ইকবাল হোসেন রুবেল, সীতাকুণ্ড (চট্টগ্রাম)
সীতাকুণ্ডে নাইট সাফারি পার্কের জায়গা চূড়ান্ত
সীমানা বেষ্টনী নির্মাণকাজ শুরু
চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ড উপজেলার ১০নং জংগল সলিমপুরে প্রশাসনের অভিযানের সপ্তম দিনে দক্ষিণ এশিয়ার প্রথম নাইট সাফারি পার্ক ও নিরাপত্তা চেকপোস্টের জায়গা চূড়ান্ত করে সীমানা প্রাচীর নির্মাণের কাজ শুরু হয়েছে।
সরেজমিনে দেখা যায়, গত শুক্রবার বিকাল ৩টা থেকে সাড়ে ৬টা পর্যন্ত জংগল সলিমপুরে টানা অভিযানে দক্ষিণ এশিয়ার প্রথম নাইট সাফারি পার্কের জন্য উদ্ধারকৃত ৫৭.৫০ একর জায়গার চারদিকে সীমানা বেষ্টনী নির্মাণের কাজ শুরু করে জেলা প্রশাসন। নির্মাণ কাজের প্রথম দিনেই কাজ শুরু করে সন্ধ্যা পর্যন্ত ২৫টি সীমানা পিলার স্থাপন করা হয়েছে।
প্রশাসন কর্তৃক ওইদিনের অভিযানে আলীনগরের প্রবেশ মুখে সহকারী কমিশনার (ভূমি) কর্তৃক জারিকৃত গণবিজ্ঞপ্তি সংবলিত সাইনবোর্ড স্থাপন করা হয়। জংগল সলিমপুর ও আলীনগরে অবৈধ বসতি নির্মাণ, অবৈধ পাহাড় কাটা রোধে নিরাপত্তা চৌকি স্থাপনের জন্য ২টি খাস জায়গা নির্ধারণ করা হয়। একটি বায়েজিদ লিংক রোড থেকে জংগল সলিমপুর প্রবেশের মুখে এবং আর একটি জংগল সলিমপুর থেকে আলীনগর প্রবেশের মুখে। জানা গেছে, নিরাপত্তা চৌকিতে যৌথ বাহিনীর সদস্যরা দায়িত্ব পালন করবেন।
এছাড়া ব্যবস্থাপনা কমিটির জন্যও একটি জায়গা নির্ধারণ করা হয়েছে। সেখানে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট, পরিবেশের কর্মকর্তা ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের অফিস কক্ষ স্থাপন করা হবে। অভিযান চলাকালে জংগল সলিমপুরের রড, সিমেন্ট, বালুর দোকান বন্ধ করে দেওয়া হয়।
অভিযানে উপস্থিত ছিলেন অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) মোহাম্মদ নাজমুল আহসান, সীতাকুণ্ড উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. শাহাদাত হোসেন, সহকারী কমিশনার (ভূমি) মো. আশরাফুল আলম, নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মো. তৌহিদুল ইসলাম, নু এমং মারমা, মিজানুর রহমান, মো. মাসুদ রানা ও সীতাকুণ্ড মডেল থানার অফিসার্স ইনচার্জ আবুল কালাম আজাদ।
সীতাকুণ্ড উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. শাহাদাত হোসেন জানান, জংগল সলিমপুর ও আলীনগরে জেলা প্রশাসন অব্যাহতভাবে অভিযান পরিচালনা করছে। গত শুক্রবার সপ্তম দিনের মতো অভিযান পরিচালনা করা হয়েছে। সরকার কর্তৃক গৃহীত মহাপরিকল্পনা খুব দ্রুতই বাস্তবায়নের প্রাথমিক পদক্ষেপ হিসেবে এই অভিযান।
সহকারী কমিশনার (ভূমি) মো. আশরাফুল আলম বলেন, দক্ষিণ এশিয়ার প্রথম নাইট সাফারি পার্কের জন্য ৫৭.৫০ একর জায়গার সীমানা বেষ্টনী নির্মাণের কাজ শুরু করা হয়েছে। আগামী এক মাসের মধ্যেই এখানে বাঘ, চিত্রা হরিণ, অজগর সাপ, কুমিরসহ নানা রকম পশু-প্রাণী অবমুক্ত করে একটি দৃষ্টিনন্দন সাফারি পার্ক নির্মাণ করা হবে।
অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) মোহাম্মদ নাজমুল আহসান বলেন, সরকারের মহাপরিকল্পনার অংশীদার হিসেবে যারা কাজ করতে চায় তাদের সবাইকে সঙ্গে নিয়ে সব প্রকৃত ভূমিহীন ও গৃহহীনকে পুনর্বাসন করে পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করা হবে।
