মাহমুদুল হাসান, রাঙ্গাবালী (পটুয়াখালী)

  ১২ আগস্ট, ২০২২

রাঙ্গাবালীতে শিক্ষার্থীদের উপবৃত্তির টাকা উধাও!

রাঙ্গাবালীতে প্রাথমিক স্কুলের অনেক শিক্ষার্থীর উপবৃত্তির টাকা অ্যাকাউন্ট থেকে উধাও হয়ে গেছে। নগদ অ্যাকাউন্টে আসা উপবৃত্তির টাকা উত্তোলন করতে গিয়ে অ্যাকাউন্টে কোনো টাকা না পাওয়ার অভিযোগ করছেন অভিভাবকরা। তাদের দাবি, এর সঙ্গে মোবাইল ব্যাংকিং সংশ্লিষ্ট লোকজন জড়িত। তবে, এ অভিযোগ অস্বীকার করেছেন মোবাইল ব্যাংকিং সংশ্লিষ্টরা।

জানা গেছে, ২০২১ অর্থবছরে মোবাইল ব্যাংকিং নগদের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের উপবৃত্তির টাকা পৌঁছে দেওয়ার উদ্যোগ নেয় সরকার। শিক্ষার্থীদের কিট অ্যালাউন্স হিসেবে ১ হাজার টাকা এবং প্রতি মাসে বৃত্তির ১৫০ টাকা করে ৬ মাসের ৯০০ টাকা অভিভাবকদের নিজ নিজ নগদ অ্যাকাউন্টে পাঠানো হয়েছে। এরই ধারাবাহিকতায় রাঙ্গাবালী উপজেলার ৭১টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ১৪ হাজার ৯৩৭ শিক্ষার্থীর মধ্যে ১০ হাজার ১৮ শিক্ষার্থী উপবৃত্তির আওতায় রয়েছে। আর ওইসব শিক্ষার্থীদের উপবৃত্তির টাকা উত্তোলন করতে গিয়েই বিপত্তির মধ্যে পড়ছেন অনেক অভিভাবক।

একাধিক অভিভাবকের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, উপবৃত্তির টাকা মোবাইল ব্যাংকিং নগদে আসার পর সে টাকা তুলতে গিয়ে দেখেন অ্যাকাউন্ট থেকে টাকা ক্যাশ আউট হয়ে গেছে অন্য একটি এজেন্ট নম্বরে। এমন ভুক্তভোগী কয়েকজন অভিভাবকের ফোন ও নগদ নম্বর হলো : ০১৭৯৪৭৮৮৮৯৮, ০১৭১০৬৭৯৮২৪, ০১৭৭১৮০১৩৬৬, ০১৭৭৮৬৪৭৬১৮ এবং এজেন্ট নম্বর ০১৭৩৩০০৮৭৪৩, ০১৯০৬৪৯৫০৪৭।

এ বিষয়ে উপজেলার ছোটবাইশদিয়া ইউনিয়নের চরইমারশনের ভুক্তভোগী অভিভাবক মো. বাচ্চু কাজী বলেন, ‘আমার পাঁচটা মাইয়া (মেয়ে), অনেক কষ্টে পড়া ল্যাহা করাই। ভাই দেয়ালে পিঠ ঠেকে গ্যাছে। মেয়ে রুবিনা কোড়ালিয়া এ রহমান সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে (ফোরে) চতুর্থ শ্রেণিতে পড়ে। উপবৃত্তির ৯৫০ টাকা নগদে আসে; টাকা উঠাইতে দোকানে গেলে দোকানদার কয় (বলে) টাকা অন্য নম্বরে ক্যাশ আউট হইছে। অথচ ওই নম্বর আমার অচেনা। নম্বরটি বন্ধ রয়েছে। এর আগেও আমার মাইয়ার উপবৃত্তির ১৯০০ টাকা নিয়া গেছে।’

একই প্রতিষ্ঠানের আরেক অভিভাবক আবদুস সাত্তার প্যাদা বলেন, ‘আমার দুই নাতি জান্নাতুল ও বাইজিদ। একজন প্রথম শ্রেণিতে, আরেকজন পড়ে পঞ্চম শ্রেণিতে। সবার মোবাইলে নগদে টাকা আসে জেনে আমি স্থানীয় বাজারে গিয়া দোকানির কাছে গেলে, দোকানদার জানায় আপনার টাকা ক্যাশ আউট হয়ে গেছে। শুধু নাতিদেরই নয়; অনেক বাচ্চার উপবৃত্তির টাকা তুলতে পারে নাই।’

