খুলনা ব্যুরো

  ১৭ আগস্ট, ২০২২

খুলনায় রেললাইনে ব্যবসায়ীর মৃত্যু নিয়ে নানা প্রশ্ন

জি এম ইমদাদুল ইসলাম মেহেদী, বয়স ৪২; একজন ব্যবসায়ী। খুলনা মহানগরীর হকার্স মার্কেটে ‘মেহেদী ক্লথ স্টোর’ নামে শাড়ি কাপড়ের একটি দোকানের মালিক তিনি। গত ১১ আগস্ট খুলনা মহানগরীর জোড়াগেট লেভেলক্রসিং সংলগ্ন রেললাইনে তার মৃতদেহ পাওয়া যায়।

এদিকে, ব্যবসায়ী মেহেদী ঋণের বোঝা সইতে না পেরে রেললাইনে ট্রেনের নিচে ঝাঁপ দিয়ে আত্মহত্যা করেছেন বলে প্রাথমিকভাবে প্রচার পায়। তবে বিষয়টি মানতে নারাজ তার পরিবারের সদস্যরা। কী পরিমাণ ঋণগ্রস্ত ছিলেন তিনি বা কারা তার কাছে টাকা পাবেন, মৃতদেহের পাশ থেকে উদ্ধার করা চিরকুটের তথ্য এবং স্বাভাবিক অবস্থায় প্রকাশ্য দিনের বেলায় এভাবে একজন সুস্থ মানুষ রেললাইনে ঝাঁপ দিয়ে আত্মহত্যা করবেন- বিষয়টি অনেক প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে। ফলে তাকে কি হত্যা করা হয়েছে, না-কি তিনি আত্মহত্যা করেছেন- এ নিয়ে নানা প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে।

এদিকে, মেহেদীর মৃতদেহের পাশ থেকে উদ্ধার হওয়া চিরকুট নিয়ে চাঞ্চল্যকর তথ্য বেরিয়ে এসেছে। তিনি লিখিত চিরকুটে হকার্স মার্কেটের দুজন ব্যবসায়ীর নাম উল্লেখ করে মূলত তার মৃত্যুর জন্য তাদেরই দায়ী করেছেন। তারা হচ্ছেন সেবা ও মাসুম। তবে ঘটনার ছয় দিন পরও পুলিশ এসব বিষয়ে তদন্ত কার্যক্রম শুরু করতে পারেনি।

নিহত ইমদাদুল ইসলাম মেহেদীর পরিবারের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, তিনি খুলনা মহানগরীর বানরগাতী এলাকার শহীদ সোহরাওয়ার্দী কলেজ রোড বাইলেন এলাকার মৃত নজরুল ইসলাম গোলদারের ছেলে নাবিয়া সামিন মানহা (৭) এবং সিদরাতুল মুনতাহা (সাড়ে তিন বছর) নামে দুটি কন্যাসন্তানের জনক তিনি।

খুলনা সিটি করপোরেশনে কর্মরত তার বড় ভাই ইমরুল ইসলাম মুকুল এ প্রতিবেদককে বলেন, তাদের মধ্যে পারিবারিক কোনো দ্বন্দ্ব ছিল না। তারা তিন ভাই-বোন খুবই আন্তরিকভাবে বসবাস করতেন। এমনকি স্ত্রীর সঙ্গেও তার ছিল না কোনো দ্বন্দ্ব বা পারিবারিক বিরোধ। ব্যবসায়িকভাবে বা অন্য কোনো কারণে তার সঙ্গে কারোর দ্বন্দ্ব বা বিরোধ ছিল কি না সেটিও তাদের জানা নেই। তবে কী কারণে রেললাইনে ঝাঁপ দিয়ে সে আত্মহত্যা করতে পারে- এটি তাদের কাছে পরিষ্কার নয়।

তিনি আরো জানান, গত ১১ আগস্ট তার ছোট ভাই মেহেদী দুপুর ১২টার দিকে বাসা থেকে বের হয়ে পাশের সিদ্দিকিয়া মাদরাসা থেকে তার বড় মেয়ে মানহাকে বাসায় দিয়ে দোকানে যান। সেখান থেকে জোহরের নামাজ আদায় করে একটি ছাতা নিয়ে বের হন। এরপর বিকাল সাড়ে ৪টার দিকে তার ভগ্নিপতি খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক মো. নূরুজ্জামানের মাধ্যমে তিনি জানতে পারেন তার ছোট ভাই মেহেদী দুর্ঘটনার শিকার হয়েছেন। এ খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে গিয়ে তার ক্ষতবিক্ষত মৃতদেহ দেখে নিজেকে আর সামলাতে পারেননি।

