নিজস্ব প্রতিবেদক

  ১৫ আগস্ট, ২০২২

অবশেষে ধরা পড়ল ফাঁসির আসামি আলম

স্ত্রীকে হত্যা করে ২১ বছর পালিয়ে ছিল

২১ বছর আগে স্ত্রীকে হত্যায় মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামি আলম গ্রেপ্তার এড়াতে ঠিকানা ও পেশা বদল করে আত্মগোপনে চলে যায়। নতুন নামে তৈরি করে জাতীয় পরিচয়পত্র। ঠিকানা দেয় কাজী আলাউদ্দিন লেন, বংশাল। শুধু তাই নয়, মায়ের নাম পরিবর্তন করে আলেয়া বেগমের স্থলে জাহানুর বেগম ও বাবার নাম পরিবর্তন করে রইস উদ্দিনের স্থলে মো. ইয়াসিন ব্যবহার করে। কিন্তু তার পরও পালিয়ে থেকে আইনের চোখকে এড়াতে পারেনি আলম। অবশেষে ধরা পড়েছে র‌্যাবের অভিযানে।

র‌্যাবের গোয়েন্দা অভিযানে মানিকগঞ্জের সিংগাইর এলাকায় আগুনে পুড়িয়ে আম্বিয়া হত্যা মামলার মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামি আলমকে ২১ বছর পর গ্রেপ্তার করেছে র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‌্যাব)। শনিবার (১৩ আগস্ট) রাতে রাজধানীর বংশাল থেকে তাকে গ্রেপ্তার করে র‌্যাব-৪ এর একটি দল। রবিবার (১৪ আগস্ট) র‌্যাব মিডিয়া সেন্টারে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান র‌্যাব-৪ এর অধিনায়ক (সিও) ডিআইজি মো. মোজাম্মেল হক।

তিনি বলেন, গ্রেপ্তার মো. আলম ও নিহত আম্বিয়া মানিকগঞ্জের সিংগাইরের একই গ্রামের বাসিন্দা। তার সঙ্গে ২০০১ সালের জুনে মানিকগঞ্জ জেলার সিংগাইর থানাধীন আটিপাড়া গ্রামের মকবুল হোসেনের মেয়ে আম্বিয়া বেগমের (১৮) পারিবারিকভাবে বিয়ে হয়। বিয়ের সময় নিহতের বাবা সামর্থ্য অনুযায়ী আসবাবপত্র, ইলেকট্রনিক সামগ্রী, নগদ অর্থ ও স্বর্ণালংকার প্রদান করেন। কিন্তু আলম বিয়ের পর থেকেই আরো যৌতুকের দাবিতে প্রায়ই তার স্ত্রী আম্বিয়াকে মারধর করতেন।

একপর্যায়ে আলমসহ আসামির বাবা-মা ও নিকট আত্মীয়স্বজন ভিকটিমের পরিবারের কাছে আরো ৫০ হাজার টাকা যৌতুক দাবি করে। ভিকটিমের বাবা দরিদ্র হওয়ায় যৌতুকের টাকা দিতে ব্যর্থ হন। দাবি করা যৌতুকের টাকা দিতে না পারায় আম্বিয়ার ওপর বিভিন্ন সময় শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন বাড়তে থাকে। বাধ্য হয়ে বাবা মকবুল ধার দেনা করে জামাতা আলমকে ১০ হাজার টাকা দেন। কিন্তু যৌতুকের বাকি টাকা পেতে নির্যাতন আরো বাড়িয়ে দেয় আলম। মারধর করে ভুক্তভোগী আম্বিয়াকে বাবার বাড়ি পাঠিয়ে দেয় আসামিরা। টাকা ছাড়া ফিরে এলে হত্যার হুমকিও দেয় আলম।

২০০১ সালের ৫ সেপ্টেম্বর রাত সাড়ে ১১টার দিকে আম্বিয়ার বাবার বাড়িতে এসে আম্বিয়াকে ঘরের বাইরে ডেকে চড়, থাপ্পড়, কিল, ঘুষি মারতে থাকে আলম। এরপর পূর্বপরিকল্পিতভাবে সঙ্গে আনা পেট্রল ঢেলে আম্বিয়ার শরীরে আগুন ধরিয়ে দেয়। পরে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়।

২০০১ সালের ৭ সেপ্টেম্বর নিহতের বাবা মকবুল হোসেন বাদী হয়ে সিংগাইর থানায় নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে মামলা করেন। আসামি করা হয় জামাতা আলম, আলমের বাবা রইস উদ্দিন, মা আলেয়া বেগম, আলমের বোন জামাই রবিউল, আলমের চাচাত নানা আফতাব। মামলার পর থেকেই আত্মগোপন চলে যান আলম।

মামলার তদন্ত শেষে তদন্তকারী কর্মকর্তা আসামি আলমের বিরুদ্ধে আদালতে দ্রুত সময়ের মধ্যে চার্জশিট জমা দেন। পরে চার্জশিটের ভিত্তিতে মানিকগঞ্জ জেলার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন স্পেশাল ট্রাইব্যুনাল আম্বিয়াকে হত্যায় সরাসরি সম্পৃক্ত থাকার অপরাধে আলমকে মৃত্যুদণ্ড দেন।

পরে ডেথ রেফারেন্সের জন্য মামলা উচ্চ আদালতে গেলে রায় বহাল রাখে সুপ্রিম কোর্টের হাইকোর্ট বিভাগ। ২০০৬ সালের ৬ জুন আলমের মৃত্যুদণ্ড বহাল রেখে রায় প্রকাশ পায়।

নতুন ঠিকানায় জাতীয় পরিচয়পত্র তৈরি : আলম নিজের পরিচয় গোপন করার জন্য কাজী আলাউদ্দিন লেন, বংশাল, ঢাকার ঠিকানায় এনআইডি তৈরি করেন। নিজের মায়ের নাম পরিবর্তন করে আলেয়া বেগমের স্থলে জাহানুর বেগম ও বাবার নাম পরিবর্তন করে রইস উদ্দিনের স্থলে মো. ইয়াসিন নাম ব্যবহার করে বসবাস করে আসছিলেন।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close