নিজস্ব প্রতিবেদক

  ০৪ আগস্ট, ২০২২

ডেমরার আসমানীর ৬৫ বাসে মাসে ২৪ লাখ টাকা চাঁদা

* পরিবহনের ব্যবস্থাপনা পরিচালকের কাছে জিম্মি চালক ও মালিকরা * চাঁদা তোলার বিষয়টি স্বীকার করে কর্তৃপক্ষের অন্য সদস্যদের ক্ষোভ প্রকাশ

রাজধানীর ডেমরা রুটে চলা আসমানী পরিবহনের ৬৫টি বাস থেকে প্রতি মাসে ৫টি পয়েন্টে প্রায় ২৪ লাখ টাকা চাঁদা আদায় করা হচ্ছে বলে অভিযোগ জানিয়েছেন ওই পরিবহনের সব চালক ও সাধারণ মালিকরা। আর এই অভিযোগ আসমানী পরিবহনের খোদ ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. আজিজ খাঁন ও তার ভাই মো. জলিল খাঁনের বিরুদ্ধ। তারা ব্যক্তিগত প্রভাব খাটিয়ে চালক ও পরিবহন মালিকদের জিম্মি দশায় রেখেছেন বলে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন ভুক্তভোগীরা।

অনেক মালিক বলেছেন, তারা প্রাপ্য অর্থ না পেয়ে বর্তমান ঊর্ধ্বমূল্যের বাজারে অর্থনৈতিকভাবে মারাত্মক ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছেন। এদিকে আসমানী পরিবহন কর্তৃপক্ষের অন্য সদস্যরা চাঁদা তোলার বিষয়টি স্বীকার করে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন আজিজ খাঁন ও জলিল খাঁনের বিরুদ্ধে। আর প্রতিদিন মোটা অঙ্কের চাঁদা দেওয়ার কারণে বিভ্রান্তিকর পরিস্থিতি সৃষ্টি হচ্ছে বলে অভিযোগ তাদের।

এেিদক আজিজ খাঁন চাঁদা তোলার বিষয়টি স্বীকার করে জানিয়েছেন বিভিন্ন ডিপার্টমেন্ট, রাজনৈতিক প্রভাবশালী মহল, কিছু সাংবাদিককে ম্যানেজ করা ও পয়েন্টভিত্তিক লোকজন নিয়ন্ত্রণে রাখাসহ নানা সমস্যা এবং প্রতিবন্ধকতা দূর করে আসমানী পরিবহন সেক্টরকে নিরাপদে রাখতেই এ কাজ করতে হয়।

এই ঘটনায় সাধারণ পরিবহন মালিক ও আসমানী পরিবহন কর্তৃপক্ষের অন্যান্য সদস্য জানান, ডেমরা রুটে চলা আসমানী পরিবহন মূলত ডেমরার স্টাফ কোয়ার্টার থেকে রামপুরা হয়ে আবদুল্লাহপুর চলাচল করে। তবে এই পরিবহনের ৬৫টি বাস প্রতিদিন নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁ থানাধীন মদনপুর মাঠ থেকে ছেড়ে আসে। এদিকে মদনপুর মাঠে প্রতিদিন এক-একটি আসমানী পরিবহন বাবদ ৮১০ টাকা চাঁদা আদায় করা হয় আজিজ খাঁন তার ছোট ভাই জলিল খাঁনের মাধ্যমে। স্টাফ কোয়ার্টারে তারই নিয়ন্ত্রিত লোকের মাধ্যমে ১৪০ টাকা করে আদায় করা হচ্ছে, একইভাবে রামপুরা ৬০ টাকা, কুড়িল বিশ্বরোড ৪০ টাকা ও আবদুল্লাহপুর মাঠে ১৭০ টাকা করে সর্বমোট ১২২০ টাকা আদায় করা হয়। ভুক্তভোগীরা অভিযোগ করে বলেন, এভাবে প্রতি মাসে ২৩ লাখ ৭৯ হাজার টাকা জোরপূর্বক আদায় করে নিচ্ছেন আসমানী পরিবহনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. আজিজ খাঁন ও তার ভাই জলিল খাঁন।

এ বিষয়ে আসমানি পরিবহনের একটি বাসের চালক মো. ওমর বলেন, দেশের বর্তমান আর্থসামাজিক প্রেক্ষাপটে সংসার চালানোই দায় হয়ে পড়েছে, সেখানে তাদের পরিবহনের এমডি ও তার ভাই জলিল খাঁন জোরপূর্বক ৫টি পয়েন্ট থেকে প্রতি বাস থেকে মাসে ৩৭ হাজার টাকা আদায় করে। আমরা অর্ধেক টাকা দিতে চাইলেও তারা মানছে না। আমাদের জিম্মি দশায় রেখে চাঁদা আদায় করছে তারা।

