এম বুরহান উদ্দীন, শৈলকুপা (ঝিনাইদহ)

  ০৮ আগস্ট, ২০২২

হালচাষে খরচ বাড়ল বিঘায় ৮০০ টাকা

হঠাৎ করে জ্বালানি তেল ডিজেলের দাম বেড়ে যাওয়ায় ঝিনাইদহের শৈলকুপায় ভরা আমন মৌসুমে জমি চাষে কৃষকের ব্যয় বেড়েছে। শনিবার (৬ আগস্ট) সকাল থেকে প্রতিবিঘা জমি চাষে ৬০০ থেকে ৮০০ টাকা অতিরিক্ত খরচ হচ্ছে। বিঘাপ্রতি ব্যয় বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৮০০ থেকে ২০০০ টাকা। অথচ আগের দিন শুক্রবার এক বিঘা জমি চারা রোপণের উপযোগী করতে হালচাষের জন্য ১২০০ টাকা ব্যয় করতে হয়েছিল।

কৃষি বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, এ উপজেলায় আবাদি জমির পরিমাণ ৩২ হাজার ৭০০ হেক্টর। উপজেলার আউশিয়া গ্রামের চাষি শাহিন মন্ডল জানান, শুক্রবারও তারা এক বিঘা জমি চারা রোপণের জন্য উপযোগী করতে হালচাষে ১২০০ টাকা খরচ করেছেন। শনিবার থেকে ডিজেলের দাম বৃদ্ধিতে ব্যয় বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৮০০ টাকা। প্রতিবিঘায় শুধু চাষের জন্য খরচ বেড়েছে ৬০০ টাকা। এ ছাড়া সেচ খরচ তো আছেই।

অনন্ত বাদালশো গ্রামের চাষি গোপাল পোদ্দার জানান, ডিজেলের দাম বেড়ে যাওয়ায় তাদের প্রতিবিঘা জমিতে শুধু জমি চাষ করতে অতিরিক্ত খরচ হবে ৬০০ টাকা। এটা খুবই কষ্টের ব্যাপার। এতে করে অনেক জমি অনাবাদি থাকার আশঙ্কা থাকবে।

জমি চাষের পাওয়ার টিলারের মালিক পলাশ আহমেদ জানান, শুক্রবারও তিনি ডিজেল প্রতি লিটার কিনেছেন ৮০ টাকায়। শনিবার সকাল থেকে তা কিনতে হচ্ছে ১১৫ টাকা লিটার।

এ বিষয়ে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মাহফুজুর রহমান জানান, আন্তর্জাতিক বাজারে দাম বাড়ার কারণে জ্বালানি তেলের মূল্য বেড়েছে। তবে ডিজেলের দাম বৃদ্ধিতে কৃষকের জমি চাষে অতিরিক্ত ব্যয় নিয়ে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি তিনি।

শুধু তাই নয়, জ্বালানি তেল ডিজেলের দাম বেড়ে যাওয়ায় এর বিরূপ প্রভাব পড়েছে গ্রামীণজীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে। তেল বিতরণের গাড়িগুলো জেলা-উপজেলার পাম্প বা ডিপোগুলোতে তেল পৌঁছে দিতে যাচ্ছে না। কেরোসিনের দাম বেড়ে যাওয়ায় বাড়তি টাকা গুনতে হচ্ছে।

রাষ্ট্রায়ত্ত্ব প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশন (বিপিসি) বলছে, জ্বালানি তেলের অর্থায়নের জন্য দুই মাসের আমদানি মূল্যের সমান হিসেবে প্রায় ২০ হাজার কোটি টাকা চলতি মূলধন হিসেবে সংস্থান রাখা দরকার। বর্তমানে মূলধন কমে যাওয়ায় গত মার্চ থেকে এখন পর্যন্ত উন্নয়ন প্রকল্প ও বিবিধ খাত থেকে প্রায় ১১ হাজার কোটি টাকা তুলে ভর্তুকিসহ জ্বালানি তেলের মূল্য পরিশোধ করা হয়। যে কারণে জুলাইয়ের হিসাবে সামগ্রিকভাবে বিপিসির হাতে যে ২২ হাজার কোটি টাকা রয়েছে, তা দিয়ে সামনের দিকে জ্বালানি আমদানি অসম্ভব হয়ে দাঁড়িয়েছে। এ ছাড়া লোকসানের কারণে বর্তমানে তাদের হাতে যে অর্থ রয়েছে, তা দিয়ে চলতি মাসের পর আর জ্বালানি আমদানি সম্ভব হবে না।

সংস্থাটির হিসাবে, গত ছয় মাসে জ্বালানি তেল বিক্রিতে তাদের লোকসান গুনতে হয়েছে ৮ হাজার ১৪ কোটি ৫১ লাখ টাকা। এই পরিপ্রেক্ষিতে সবধরনের জ্বালানি তেলের দাম ৩৪ টাকা থেকে লিটারে যথাক্রমে ৪৪ টাকা পর্যন্ত বাড়ানো হয়। বিপিসি বলছে, এই পরিমাণ দাম বৃদ্ধির পরও ডিজেলে প্রতি লিটারে ৮ টাকা ১৩ পয়সা করে লোকসান গুনতে হবে।

বিপিসি বলছে, আন্তর্জাতিক বাজারে ডিজেলের দাম প্রতি ব্যারেল ৭৪ দশমিক ৪ ডলার এবং অকটেন প্রতি ব্যারেল ৮৪ দশমিক ৮৪ ডলারে স্থিতিশীল থাকলে এই দুই ধরনের জ্বালানি যথাক্রমে ৮০ এবং ৮৯ টাকার মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখা সম্ভব। কিন্তু সে পরিস্থিতি না থাকায় বিপিসিকে ক্রমান্বয়ে লোকসান গুনতে হয়েছে। আর গত ছয় মাসে এই লোকসানের পরিমাণ ছিল ৮ হাজার ১৪ কোটি ৫১ লাখ টাকা।

এই লোকসানের বোঝা কমাতে গত শুক্রবার (৫ আগস্ট) দেশের সবধরনের জ্বালানির দাম বাড়িয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ মন্ত্রণালয়। সেখানে প্রতি লিটার ডিজেলের দাম ৩৪ টাকা বাড়িয়ে ১৪৪ টাকা, কেরোসিন ৩৪ টাকা বাড়িয়ে ১১৪ টাকা, অকটেন ৪৬ টাকা বাড়িয়ে ১৩৫ টাকা এবং পেট্রলে লিটারপ্রতি ৪৪ টাকা বাড়িয়ে ১৩০ টাকা করা হয়।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close