হাসমত আলী, গাজীপুর

  ১৭ আগস্ট, ২০২২

মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামি ২৭ বছর পর গ্রেপ্তার

গাজীপুরের কালীগঞ্জে প্রকাশ্য দিবালোকে কুপিয়ে ও গলা কেটে বিল্লাল হোসেনকে হত্যার মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামি আবদুল আজিজকে (৫৫) প্রায় ২৭ বছর পর গ্রেপ্তার করেছে র‌্যাব। মঙ্গলবার (১৬ আগস্ট) ভোর রাতে নরসিংদী থানাধীন সাধার চর ইউনিয়নের মৈশাদী গ্রাম এলাকা থেকে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়।

র‌্যাব-১ সহকারী পরিচালক (মিডিয়া) নোমান আহমদ এক প্রেস বিফ্রিংয়ে এসব তথ্য জানান। গ্রেপ্তার আবদুল আজিজ কালীগঞ্জ থানাধীন বাহাদুরসাদী এলাকায় মৃত আলফাজ উদ্দিন মোল্লার ছেলে।

র‌্যাব কর্মকর্তা জানান, গোপন সংবাদের ভিত্তিতে মঙ্গলবার (১৬ আগস্ট) রাত আড়াইটার দিকে মৈশাদী এলাকায় র‌্যাব-১-এর একটি চৌকস আভিযানিক দল অভিযান পরিচালনা করে আবদুল আজিজকে গ্রেপ্তার করে।

প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদ ও ঘটনার বরাত দিয়ে র‌্যাব কর্মকর্তা জানান, হত্যাকাণ্ডের শিকার বিল্লাল হোসেন ওরফে বিলু (৩৫) ও আসামি মো. আবদুল আজিজ পাশাপাশি গ্রামের বাসিন্দা। তারা উভয়েই স্থানীয় খলাপাড়া এলাকায় ন্যাশনাল জুট মিলে শ্রমিক হিসেবে কাজ করতেন। ঘটনার দিন ১৯৯৫ সালের ৭ ডিসেম্বর সকালে এ মামলার অন্য আসামি রুস্তম আলী ভিকটিম বিল্লাল হোসেন ও তার কর্মচারী জাকারিয়াকে গ্রেপ্তার করা আজিজের ভগ্নিপতি জনৈক কাদিরের লাউ চুরি করেছে- এ ব্যাপারে কথা আছে বলে ঈশ্বরপুর বাজার ডেকে আনে। একপর্যায়ে বিল্লাল ও জাকারিয়ার সঙ্গে আসামি কাদির ও তার ভাই ছাদিরের সঙ্গে লাউ চুরির বিষয় নিয়ে কথা-কাটাকাটি হয়। এ সময় পূর্বপরিকল্পনা অনুযায়ী অপর আসামি ফালান কুড়াল দিয়ে ভিকটিমের মাথার পেছনে সজোরে আঘাত করে। এতে রক্তাক্ত জখম হয়ে বিল্লাল দৌড়ে কফিখেতের ভেতর দিয়ে যেতে থাকলে ওত পেতে থাকা আসামি আবদুল আজিজ, ফালান, কাদির, ছাদির, কালাম, বাজিত, ওসমান, আ. ছামাদ, হুমায়ুন, রুস্তম আলী, মানিক, ফারুক ও আলম পেছন থেকে ধাওয়া করে বিল্লালকে ধরে ফেলে এবং এলোপাতাড়ি কোপাতে থাকে। এ সময় ধ্বস্তাধ্বস্তিতে বিলুর পরনের লুঙ্গি, চাদর ও মাফলার খুলে পড়ে যায়। প্রাণে বাঁচাতে বিল্লাল রক্তাক্ত ও উলঙ্গ অবস্থায় দৌড় দেয় কিন্তু অপর একটি জমিতে পড়ে গেলে আসামি ফালান কুড়াল দিয়ে ভিকটিমের বুকে উপর্যুপরি কোপাতে থাকে। এ সময় আজিজ ধারালো ছোরা দিয়ে ভিকটিম বিল্লালকে গলা কেটে মৃত্যু নিশ্চিত করে।

এ ঘটনায় ওইদিনই বিল্লালের ভাই জালাল উদ্দিন বাদী হয়ে কালীগঞ্জ থানায় ফালান, কাদির, ছাদির, কালাম, বাজিত, আ. আজিজ, ওসমান, আ. ছামাদ, হুমায়ুন, রুস্তম আলীসহ ১০ জনের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা করেন। তদন্ত শেষে তদন্তকারী কর্মকর্তা আসামি আবদুল আজিজসহ এজাহারভুক্ত ১০ জন এবং তদন্তে প্রাপ্ত ঘটনায় জড়িত মানিক, ফারুক, আলমসহ ১৩ আসামির বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দাখিল করেন। মামলার পর আসামি আবদুল আজিজ আত্মগোপনে চলে যায়। সাক্ষ্য-প্রমাণ ও উভয় পক্ষের যুক্তিতর্ক শেষে গাজীপুর জেলা ও দায়রা জজ আদালতের বিচারক অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ, প্রথম আদালত এ মামলার রায়ে অভিযুক্ত ১৩ জন আসামিকে মৃত্যুদণ্ড ও ১০ হাজার টাকা অর্থদণ্ড দেয়। মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত ৮ আসামি বর্তমানে জেলহাজতে আছে এবং এক আসামি জেলহাজতে মৃত্যুবরণ করেছে। অপর ৩ আসামি ফালান, আলম এবং মানিক পলাতক।

র‌্যাব কর্মকর্তা আরো জানান, গ্রেপ্তার এড়াতে ঘটনার পর (১৯৯৫ সালে) থেকে ২৭ বছর ধরে আবদুল আজিজ (৫৫) এনআইডিতে নিজের ঠিকানা পরিবর্তন করে বিভিন্ন ছদ্মবেশ ধারণ করে শিবপুর থানাধীন মৈশাদী গ্রামে তার শ্বশুরবাড়িতে বসবাস করত। আত্মগোপনে থাকা অবস্থায় নিজের পেশা পরিবর্তন করে কাঁচা তরকারির ব্যবসা করে আসছিল। সে আবদুল আজিজ মোল্লা নাম ধারণ করে স্থায়ী ঠিকানা পরিবর্তন করে মৈশাদী, শিবপুর, নরসিংদী- এই ঠিকানায় এনআইডি তৈরি করে বসবাস করে আসছিল। গ্রেপ্তার আসামির বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন বলে জানান র‌্যাব কর্মকর্তা।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close