নিজস্ব প্রতিবেদক
পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দিয়ে ফাঁদ
২৫ হাজার চাকরিপ্রত্যাশীর দুই কোটি টাকা আত্মসাৎ
রাজধানীর উত্তরায় নারী-শিশু কল্যাণ কেন্দ্রের নামে অফিস খুলে এসএসসি-এইচএসসি পাস ব্যক্তিকে আকর্ষণীয় বেতনে চাকরি দেওয়া নামে বিভিন্ন পত্রিকায় নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি দিত একটি চক্র। লোভনীয় এসব বিজ্ঞাপন দেখে এই ক্ষতিকর চক্রের ফাঁদে পা দিত শিক্ষিত-বেকার ও চাকরিপ্রত্যাশীরা। চাকরিপ্রত্যাশীদের দেওয়া হতো ভুয়া নিয়োগপত্র। পরে কৌশলে তাদের কাছ থেকে জামানত, মোটরসাইকেল ও দামি ল্যাপটপ দেওয়ার প্রলোভন দেখিয়ে মোটা অঙ্কের টাকা হাতিয়ে নিত চক্রটি।
এভাবে গত পাঁচ বছরে প্রায় ২৫ হাজার চাকরিপ্রত্যাশীর সঙ্গে প্রতারণা করে প্রায় দুই কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে চক্রটি। এমন প্রতারণার অভিযোগে চক্রের মূলহোতাসহ তিনজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)। মঙ্গলবার (১০ আগস্ট) রাতে উত্তরার দক্ষিণখান থানার আশকোনা এলাকায় অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়।
গ্রেপ্তাররা হলেন চক্রের প্রধান মো. মজিবুর রহমান (৪২), তার দুই নারী সহযোগী লাবনী আক্তার (২৩) ও জান্নাতুল ফেরদৌস ময়না (২০)। এ সময় তাদের কাছ থেকে প্রতারণার কাজে ব্যবহৃত ১৪টি মোবাইল, বিভিন্ন কোম্পানির ৬০টি সিম কার্ড, চাকরিপ্রার্থীদের ৪০টি জাতীয় পরিচয়পত্র, ১৪৮টি বায়োডাটা ও ৩০টির বেশি ভুঁইফোঁড় কোম্পানি/এনজিওর নামে তৈরি করা নিয়োগপত্র ও রাবার স্ট্যাম্প সিল জব্দ করা হয়।
বুধবার (১০ আগস্ট) দুপুরে রাজধানীর মালিবাগে সিআইডির প্রধান কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে সংস্থাটির সাইবার ইউনিটের বিশেষ পুলিশ সুপার (এসপি) রেজাউল মাসুদ এসব তথ্য জানান।
তিনি বলেন, উত্তরায় নারী ও শিশু কল্যাণ কেন্দ্র নামে একটি অফিস খুলে বিভিন্ন পত্রিকায় ভুঁইফোঁড় কোম্পানির নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি দিত চক্রটি। পরে চাকরি নিতে আসা প্রার্থীদের ফাঁদে ফেলে অর্থ হাতিয়ে নিত। এভাবে চক্রের ফাঁদে পা দিয়ে দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলের শিক্ষিত ও বেকার অসংখ্য যুবক প্রতারিত হয়েছে।
প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে চক্রের প্রধান মজিবুর রহমান জানিয়েছে, গত পাঁচ বছরে প্রায় ২৫ হাজার চাকরিপ্রত্যাশীর সঙ্গে প্রতারণা করেছে চক্রটি। চাকরিপ্রত্যাশীদের কাছ থেকে বিভিন্ন কৌশলে প্রায় দুই কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে মজিবুর। এর আগে চাকরির নামে প্রতারণার অভিযোগে মুজিবুর বেশ কয়েকবার গ্রেপ্তার হয়েছিল। জামিনে বের হয়ে এসে একই কাজ করে আসছিল।
এক প্রশ্নের জবাবে সাইবার পুলিশ সেন্টারের বিশেষ পুলিশ সুপার রেজাউল মাসুদ বলেন, চাকরির বিজ্ঞপ্তি দিলেই চাকরিপ্রার্থীরা পরীক্ষা-নিরীক্ষা না করে আবেদন করেন। এটা ঠিক না। এছাড়া চাকরিপ্রার্থীদের কাছ থেকে টাকা চাইলে বুঝতে হবে চক্রটি প্রতারক। একই ধরনের প্রতারণার সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে মূলহোতা মজিবুর রহমান আগে ২০১৮ সালে একাধিকবার গ্রেপ্তার হয়। পরে জামিনে বের হয়ে একই অপরাধে জড়িয়ে পড়ে।
"