মজিবুর রহমান খান, ব্রাহ্মণবাড়িয়া

  ০৯ আগস্ট, ২০২২

ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় ‘শেখ হাসিনা সড়ক’ উন্নয়নে আরো ১০ কোটি টাকা

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার শেখ হাসিনা সড়কের উন্নয়নে (নূরপুর জিসি-কালীবাড়ি আরএন্ডএইচ) আরো ১০ কোটি ৬২ লাখ টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৩ আসনের (সদর ও বিজয়নগর) সংসদ সদস্য উবায়দুল মোকতাদির চৌধুরীর আধা সরকারি পত্রের আলোকে এই বরাদ্দ দেওয়া হয়।

গত ৭ আগস্ট স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের কুমিল্লা, ব্রাহ্মণবাড়িয়া ও চাঁদপুর জেলার গুরুত্বপূর্ণ গ্রামীণ অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় এই অর্থ বরাদ্দ দেয়া হয় বলে প্রকল্প পরিচালক মো. ওয়াহিদুজ্জামানের দেওয়া চিঠি থেকে জানা যায়।

এই অর্থ বরাদ্দে নূরপুর জিসি-কালীবাড়ি আরএন্ডএইচ সড়কের বিজয়নগর অংশে প্রায় ৫ কিলোমিটার কার্পেটিংয়ের কাজ হবে। এছাড়া সিসি ব্লক পুনঃস্থাপনসহ সড়কের ১২১৩ মিটার অংশে মেরামতি কাজ হবে।

ব্রাহ্মণবাড়িয়া এলজিইডির নির্বাহী প্রকৌশলী মো. শিরাজুল ইসলাম জানান, এই প্রকল্প বাস্তবায়ন এবং সেতুর সংযোগের কাজ শেষ হলে সড়কটি চালু হয়ে যাবে।

এই সড়ক বিজয়নগর উপজেলার সঙ্গে জেলা সদরের সড়ক যোগাযোগ স্থাপন করবে। এর আগে বর্ষায় নৌকা আর শুষ্ক মৌসুমে হেঁটেই জেলা সদরে যাতায়াত করতে হতো বিজয়নগর উপজেলার কয়েকটি ইউনিয়নের বাসিন্দাদের। বিস্তীর্ণ হাওর এলাকার ওপর দিয়ে এই সড়ক নির্মাণ অনেকটা চ্যালেঞ্জ ছিল সংশ্লিষ্টদের জন্য। বছরের ছয় মাস পানিতে টইটম্বুর থাকা হাওরে নির্মাণ সামগ্রী নিতেই বেগ পেতে হয়েছে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে।

২০১০ সালের আগস্ট মাসে বিজয়নগরকে জেলা সদর থেকে আলাদা করে উপজেলার মর্যাদা দেয় সরকার। ৩৫ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিয়ে জেলা সদরে যাতায়াত করতে হয় বিজয়নগর উপজেলার প্রায় তিন লাখ মানুষকে। সরাইল ও আখাউড়া উপজেলা হয়ে জেলা সদরে যাতায়ত করতে হয় তাদের।

এতে সময় লাগে দেড় থেকে দুই ঘণ্টা। সবচেয়ে বেশি দুর্ভোগ পোহাতে হয় বিজয়নগর উপজেলার পত্তন, সিঙ্গারবিল, চম্পকনগর, বিষ্ণুপুর ও পাহাড়পুর ইউনিয়নের বাসিন্দাদের। হাওর পাড়ি দিয়ে জেলা শহরে যাতায়াতের জন্য বর্ষাকালে তাদের একমাত্র ভরসা নৌকা। আর শুষ্ক মৌসুমে মাইলের পর মাইল পথ হাঁটা ছাড়া আর কোনো উপায় থাকে না। তাই পত্তন ইউনিয়নের সিমনা থেকে জেলা সদরের শিমরাইলকান্দি পর্যন্ত সড়ক তৈরির জন্য দীর্ঘদিন ধরে দাবি জানিয়ে আসছিলেন বিজয়নগর উপজেলার বাসিন্দারা।

বিজয়নগর উপজেলা প্রতিষ্ঠার আগ থেকেই এই স্বপ্নের সড়ক তৈরির জন্য সরকারের কাছে দাবি জানিয়ে আসছিল স্থানীয় বাসিন্দারা। সড়কটির কাজ শেষ হলে এটি দিয়ে জেলা সদরে আসতে সময় লাগবে মাত্র আধা ঘণ্টা। এতে করে যেমন সময় বাঁচবে, তেমনি দীর্ঘদিনের কষ্টও লাঘব হবে তাদের।

জনগণের দাবির মুখে ২০১৬ সালের সেপ্টেম্বরে শুরু হয় স্বপ্নের সিমনা-বি.বাড়িয়া সড়কের মহাকর্মযজ্ঞ। সড়কটির নামকরণ করা হয়েছে শেখ হাসিনা সড়ক। সিমনা থেকে শিমরাইলকান্দি পর্যন্ত স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের (এলজিইডি) এই সাড়ে ৯ কিলোমিটার সড়ক তৈরিতে ব্যয় হচ্ছে ১২৩ কোটি টাকারও বেশি। এই সড়কে তিতাস নদী ও বালিয়াজুরী এবং লইস্কা বিলের উপর তিনটি সেতুও রয়েছে। কাজটি দেওয়া হয়েছে ডলি কনস্ট্রাকশন নামে ঢাকার একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে। গত তিন বছর ধরেই চলছে সড়কের কাজ। বছরের ছয় মাস পানি থাকার কারণে কাজ বন্ধ রাখা হয়। তবে এরই মধ্যে সড়কের ৯০ শতাংশ কাজ শেষ হয়ে গেছে। বিস্তীর্ণ হাওরের বুকে দৃশ্যমান শেখ হাসিনা সড়কটি এখন বিজয়নগর উপজেলাবাসীর জন্য আঁধারে আলোর দিশা।

কাজ শেষে ২০২২ সালের শেষ দিকে যানবাহন চলাচালের জন্য সড়কটি আনুষ্ঠানিকভাবে খুলে দেওয়া হবে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। তবে বর্তমানে সড়কটির কিছু অংশে ছোটোখাটো যানবাহন চলাচল করছে। এর ফলে স্বপ্নের এই সড়কের বাস্তবায়ন হতে দেখে উচ্ছ্বসিত স্থানীয়রাও।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close