আদিল হোসেন তপু, ভোলা
পাউবোর সহায়তা না পেয়ে স্বেচ্ছাশ্রমে বাঁধ সংস্কার

অস্বাভাবিক জোয়ারের তোড়ে ভোলার সদর উপজেলার শিবপুর ইউনিয়নের কালীকীর্তি গ্রামের প্রায় দেড় কিলোমিটার রিং বাঁধ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) কোনো পদক্ষেপ না নেওয়ায় এলাকাবাসী তিন দিন ধরে স্বেচ্ছাশ্রমে সেই রিং বাঁধ সংস্কার করেছেন।
পাউবোর নির্বাহী প্রকৌশলী মো. হাসানুজ্জামান বলেন, গত কয়েক দিনে পূর্ণিমা ও সাগরে নিম্নচাপের প্রভাবে জোয়ারের পানি অস্বাভাবিক উচ্চতায় উঠেছে। জোয়ারের পানির তোড়ে শিবপুরে রিং বাঁধের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে- এ কথা ঠিক। তিনি ওই এলাকা পরিদর্শন করেছেন। বাঁধটি শিবপুর ইউনিয়নের মূল বন্যা-জলোচ্ছ্বাস নিয়ন্ত্রণ বাঁধের বাইরে। দীর্ঘও অনেক, প্রায় দেড় কিমি। এটার গায়ে বালুভর্তি বস্তা ফেলে সংস্কার করতে কোটি টাকার দরকার।
জরুরি ভিত্তিতে সংস্কার করতে বোর্ড বা মন্ত্রণালয় এত টাকা দেবে না। টাকা আনতে নকশা করে প্রকল্প পাঠাতে হবে। সেই প্রকল্প মন্ত্রণালয় থেকে পাস করাতে হবে।
নির্বাহী প্রকৌশলী আরো বলেন, শিবপুরের ভাঙন ও জলোচ্ছ্বাস ঠেকাতে আপাতত কোনো বরাদ্দ পাউবো করতে পারবে না।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, শিবপুর ইউনিয়নের পুলেরগোড়া বাজার থেকে (মূল বন্যানিয়ন্ত্রণ বাঁধ) রিং বাঁধটি কালীকীর্তি নতুন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সামনে দিয়ে আবুল কাশেম ডাক্তার বাড়ির দরজার সামনে মূল বন্যানিয়ন্ত্রণ বাঁধের সঙ্গে মিশেছে। যার দৈর্ঘ্য প্রায় দুই কিলোমিটার। চারটি স্থানে প্রায় এক কিলোমিটার বাঁধ জোয়ারের পানিতে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। জোয়ারের সময় এখনো পানি বাঁধে এসে আছড়ে পড়ছে বলে স্থানীয়রা জানান।
ওই গ্রামে অবস্থিত ৫০ নম্বর কালীকীর্তি নতুন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. মনির উদ্দিন বলেন, এ বাঁধের মধ্যে একটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, তিনটি মসজিদ, ৩০০-৩৫০টি পরিবারের বসবাস ছাড়াও, মাছঘাট ও কয়েকটি বাজার রয়েছে। কয়েক দিনের জলোচ্ছ্বাসে বাঁধ ক্ষয়ে পানি প্রবেশ করেছে ওই এলাকার মানুষের বাড়িঘরে। এতে বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীর উপস্থিতি কমেছে। পাউবোর কাছে কোনো সাহায্য না পেয়ে, অভিভাবকদের উদ্যোগে স্বেচ্ছাশ্রমে তিন দিন ধরে সংস্কার করেছে।
বিদ্যালয়ের সভাপতি মো. ইউসুফ মাস্টার বলেন, বাঁধটি যেমন কালীকীর্তি গ্রামের পরিবারগুলোকে শুকনো রেখেছে। তেমনি বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরাও শুকনো অবস্থায় বিদ্যালয়ে যেতে পারছে।
কয়েক বছর আগে উচ্চ জোয়ারের তোড়ে বাঁধ ভেঙে পানি ঢুকে সবকিছু প্লাবিত হয়। তখন কয়েক মাস বিদ্যালয় বন্ধ ছিল। সেই আশঙ্কায় গ্রামবাসী স্বেচ্ছাশ্রমে প্রায় এক কিলোমিটার বাঁধ সংস্কার করেছে।
বিদ্যালয়ের অভিভাবক আবদুর হাই বলেন, তারা বস্তায় মাটি ভরে ক্ষতিগ্রস্ত স্থানে বসিয়েছে। তার পরও তারা শঙ্কার মধ্যে আছে। যদি পাউবো বালুভর্তি বস্তা বাঁধের গায়ে ফেলত, তাহলে তারা নিশ্চিতে রাত কাটাতে পারতেন।
ভোলা সদর উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. তৌহিদুল ইসলাম বলেন, উচ্চ জোয়ারের আঘাতে ভোলার বিভিন্ন এলাকায় বন্যা-জলোচ্ছ্বাস নিয়ন্ত্রণ বাঁধের ক্ষতি হয়েছে। তিনি শিবপুরে সরেজমিনে গিয়ে কার্যকর ব্যবস্থা নেবেন।
"