তিনি জানান, মেহেদী এর আগে হকার্স মার্কেটের দোকানে কর্মচারী হিসেবে ছিল। পরবর্তী সময়ে সে নিজেই একটি দোকান কিনে নেয়। তবে সেখানে কী পরিমাণ অর্থ বিনিয়োগ করা ছিল বা সে ঋণগ্রস্ত ছিল কি না- এ বিষয়ে তাদের কখনোই কিছু জানায়নি। এমনকি তার আচার-আচরণ বা কথাবার্তার মধ্যেও এ ধরনের কোনো দুশ্চিন্তা বা হতাশাও তারা দেখেনি। সম্পূর্ণ স্বাভাবিক জীবন আচরণ ছিল তার।

ব্যবসায়ী মেহেদীর আত্মীয় (স্ত্রীর বড় ভাই) কারিমুল ইসলাম বলেন, সম্প্রতি ব্যবসা ভালো যাচ্ছে না বলে মেহেদী নিজের স্ত্রীর কাছে হতাশা প্রকাশ করত। তবে কোনো লেনদেন বা এজন্য কারো সঙ্গে বিরোধ নিয়ে কোনো কথা শোনেনি তারা।

এদিকে নিহত ব্যবসায়ী মেহেদীর মামা নাজমুল হক বলেন, মেহেদীর মৃতদেহের পাশ থেকে যে চিরকুটটি উদ্ধার করা হয়েছে, তাতে হকার্স মার্কেটের দুজন ব্যবসায়ী সেবা ও মাসুমের নাম লেখা। তাতে উল্লেখ করা ছিল- সেবার কারণে তিনি মৃত্যুর পথ বেছে নিয়েছে। এমনকি তার কারণে মার্কেটের অনেক ব্যবসায়ী মারা যাবেন বলেও তাতে উল্লেখ রয়েছে। এ ছাড়া আরো কিছু বিষয় উল্লেখ ছিল, যা সে তাৎক্ষণিক খেয়াল করতে পারেনি। তবে চিরকুটটি আলামত হিসেবে রেলওয়ে পুলিশের হেফাজতে রয়েছে।

তিনি আরো বলেন, মেহেদীর মৃত্যুর পর কোনো ব্যবসায়ী বা কোনো ব্যক্তি পরিবারের কাছে অর্থ পাবেন বলে দাবি করেনি। ফলে সে ঋণগ্রস্ত ছিল কি না- সেটি স্পষ্ট নয়। তাহলে প্রকাশ্য দিনের বেলা সে কেন রেললাইনে ঝাঁপ দিয়ে আত্মহত্যা করবে- সেটি কোনো স্বাভাবিক ঘটনা হতে পারে না। এর পেছনে অন্য কোনো কারণ থাকতে পারে বলে তিনি ধারণা করছেন।

তবে রেল-পুলিশের তদন্তের অপেক্ষা করলেও তাকে হত্যা করা হতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন তিনি। এ ব্যাপারে আইনি পদক্ষেপ গ্রহণের বিষয়েও চিন্তাভাবনা করছেন বলেও জানিয়েছেন তিনি।

এ বিষয়ে অপমৃত্যু মামলার তদন্ত কর্মকর্তা খুলনা রেলওয়ে জিআরপি থানার এসআই মো. ইদ্রিস বলেন, ব্যবসায়ী মেহেদীর প্রাণহানির ঘটনায় রেলের কর্তব্যরত মাস্টার বাদী হয়ে জিআরপি থানায় একটি অপমৃত্যু মামলা করেন। পোস্টমর্টেম রিপোর্ট না পাওয়া পর্যন্ত মামলাটির তদন্ত কার্যক্রম শুরু করা যাচ্ছে না।

তিনি বলেন, মেহেদীর মৃতদেহের পাশ থেকে যে চিরকুট উদ্ধার করা হয়েছে- তাতে তিনি সুদে টাকা নিয়ে ঋণগ্রস্ত ছিলেন এবং এই পাওনাদারদের চাপেই তিনি আত্মহত্যা করেছেন মর্মে উল্লেখ রয়েছে। এ কারণেই প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে তিনি আত্মহত্যা করেছেন। তবে তদন্ত কার্যক্রম শুরু হলে প্রকৃত তথ্য বের হবে বলে তিনি আশা করছেন।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close