উল্লেখ্য, গত ১ জুলাই জংগল সলিমপুরে পরিদর্শনে গিয়ে সেখানে থাকা খাস জমিতে চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগার, স্পোর্টস ভিলেজ, ক্রিকেট স্টেডিয়াম, আইকনিক মসজিদ, ইকো পার্কসহ বিভিন্ন স্থাপনা করার পরিকল্পনার কথা জানান জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মমিনুর রহমান।
জংগল সলিমপুরে বসতি স্থাপনকারী ১৫ হাজার পরিবারকে সেখানেই পুনর্বাসন করে সরকারি বিভিন্ন স্থাপনা নির্মাণ করা হবে বলে জানিয়েছেন তথ্যমন্ত্রী হাছান মাহমুদ।
ওই স্থানে ৩ হাজার ১০০ একর জমির মধ্যে ৮৮ একর অবৈধ দখলদারদের হাতে থাকার কথা সেদিন জানিয়েছিলেন জেলা প্রশাসনের কর্মকর্তারা।
পরে গত ১৫ জুলাই বিকালে প্রস্তাবিত প্রকল্প বাস্তবায়নের প্রাথমিক সমীক্ষার অংশ হিসেবে স্থানীয় সরকার বিভাগের উপপরিচালক বদিউল আলমের নেতৃত্বে জেলা প্রশাসনের একটি প্রতিনিধি দল জংগল সলিমপুর এলাকায় পরিদর্শনে যায়। তাদের গাড়ি বহরের শেষে থাকা একটি গাড়ি থেকে ইউপি সদস্য মো. আরিফকে আটকে মারধর করে স্থানীয়রা।
ওই ঘটনায় ইউপি সদস্য আরিফের ভাই বাদী হয়ে মামলা করলে পরদিন ১৮ জুলাই মো. ইয়াসিনকে (৫০) গ্রেপ্তার করে সীতাকুণ্ড থানা পুলিশ।
এই ইয়াসিন সীতাকুণ্ডের জংগল সলিমপুর আলী নগর এলাকায় একটি বাহিনী গড়ে তুলে দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে সন্ত্রাসীদের এনে এখানে আশ্রয় দিয়েছেন। এছাড়া এখানকার পাহাড়ি টিলা কেটে দুই লাখ থেকে কোটি টাকা পর্যন্ত মূল্যে তা বিভিন্ন ব্যক্তির কাছে বিক্রি হস্তান্তর করেন এবং সেখানে চাঁদাবাজি, পাহাড় দখলসহ বিভিন্ন সন্ত্রাসী কার্যক্রমের সঙ্গে জড়িত বলে পুলিশের ভাষ্য।
গত ২ আগস্ট বিকালে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসন সেখানে অভিযান চালিয়ে ১৭৫টি অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করে। সেদিন ও এর পরদিন অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদে স্থানীয়রা বাধা ও সড়ক অবরোধ করে। কিন্তু পুলিশ ও প্রশাসন তাদের সরিয়ে অভিযান অব্যাহত রাখে।
পরে গত ৭ আগস্ট সীতাকুণ্ডের জংগল সলিমপুরের আলীনগরের পাহাড়, টিলা, বনভূমি এবং এখানকার পরিবেশ, প্রতিবেশ ও জীববৈচিত্র্য রক্ষাকল্পে মহামান্য হাইকোর্ট এক নির্দেশনা দিয়েছেন। এতে সেখানে পাহাড়-টিলা দখল করে অবৈধভাবে বসবাসকারীদের সব স্থাপনা উচ্ছেদ এবং বৈধ জমির মালিকদের মালিকানা নিশ্চিত করতে বলা হয়। এর অংশ হিসেবে এরই মধ্যে সেখানে খাসজমি চিহ্নিত করার কাজ শুরু হয়েছে এবং বৈধ ভূমির মালিকদের ২০ আগস্টের মধ্যে সীতাকুণ্ডের সহকারী কমিশনার (ভূমি) কার্যালয়ে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র নিয়ে উপস্থিত হতে বলা হয়েছে।
পাশাপাশি যারা অবৈধ উপায়ে সেখানে পাহাড়-টিলা কেটে দখল করে বসত ঘর বা স্থাপনা নির্মাণ করে বসবাস করছেন তাদের বেঁধে দেওয়া সময়ের মধ্যে অবশ্যই এলাকা ছেড়ে যেতে হবে বলে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়েছে। অন্যথায় তাদের বিরুদ্ধে কঠোর আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানায় প্রশাসন।
"