একই পরিবহনের আরেক বাসের চালক মো. সিরাজ বলেন, বর্তমানে বাসের জ্বালানি মূল্য বৃদ্ধি পাওয়াসহ রক্ষণাবেক্ষণ ও আনুষাঙ্গিক খরচ বেড়েছে। এ অবস্থায় আমরা এমডি আজিজ খাঁনের কাছে বারবার আবেদন জানানো সত্ত্বেও তিনি চাঁদার টাকা কমাচ্ছেন না। বর্তমানে আমাদের রোজের টাকা উঠানোই মুশকিল হয়ে পড়েছে, এরই মধ্যে অনেক চালক ঋণগ্রস্ত হয়ে পড়েছেন সংসার চালাতে গিয়ে। দ্রুত এর একটা সুষ্ঠু সমাধান না হলে আমরা আর চলতে পারব না।

এ বিষয়ের নাম প্রকাশ না করার শর্তে আসমানী পরিবহনের একাধিক মালিক জানান, প্রতিদিন এই গাড়ি প্রতি ১২২০ চাঁদা আদায় করা হচ্ছে বলে চালক ও মালিকদের সঙ্গে তাদের সমন্বয়ে ভাটা পড়ছে। বর্তমানে ভালো চালকরা অন্য পরিবহনে চলে যাচ্ছেন। সামনে আসমানী পরিবহনের ভালো সার্ভিস দেওয়া মুশকিল হয়ে পড়বে বলে মনে হচ্ছে। আমরা দ্রুত এর একটা সুষ্ঠু সমাধান চাই।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে আসমানী পরিবহনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. আজিজ খাঁন মোবাইল ফোনে বলেন, আসমানী পরিবহন থেকে মাসে প্রায় ২৪ লাখ টাকা আদায়ের বিষয়টি অভিযোগকারীরা না জেনে বলেছেন। মদনপুর থেকে আবদুল্লাহপুর রুট আসমানী পরিবহন চলার জন্য ৫টি পয়েন্টে টাকা আদায় করা হচ্ছে ঠিকই কিন্তু সে টাকা পরিচালনায় খরচ হচ্ছে।

তিনি আরো বলেন, পরিবহন সেক্টরটি একটি সেবার সেক্টর হলেও এখানে ফ্রিতে কেউ কাজ করে না। অনেক কিছু প্রকাশ করা সম্ভব হয় না আমাদের। একটি রুট চালাতে গেলে নানা সমস্যা ও প্রতিবন্ধকতার মুখে পড়তে হয় যা টাকার বিনিময়ে সমাধান করা হয় প্রতিদিন। শুধু একটি ডিপার্টমেন্টের বেলায় মাসে ৫ লাখ টাকা দিতে হয় আসমানী পরিবহন কর্তৃপক্ষকে। এছাড়াও রাজনৈতিক প্রভাবশালী মহলের দাবি অনুযায়ী চলতে হয়। আরো আনুষাঙ্গিক বিষয় রয়েছে যা প্রকাশ করলে আমরা বিপদে পড়ে যাব।

এ বিষয়ে ডেমরা ট্রাফিক জোনের সহকারী পুলিশ কমিশনার (এসি) মো. ইমরান হোসেন মোল্লা বলেন, মূলত বাস থেকে চাঁদা আদায়ের বিষয়টি দেখবেন বাস মালিক সমিতির লোকজন। তবে আমাদের কাছে যদি চালকরা কোনো অভিযোগ করেন তাহলে অবশ্যই বিষয়টি নিয়ে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। আর সড়কে ট্রাফিক আইন ও শৃঙ্খলা বজায় রাখার দায়িত্ব শুধু ট্রাফিকের।

এ বিষয়ে ঢাকা সড়ক পরিবহন বাস মালিক সমিতির প্রচার সম্পাদক মীর আবদুস সেলিম মোবাইল ফোনে বলেন, আসমানী পরিবহন আমাদের অন্তর্ভুক্ত রুটেই চলাচল করছে। তবে আজিজ খাঁনের চাঁদা আদায়ের বিষয়টি ভুক্তভোগীরা ঢাকা সড়ক পরিবহন বাস মালিক সমিতির কাছে লিখিত অভিযোগ দিলে অবশ্যই এ বিষয়ে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close