প্রতিদিনের সংবাদ ডেস্ক

  ১১ আগস্ট, ২০২২

সাগরে মাছ শিকারে লঘুচাপের বাগড়া

জোয়ারে প্লাবিত উপকূল

মৌসুমি বায়ু সক্রিয় হয়ে ওঠার মধ্যে বঙ্গোপসাগরে রয়েছে একটি লঘুচাপ। এর ফলে বৃষ্টি বাড়ার সঙ্গে দক্ষিণাঞ্চলে স্বাভাবিকের চেয়ে উঁচু জোয়ারের শঙ্কা প্রকাশ করা হচ্ছে। লঘুচাপটি সৃষ্টি হওয়ার পরপরই সোমবার (৮ আগস্ট) দেশের সমুদ্রবন্দরগুলোতে ৩ নম্বর সতর্কতা সঙ্কেত জারি করা হয়। সুস্পষ্ট লঘুচাপ ও বায়ুচাপের আধিক্যের প্রভাবে উপকূলের সাতক্ষীরা, খুলনা, বাগেরহাট, ঝালকাঠি, পিরোজপুর, বরগুনা, পটুয়াখালী, ভোলা, বরিশাল, লক্ষ্মীপুর, চাঁদপুর, নোয়াখালী, ফেনী, চট্টগ্রাম, কক্সবাজার এবং সংশ্লিষ্ট দ্বীপ ও চরের নিম্নাঞ্চল স্বাভাবিক জোয়ারের চেয়ে ২-৪ ফুট বেশি উচ্চতার জলোচ্ছ্বাসে প্লাবিত হতে পারে। এরই মধ্যে ঝালকাঠির বিভিন্ন নদণ্ডনদীর পানি বেড়েছে। জোয়ারের পানি স্বাভাবিকের চেয়ে পাঁচ ফুট বেড়ে তলিয়ে গেছে নদী পাড়ের ১৫ গ্রাম। শ্রাবণের শেষ সময়ে এসে মৌসুমী বায়ু সক্রিয় থাকায় দেশের দক্ষিণাঞ্চলে বৃষ্টির প্রবণতা বাড়বে বলেও জানান আবহাওয়াবিদ ফারুক। এদিকে, উত্তাল হয়ে উঠেছে সাগর, মাছ ধরতে যেতে পারছেন না জেলেরা। নিম্নচাপ ও জোয়ারের পানিতে পিরোজপুরের কাউখালীর ৩০টি স্কুলের মাঠ প্লাবিত হয়েছে। বরগুনার আমতলীর নদণ্ডনদীর পানি বিপৎসীমার ওপর দিয়ে বইছে। প্রতিনিধিদের পাঠানো খবর-

হাতিয়া (নোয়াখালী ) : মৎস্য অবরোধকালীন ৬৫ দিনের নিষেধাজ্ঞা শেষে সাগরে মাছ ধরা শুরু করেছিলেন জেলেরা। শুরুতেই জেলেদের জালে ধরা পড়ে প্রচুর পরিমাণে ইলিশসহ অন্যান্য প্রজাতির মাছ। সাগরে মাছ শিকারে নেমে অল্প সময়ের মধ্যে ফিশিং বোটগুলোতে মাছবোঝাই করে ফিরে আসছেন নোয়াখালীর দ্বীপ উপজেলা হাতিয়ার বিভিন্ন মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র ও গদিগুলোতে। এতে ঝিমিয়ে থাকা মৎস্য বন্দর ও গদিগুলো কর্মব্যস্ত হয়ে উঠেছিল।

তবে দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ায় বর্তমানে সাগর উত্তাল থাকায় জেলেদের হাসিমাখা মুখ অনেকটাই মলিন হতে বসেছে। ইলিশ ধরার শুরুর মৌসুমে বৈরী আবহাওয়া দেখা দেওয়ায় জেলেদের মধ্যে নতুন করে উদ্বেগের সৃষ্টি হয়েছে। তিন দিন ধরে নদী উত্তাল থাকায় ফিশিং বোটগুলো নদী-সাগরে যেতে পারছে না। যে কয়টা কাছাকাছি সীমানায় থেকে মাছ শিকারে ব্যস্ত ছিল, সেগুলোও ফিরে এসেছে তীরে। ফলে মঙ্গলবার থেকে কিছুটা ঝিমিয়ে পড়েছে মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র ও বন্দরগুলো। বুধবার (১০ আগস্ট) উপজেলার ওছখালী, চৌমুহনী, সাগুরিয়া বাজার ঘুরে দেখা গেছে এমন চিত্র।

জেলেরা জানায়, নদী গরম হয়ে উঠলে মাছ ধরা সম্ভব হয় না। বর্তমানে বৈরী আবহাওয়ার কারণে সাগর উত্তাল থাকায় মাছ শিকার অনেকটা বন্ধ বললেই চলে। তবে আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে এবং বৃষ্টি হলে প্রচুর ইলিশ ধরা পড়বে বলেও তারা আশা প্রকাশ করছেন।

