কায়সার হামিদ মানিক, উখিয়া (কক্সবাজার)

  ০৭ আগস্ট, ২০২২

বৃক্ষরোপণের নামে লুটপাটের অভিযোগ

আরডিআরএস বাংলাদেশ নামক একটি এনজিও সংস্থা উখিয়ায় বৃক্ষরোপণ কর্মসূচির নামে লাখ লাখ টাকা অপচয় করছে বলে অভিযোগ উঠেছে। ২০২১ সালে বিভিন্ন প্রজাতির ৫৩ হাজার চারা রোপণ করলেও বর্তমানে কোথায়ও চারার অস্তিত্ব খুঁজে পাওয়া যাবে না। এ বিষয়ে উচ্চ পর্যায়ের তদন্তের দাবি জানিয়েছেন নাগরিক সমাজ। আরডিআরএস বাংলাদেশে এনজিওর টিম লিডার হাফিজুর রহমানের সঙ্গে যোগাযোগ করলে তিনিও অকপটে স্বীকার করে বলেন, গত বছর অর্থাৎ ২০২১ সালে রোপণকৃত ৫৩ হাজার চারার মধ্যে কেবল ৫ থেকে ১০ ভাগ চারার অস্তিত্ব পাওয়া যাবে। অবশিষ্ট চারা নেই বললে চলে।

পরিবেশবাদী সংগঠনের নেতাদের দাবি, লোক দেখানো বৃক্ষরোপণ করা হয়েছে এবং বৃক্ষরোপণের নামে আরডিআরএস বিদেশি দাতা সংস্থার টাকা লুটপাট করেছে। দুর্বল চারা ক্রয়, রোপণকৃত গাছের চারায় জন্য ইউরিয়া সার, টিএসপি, জৈবসার দেওয়ার কথা থাকলেও তা না দিয়ে লাখ লাখ টাকা তছরুপ করছে।

এ বছরও অর্থাৎ ২০২২ সালে ৭৮ হাজার চারা রোপণের নামে বৃক্ষরোপণের কাজ শুরু করেছে এ সংস্থাটি । প্রতিটি গাছের চারা রোপণ থেকে শুরু করে সর্বসাকুল্য যে ব্যয় ধরা হয়েছে তা কোটি টাকার ওপরে।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে প্রকাশ, সুইজারল্যান্ডের দাতা সংস্থা এলডব্লিউএফের অর্থায়নে আরডিআরএস বাংলাদেশ নামক এনজিও সংস্থা উখিয়া, রামু, মহেশখালী ও কক্সবাজার সদরে বৃক্ষরোপণ কর্মসূচি বাস্তবায়ন করছে।

খোঁজখবর নিয়ে জানা গেছে, গেল বছর ৫৩ হাজারের মধ্যে ৩৬ হাজার হোস্ট কমিউনিটিতে ও ১৭ হাজার রোহিঙ্গা ক্যাম্পে বিভিন্ন প্রজাতির চারা রোপণ করা হয়। অনুরূপভাবে চলতি বছর ৭৮ হাজার চারা রোপণের টার্গেট নিয়েছে।

এর মধ্যে হোস্ট কমিউনিটিতে ৫৩ হাজার ও রোহিঙ্গা ক্যাম্পে ১৯ হাজার। চারার মধ্যে রয়েছে বনজ ফলজ ও ঔষধি গাছ।

অভিযোগে প্রকাশ, গেল বছর উখিয়ার রত্নাপালং ও হলদিয়া পালং ইউনিয়নের বিভিন্ন রাস্তার ধারে লোক দেখানো অল্প সংখ্যক চারা রোপণ করে বিদেশি দাতা সংস্থার টাকা লুটপাট করেছে। কোনো সড়কে একটি গাছের চারাও নেই। তদন্ত করলে গত বছরের রোপণকৃত কোনো চারার খোঁজ পাওয়া কঠিন হবে।

নাগরিক সমাজের অভিমত সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের তদারকি এবং আরডিআরএস বাংলাদেশ নামক এনজিও সংস্থার জবাবদিহি না থাকায় বৃক্ষরোপণ কর্মসূচির নামে লুটপাটের বিষয়টি ধামাচাপা পড়ছে।

এ প্রসঙ্গে যোগাযোগ করা হলে আরডিআরএস বাংলাদেশের টিম লিডার মো. হাফিজুর রহমান বলেন, গেল বছর বৃক্ষরোপণ কর্মসূচির নামে ৫৩ হাজার চারা রোপণ করা হলেও পদ্ধতিগত ত্রুটি কারণে সফলতার মুখ দেখেনি। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও রোহিঙ্গা ক্যাম্পে রোপণকৃত চারাগুলো মোটামুটি বেঁচে থাকলেও রাস্তার ধারে মাত্র ৫ থেকে ১০ ভাগ চারা বেঁচে আছে। তিনি আরো বলেন, চলতি বছর রাস্তার ধারে ফেন্সি দিয়ে অর্থাৎ বাঁশের ঘেরা দিয়ে চারা রোপণ করা হচ্ছে।

স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, গত বছর ৫৩ হাজার চারা রোপণের কথা থাকলেও লোক দেখানো অল্প সংখ্যক চারা রোপণ করে কর্মসূচি সমাপ্ত করেন। দেওয়া হয়নি সার, গোবর, টিএসপি ও জৈবসার। যার ফলে বিদেশি দাতা সংস্থার টাকাগুলো নয়ছয় করে আরডিআরএস কর্মকর্তারা পকেট ভারি করেন।

এনজিও সংস্থার মাঠ পর্যায়ের অফিসার বশির উল্লাহ জানান, চলতি বছর চারা রোপণ কাজে স্থানীয়দের সম্পৃক্ত করা হয়েছে। তিনিও গত বছরের বৃক্ষরোপণ কর্মসূচির পদ্ধতি ত্রুটির ছিল বলে স্বীকার করেন।

আরডিআরএস বাংলাদেশ কর্তৃক বৃক্ষরোপণের নামে গেল বছর ৫৩ হাজার ও চলতি বছর ৭৮ হাজার চারা কোথায় কীভাবে রোপণ করা হয়েছে তা উচ্চ পর্যায়ে তদন্ত করে অনিয়ম দুর্নীতি ও অর্থ লুটপাটের বিষয়টি উদ্ঘাটন করার জন্য সংশ্লিষ্ট ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে জোর দাবি জানিয়েছেন সচেতন নাগরিক সমাজ।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close