পঞ্চগড় প্রতিনিধি

  ১৩ আগস্ট, ২০২২

প্রতারকের বাড়িতে মরদেহ নিয়ে অনশন

পঞ্চগড়ে একটি মাদরাসায় সহকারী লাইব্রেরিয়ান পদে চাকরি দেওয়ার নাম করে এক ব্যক্তির কাছ থেকে ১২ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছিলেন সাবেক সভাপতি জুলফিকার আলম। চাকরি তো দূরের কথা, সেই টাকা ফেরত পেতে শিকার হতে হয় লাঞ্ছনার। বের করে দেওয়া হয় বাড়ি থেকে। আর সে অপমান সহ্য করতে না পেরে স্ট্রোক করে কয়েক দিন চিকিৎসার পর গত বৃহস্পতিবার দুপুরে রংপুরের একটি ক্লিনিকে মারা যান ভুক্তভোগী দবিরুল ইসলাম। সন্ধ্যায় মরদেহ গ্রামের বাড়িতে নিয়ে এলে এলাকাবাসী সেই মরদেহ নিয়ে প্রতারক জুলফিকারের বাড়িতে নিয়ে যান। এরপর সেই টাকা ফেরত পেতে অনশন শুরু করেন। খবর পেয়ে পঞ্চগড় থানা পুলিশ ঘটনাস্থলে যায়। পরে গভীর রাতে সাতমেরা ইউনিয়নের ইউপি সদস্য হেলালউদ্দীনের নুনিয়াপাড়ার বাড়িতে মীমাংসার জন্য বৈঠক বসে। বৈঠকে সাতমেরা ইউনিয়নের ইউপি সদস্য হেলালউদ্দীন, জগদল বাজার বণিক সমিতির সভাপতি জাহাঙ্গীর প্রধান, সাধারণ সম্পাদক আবু তাহের, দবিরুল ইসলামের ভাই বদিরুল ইসলাম, ছেলে আব্দুস সবুর প্রধান, জুলফিকার আলী প্রধান, পঞ্চগড় সদর থানা পুলিশসহ স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিদের উপস্থিতিতে বিষয়টি নিষ্পত্তি হয়।

বৈঠকে ১২ লাখ টাকার মধ্যে ৬ লাখ টাকা ফেরত দেওয়ার শর্তে অনশন প্রত্যাহার করেন এলাকাবাসী। নগদ ১ লাখ টাকা ও পাঁচ লাখ টাকার একটি চেক দিয়ে দুই মাসের মধ্যে টাকা পরিশোধ করবেন মর্মে মুচলেকা দেন জুলফিকার। এরপর রাত সাড়ে তিনটায় দবিরুলের পরিবারসহ স্থানীয়রা মরদেহ নিয়ে যান। শুক্রবার সকাল ১০টায় দবিরুল ইসলামের মরদেহ প্রধানপাড়া গোরস্তানে দাফন করা হয়।

জানা গেছে, সদর উপজেলার প্রধানপাড়া দারুল ফালাহ দাখিল মাদরাসার তৎকালীন সভাপতি জুলফিকার আলম প্রধান দুই বছর আগে মাদরাসায় সহকারী লাইব্রেরিয়ান পদে জাকিরুল ইসলামকে চাকরি দেওয়ার কথা বলে তার বাবা দবিরুল ইসলাম প্রধানের কাছে ১২ লাখ টাকা হাতিয়ে নেন। দুই মাস আগে জুলফিকারের সভাপতির সময়সীমা শেষ হয়ে যায়। এরপর টাকা ফেরত দিতে চাপ দেয় জাকিরুলের পরিবার। তবে বিভিন্নভাবে হয়রানি ও টালবাহানা করে কালক্ষেপণ করে আসছিলেন জুলফিকার। গত ২০-২৫ দিন আগে জাকিরুলের বাবা দবিরুল ইসলাম প্রধান জুলফিকারের কাছে টাকা ফেরত চাইতে যান। এ সময় জুলফিকার দবিরুলকে টাকা না দিয়ে উল্টো লাঞ্ছিত করেন এবং ধারালো অস্ত্র দিয়ে মারতে উদ্যত হন। এ সময় তাকে বাড়ি থেকে বের করে দেওয়া হয়। অপমান সইতে না পেরে বাড়ি এসেই হৃদরোগে আক্রান্ত হন দবিরুল। উন্নত চিকিৎসার জন্য রংপুর প্রাইম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয় তাকে। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় গত বৃহস্পতিবার দুপুরে মারা যান দবিরুল।

দবিরুলের ছেলে জাকিরুল ইসলাম বলেন, ‘মাদরাসায় আমাকে সহকারী লাইব্রেরিয়ান পদে চাকরি দেওয়ার আশ্বাস দিয়ে সাবেক সভাপতি জুলফিকারকে আমার বাবা ১২ লাখ টাকা দিয়েছেন। এজন্য জমি জায়গা, গরু-ছাগলসহ প্রয়োজনীয় মালামাল বিক্রি করতে হয়েছিল বাবাকে। কিন্তু তিনি আমার চাকরিও দেননি, টাকাও ফেরত দিচ্ছেন না। উল্টো বাবাকে লাঞ্ছিত ও হয়রানি করেছেন।

এ নিয়ে অভিযুক্ত প্রতারক জুলফিকার আলম প্রধানের সঙ্গে কথা বলতে তার বাসায় গিয়েও তাকে খুঁজে পাওয়া যায়নি। বাড়ির অন্যরাও কেউ ছিলেন না।

সাতমেরা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান রবিউল ইসলাম রবি বলেন, ‘লোকমুখে খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে গিয়েছিলাম। বিষয়টি উভয়পক্ষকে আলোচনা করে সমাধানের পরামর্শ দিয়েছিলাম।’

পঞ্চগড় সদর থানার ওসি আবদুল লতিফ মিয়া জানান, মরদেহ রেখে অনশন করার বিষয়টি খবর পেয়ে পঞ্চগড় থানা পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করে। উভয়পক্ষ গভীর রাতে বসে বিষয়টি মীমাংসা করে নেওয়ায় তারা মরদেহ ফেরত নিয়ে যায়। এ নিয়ে থানায় কেউ লিখিত অভিযোগ দেয়নি।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close