মঞ্জুরুল হক, জামালপুর

  ০৯ আগস্ট, ২০২২

ঘোড়ার হাট তুলসীপুর

দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে নানা পরিবহনের মাধ্যমে আসছে লাল, কালো, সাদাসহ নানা রঙের ঘোড়া ও ঘোড়ার বাচ্চা। দু-এক দিন আগেই এ এলাকায় চলে আসেন মালিক ও ঘোড়সওয়াররা। বাহাদুর, রাজা, তাজিয়া, পারলে ঠেকাও, বিজলি, কিরণমালা, রানি ও রাজসহ বাহারি নামের ঘোড়া উঠছে জামালপুর সদর উপজেলার তুলসীপুর হাটে। এদের নাম যেমন বাহারি, তেমনি গুণেও। এরা ছুটতে পারে ক্ষিপ্রগতিতে। এ কারণে ওদের কদরও যথেষ্ট। এদের পাওয়ার জন্য ক্রেতাদের মধ্যে রীতিমতো কাড়াকাড়ি লেগে যায়।

হাটের দিন বৃহস্পতিবার সকাল থেকেই ঘোড়াকে সারিবদ্ধভাবে লাইনে দাঁড় করিয়ে রাখা হয় ক্রেতা আকর্ষণের জন্য। দিনভর দৌড়ঝাঁপসহ বোঝা বহনের ট্রায়ালের মাধ্যমে বিক্রি হয় ঘোড়া। ফলে দিন দিন জনপ্রিয় হয়ে ওঠেছে জামালপুরের এই ঘোড়ার হাট। সপ্তাহের বৃহস্পতিবার সদর উপজেলার তুলসীপুরে বসছে বিশাল আকারের এই হাট।

শুধু ঘোড়াই নয় বিভিন্ন জাতের ঘোড়ার পাশাপাশি এখানে বেচাকেনা হয় ঘোড়ার গাড়ি ও লাগামসহ নানা সরঞ্জাম। দেশের বিভিন্ন জেলার পাইকার ও সাধারণ মানুষ এ হাট থেকে ঘোড়া কিনে নিয়ে যান। অনেক কৌতূহলী মানুষও নানা জাতের ঘোড়া দেখতে ভিড় জমান এ হাটে। স্থানীয় প্রশাসনের কর্মকর্তারা বলছেন, হাটকে সমৃদ্ধ করতে সব ধরনের পদক্ষেপ নেওয়া হবে।

স্থানীয় পাইকার জাবেদ আলী বলেন, বৃহত্তর ময়মনসিংহ ছাড়াও বগুড়া, গাইবান্ধা, সিরাজগঞ্জ, নাটোর, রাজশাহী, চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, সিলেট ও কুষ্টিয়াসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের পাইকার ও ঘোড়সওয়ার এ হাট থেকে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করেই পছন্দের ঘোড়াটি কিনে নেন। বিশেষ করে তরুণ ঘোড়সওয়াররা শখের ঘোড় দৌড় প্রতিযোগিতার জন্য চড়া দামে কিনে নেন আকর্ষণীয় তেজি ঘোড়া।

ঘোড়া কেনার জন্য হাটে ঘুরছেন ঢাকার আবুল। সদরঘাট-গুলিস্তান পথে চলে তার ঘোড়ার গাড়ি। সেই গাড়ির জন্য ঘোড়া কিনতে তুলসীপুর হাটে এসেছেন। তিনি বলেন, এই হাটে বহু জাতের ঘোড়া পাওয়া যায়। বড় ও শক্তিশালী ঘোড়া পাওয়া যায় এখানে। দামও কম। তাই তিনি ঘোড়ার জন্য এই হাটে আসেন। এর আগে অনেকবার তিনি এই হাট থেকে ঘোড়া কিনেছেন। তিনি জানান, বাহাদুর নামের একটি ঘোড়া কিনতে চাচ্ছেন। বিক্রেতা দাম হাঁকছেন ৯০ হাজার টাকা। তিনি ৬০ হাজার টাকা পর্যন্ত বলেছেন। কিন্তু বিক্রেতা এই দামে ঘোড়াটি ছাড়তে নারাজ। ঘোড়াটি কিনতে আরো অনেকে আগ্রহী। তাই শেষ পর্যন্ত এটি কিনতে পারবেন কি না কে জানে!

ঘোড়া ব্যবসায়ী বারেক মোল্লা বলেন, দীর্ঘ ৫০ বছর ধরে চলা এই ঘোড়ার হাটে ৫ হাজার থেকে ৬০-৭০ হাজার টাকার ঘোড়া পাওয়া যায়। দেশের নানা জায়গা থেকে এমনকি কখনো প্রবাসীরাও ভিডিওকলের মাধ্যমে এই হাট থেকে ঘোড়া কিনে থাকেন। ঘোড়ার পাশাপাশি এখানে ৪ থেকে ৬ হাজার টাকায় পাওয়া যায় ঘোড়ার গাড়িও।

শাহজাদপুর থেকে আসা ঘোড়া ক্রেতা রাজা মিয়া বলেন, দেশের আর কোথাও ঘোড়ার হাট আছে কি না আমার জানা নেই। এই হাটে দেশি, তাজি, ভুইটা, ক্রস এমনকি গাধা সাইজের ঘোড়াও পাওয়া যায়। তাই দূরের জেলা থেকেও গাড়ি ট্রাকবোঝাই করে ঘোড়া নিয়ে অনেকেই এ হাটে আসেন। তবে রাত্রি যাপনে নিরাপত্তা নিয়ে তাদের অনেকটা শঙ্কায় থাকতে হয়।

ঘোড়া ব্যবসায়ী কাদের আলী বলেন, এই ঘোড়ার হাটে ব্যবসায়ীরা লাখ লাখ টাকা নিয়ে ঘোড়া কিনতে আসেন। এখানে নিরাপত্তার কোনো ব্যবস্থা না থাকায় ইচ্ছা ও প্রয়োজন থাকা সত্ত্বেও অনেকেই আসতে সাহস করেন না।

হাটের ইজারাদারের প্রতিনিধি মোহাম্মদ আবদুল কুদ্দুস বলেন, প্রতি মৌসুমে এ হাটে ৫০ থেকে ৬০ লাখ টাকা পর্যন্ত ঘোড়া বেচাকেনা হয়েছে। করোনাসহ নানা প্রতিকূলতার কারণে বেচাকেনা কমে গিয়েছিল। এখন আবার পুরো দমে জমতে শুরু করেছে। হাটে সব ধরনের নিরাপত্তাব্যবস্থা রয়েছে।

জামালপুর সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা লিটুস লরেন্স চিরান বলেন, ‘জেলার ঐতিহ্যবহনকারী এ ঘোড়ার হাটকে সমৃদ্ধ করতে উপজেলা প্রশাসন তৎপর রয়েছে। সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া হবে।’

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close