বাজার থেকে বিভিন্ন রঙের নিশান দিয়ে সজ্জিত ভ্যান গাড়িতে করে ওই এলাকার ভালো ভালো কাঁঠাল একত্রিত করে চেতন্যা বাজারে নিয়ে বিক্রি করা হয়। এই উৎসবে ঢাক-ঢোল বাজিয়ে আনন্দ করেন নানা বয়সি মানুষ। এই উৎসব এখানে প্রজন্ম থেকে প্রজন্ম আরো শত শত বছর টিকে থাকবে- সেই প্রত্যাশা এলাকাবাসীর।

শিবপুর উপজেলার বাঘাব ইউনিয়নের বিরাজনগর গ্রামে প্রতি বছর কাঁঠালে মৌসুমের শেষদিকে গাছে থাকা অবশিষ্ট ভালো ও বড় সাইজের কাঁঠাল এভাবেই হাটে বিক্রির উদ্দেশ্যে নিয়ে যায় তারা। কৃষকদের গাছে থাকা কাঁঠালকে বিদায় জানাতে মূলত এই উৎসবের আয়োজন। স্থানীয়ভাবে এই উৎসবকে বলা হয় কাঁঠালের ‘নিশান উৎসব’। শুধু বিরাজনগর নয়, শিবপুরের বাঘাব ইউনিয়নের প্রায় সব গ্রাম থেকেই এভাবে গাছের শেষ কাঁঠালটি হাটে নিয়ে যান বিক্রির জন্য।

স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ঠিক কত বছর ধরে এই উৎসব চলে আসছে তার সঠিক হিসাব নেই তাদের কাছে। তবে, শত বছরেরও অধিক সময় ধরে বছরের ভাদ্র মাসে এই উৎসবের আয়োজন করা হয়। এই শ্রাবণ মাসের শেষ দিকে অথবা ভাদ্র মাসের শুরুতে একটা দিনে সকালে গ্রামের কাঁঠাল ব্যবসায়ী ও কৃষকরা জড়ো হয়ে কাঁঠাল বহনকারী ভ্যান সাজায় বিভিন্ন রঙিন কাগজের নিশান ও জরি দিয়ে। পরে ঢাক-ঢোলের তালে নাচতে নাচতে হেঁটে রওয়ানা দেন হাটের দিকে। পরে সেই কাঁঠাল হাটে নিয়ে বিক্রি করা হয় ব্যাপারীদের কাছে।

স্থানীয় কৃষক খোরশেদ আলম ও আলতাফ হোসেন বলেন, আমরা ছোট থেকেই দেখে আসছি আমাদের বাবা-দাদারা এই উৎসব করে আসছে। আমরাও সেই ঐতিহ্য ধরে রাখতে এই উৎসব করি। আগে আমরা নিজেদের মাথায় করে কাঁঠাল নিয়ে উৎসব করতে করতে যশোর বাজারে গিয়ে কাঁঠাল বিক্রি করতাম। এখন সবাই মিলে ভ্যানে করে চৈতন্যা বাজারে নিয়ে বিক্রি করি। এবার কাঁঠালের ফলন ভালো হয়েছে তাই আনন্দটাও বেশি। প্রতি বছরই এই সময়টাতে যার যার গাছ থেকে শেষ সময়ের শেষ ভালো কাঁঠাল নিয়ে এসে একটি জায়গায় জমাই। পরে কাঁঠাল ভ্যানে সাজিয়ে রেখে নিশান ও বিভিন্ন রঙের জরি দিয়ে গাড়িটিকে সাজানো হয়। পরে ঢাক-ঢোলের তালে সবাই নেচে নেচে সেই কাঁঠাল বাজারে নিয়ে বিক্রি করি। এই কাঠালগুলোর ভালো দাম পাওয়া যায়।

স্থানীয় ইউপি সদস্য দুলাল মিয়া জানান, এই উৎসবটা মূলত এখানকার স্থানীয় কৃষকরা করে থাকে। জ্যৈষ্ঠ থেকে শুরু করে শ্রাবণ মাস পর্যন্ত কাঁঠালের পুরোপুরি মৌসুম থাকে। কিন্তু শ্রাবণ মাসের শেষ দিকে এবং ভাদ্র মাসের শুরুতে কাঁঠালের শেষ সময় থাকে। এই সময়টাতেই যার যার বাগানের ভালো কাঁঠালগুলো নিয়ে এসে এই উৎসবের আয়োজন করা হয়। এই উৎসবটা আমাদের একটি ঐতিহ্যবাহী উৎসব। আমি প্রতি বছরই এই উৎসবের ব্যাপারে উৎসাহ দিয়ে থাকি।

চৈতন্যা বাজারের কাঁঠালের পাইকার সৈয়দ উদ্দিন মিয়া জানান, প্রতি বছরই এই সময়টাতে গাছের শেষ ও বড় কাঁঠাল এই উৎসবের মাধ্যমে বাজারে নিয়ে আসেন গাছের মালিকরা। আমরা ওই কাঁঠালগুলো একটু বেশি দামেই ক্রয় করি। এখান থেকে কাঁঠাল ঢাকা, সিলেট, কুমিল্লা, নোয়াখালী, নারায়ণগঞ্জসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় রপ্তানি করি।

চৈতন্যা বাজার কমিটির সভাপতি ফজলুর রহমান বলেন, বাগান থেকে প্রত্যাশিত বিক্রি হওয়ার পর এই উৎসব হয়। এটি একটি ভিন্ন ধরনের উৎসব। এই উৎসবে তাদের সঙ্গে আমরাও আনন্দ করি। এছাড়া কাঁঠাল যেন নির্দ্বিধায় ও নিশ্চিন্তে বেচাকেনা হয় সে ব্যাপারে সব ধরনের নিরাপত্তা দেওয়া হয়।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close