উপজেলার বড়বাইশদিয়া ইউনিয়নের টুঙ্গিবাড়িয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের এক শিক্ষার্থীর অভিভাবক শামিম সিকদার বলেন, ‘মোবাইলে মেয়ের উপবৃত্তির টাকা আসছে দেখেছি কিন্তু দুই দিন পর দোকানে টাকা উঠাতে গিয়ে দেখি টাকা নাই। এর আগেও মাইয়ার পোশাকের জন্য টাকা আসছিল তাও নিয়া গেছে। মাস্টারগো কাছে গিয়াও কোনো ধরনের ফয়সালা হয় নাই।’

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্থানীয় এক মোবাইল ব্যাংকিং এজেন্টের সঙ্গে আলাপকালে তিনি জানান, গত জুলাই মাসের ১৯ তারিখের আগে যারা টাকা উত্তোলন করেছে তারা টাকা পেয়েছে। তবে ১৯ তারিখের পর যারা টাকা উত্তোলন করেনি তাদের টাকা উধাও হয়ে গেছে। অনেক অভিভাবক আমাদের কাছে টাকা তুলতে এসে খালি হাতে বাড়ি ফিরে যাচ্ছেন।

এ বিষয়ে কথা হয় কাউখালী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. সালাম মিয়ার সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘মূলত টাকা ক্যাশ ইন হলে কোনো এসএমএস আসে না। যার কারণে অধিকাংশ অভিভাবক জানেও না যে তাদের ফোনে টাকা আসছে। গত জুলাই মাসে ১৯ তারিখের আগে টাকা উত্তোলন করতে গেলে পিন নম্বর ম্যাস করেনি, আবার এর পরে উঠাতে গেলে ক্যাশ আউট দেখায়। অধিকাংশ অভিভাবক এসে অভিযোগ জানায়; তবে আমাদের তো কিছু করার নেই।’

রাঙ্গাবালী উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো. আতিকুল ইসলাম বলেন, আমরা আমাদের দপ্তর থেকে শিক্ষার্থীদের চাহিদা দাখিল করেছি। এরপরে নগদ থেকে যে টাকাটা ছাড়া হয়েছে এরকম কোনো ম্যাসেজ আমরা পাইনি। শুধু অভিভাবকদের কাছ থেকে শুনছি। যারা ১৯ জুলাইয়ের পরে টাকা তুলতে গেছে অনেকেরই দেখা যাচ্ছে যে টাকা ক্যাশ আউট হয়ে গেছে। কিন্তু সংশ্লিষ্ট অভিভাবক জানে না। এরকম আমরা ম্যাসেজ পাচ্ছি। তবে আমাদের কেউ লিখিত অভিযোগ করেনি, মৌখিকভাবে জানিয়েছে। আমরা অধিদপ্তরের উপবৃত্তির সেলেও জানিয়েছি।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে নগদের হেড অব মার্কেটিং জাহিদুল ইসলাম সজল বলেন, ‘একজন গ্রাহকের অ্যাকাউন্ট থেকে উপবৃত্তির টাকা উধাও হয়ে যাওয়ার ক্ষেত্রে গ্রাহককেই সচেতন হতে হবে। কোনোভাবেই গ্রাহকের অ্যাকাউন্টের পিন নাম্বার অন্য কারো কাছে শেয়ার করা যাবে না। কারণ পিন নাম্বার অন্য কেউ যদি জেনে যায়, তাহলে টাকা সহজে প্রতারকরা হাতিয়ে নিতে পারে। এভাবে টাকা উধাও হলে নগদকে দায়ী করা ঠিক নয়।’

তিনি আরো বলেন, কারো অ্যাকাউন্ট থেকে যদি কেউ টাকা কেউ তুলে নেয়, তাহলে তা উদ্ধারের সুযোগ রয়েছে। এ ক্ষেত্রে ভুক্তভোগী ও প্রতারকের অ্যাকাউন্ট নাম্বার আমাদের কাছে সরবরাহ করা হলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া সহজ হয়।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close