এদিকে, হাতিয়া উপজেলার বুড়িরদোনা মৎস্য ঘাটে নোঙর করে রাখা এমভি কালাম হাজি নামের বোটের সারেং খোকন, ফরিদ মাঝি, সূর্যমুখী মৎস্য ঘাটের মা’ ফিশিং বোটের মাঝি বাতেন এবং বেচু বলেন, আবহাওয়া খারাপ থাকার কারণে সাগর এখন উত্তাল, তাই আমরা মাছ ধরতে যেতে পারছি না। সময়ও আমাদের কাটছে না, অনেকটা অলস সময় কাটাতে হচ্ছে বলে তারা জানান। এতে মালিক পক্ষেরও ব্যাপক ক্ষতি হচ্ছে বলে নাসির হাজি নামের এক মালিক জানান।

কাউখালী (পিরোজপুর) : পিরোজপুরের কাউখালীতে বৃষ্টি ও নিম্নচাপের প্রভাবে জোয়ারের অতিরিক্ত পানিতে উপজেলার প্রায় ৩০টি স্কুল-মাদরাসার মাঠ প্লাবিত হয়েছে। কয়েকটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের মূল ভবনেও পানি উঠে প্লাবিত হয়েছে। উপজেলা রঘুনাথপুর ইজিএস শিক্ষা নিকেতন ও শীর্ষা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মাঠ ডুবে অফিস ও শ্রেণিকক্ষে পানি প্রবেশ করেছে।

উপজেলার বদরপুর বৌলাকান্দা ও শীর্ষা ক্লাস্টারের দায়িত্বে থাকা সহকারী প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা কে এম জামান জানান, তার ক্লাস্টারের কমপক্ষে ১০/১২টি স্কুলের মাঠ পানিতে সম্পূর্ণ প্লাবিত হয়ে গেছে। এসব বিদ্যালয়ের কোনোটির মূল ভবনেও পানি উঠেছে।

আমতলী (বরগুনা) : পূর্ণিমার জোয়ারের পানিতে বরগুনার আমতলী উপজেলার প্রধান নদণ্ডনদীর পানি বিপৎসীমার ১৭ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। পানিতে ডুবে গেছে পুরাকাটা-আমতলী ও ফেরির গ্যাংওয়ে। এতে যাত্রীরা চরম দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন।

সরেজমিনে দেখা গেছে, পায়রা নদীতে তীব্র জোয়ারে আমতলী ফেরিঘাটের গ্যাংওয়ে তলিয়ে গেছে। এতে নারী ও শিশুসহ সবাই কোমর সমান পানির মধ্যে দিয়ে তীরে উঠছেন। মাত্রাতিরিক্ত জোয়ার ও বৃষ্টির পানিতে আটকে পড়া ব্যবসায়ী ইমরান মিয়া বলেন, ‘আমি মুদি ব্যবসায়ী। প্রয়োজনীয় মালামাল আনতে জেলা শহর বরগুনা গিয়েছিলাম। কিন্তু এখন ঘাট ডুবে যাওয়ায় মালামালসহ ইজিবাইক নিয়ে ফেরিতে উঠতে পারছি না। এখানে ৩ থেকে ৪ ঘণ্টা ধরে বসে আছি।

পানি উন্নয়ন বোর্ড বরগুনার আমতলীর পানি পরিমাপক আবুল কালাম আজাদ বলেন, নদীতে জোয়ারের পানি বিপৎসীমার ১৭ সিন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। আগামী দুই-তিন দিন উচ্চ জোয়ার অব্যাহত থাকবে।

বরিশাল : টানা দুই দিনের বৃষ্টিতে বরিশালের কীর্তনখোলা, সুগন্ধা, সন্ধ্যাসহ দক্ষিণাঞ্চলের নদণ্ডনদীর জোয়ারের পানিতে নদী তীরবর্তী এলাকাসহ নিম্নাঞ্চল তলিয়ে গেছে। বেশিরভাগ নদী উত্তাল হয়ে উঠেছে। কীর্তনখোলা নদীর ট্রলারের মাঝি কবির জানান, প্রচুর বাতাসের সঙ্গে নদী বেশ উত্তাল রয়েছে দুই দিন ধরে। জোয়ারের পানিতে তলিয়ে গেছে কীর্তনখোলা তীরবর্তী চরবাড়িয়া, লামচড়ি, শায়েস্তাবাদ, পলাশপুরেরে মোহাম্মাদপুরসহ নগরীর নিম্নাঞ্চলগুলো। সেইসঙ্গে বরিশাল শহরের মধ্য দিয়ে বয়ে চলা খালগুলোর নিচু এলাকার রাস্তাঘাট তলিয়ে গেছে। খালের সঙ্গে সংযুক্ত ড্রেনের মাধ্যমে পানি উঠে আসছে রাস্তার ওপরে। চরবাড়িয়ার লামচরি এলাকার বাসিন্দা বেল্লাল হোসেন জানান, মঙ্গলবার দুপুর থেকে কীর্তনখোলা নদী উত্তাল, পানি বেড়েছে। নদী তীরবর্তী অনেকের বাড়িঘরে পানি ঢুকে গেছে। এসব বাসিন্দারা এখন বিপাকে রয়েছেন।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close