নিজস্ব প্রতিবেদক

  ০৪ আগস্ট, ২০২২

জবিছাত্রীর মোবাইল বিক্রি করে ‘মদপান’ ছিনতাইকারীদের

রাজধানীর কারওয়ান বাজার এলাকায় নিজের মোবাইল ফোন ছিনতাই হয়ে যাওয়ায় ক্ষিপ্ত হয়ে অন্য ছিনতাইকারীকে ধরে পেটানো জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী পারিশা আকতারের মোবাইল ফোন উদ্ধার করেছে পুলিশ। ছিনতাইকারীরা জবি ছাত্রীর ফোন বিক্রি করে মদ খেয়েছিল বলে জানা গেছে।

এ বিষয়ে বুধবার (৩ আগস্ট) সকালে তেজগাঁও থানায় সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) তেজগাঁও বিভাগের অতিরিক্ত উপকমিশনার (এডিসি) রুবাইয়াত জামান।

তিনি বলেন, গত ২১ জুলাই রাজধানীর কারওয়ানবাজার এলাকা থেকে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী পারিশা আকতারের মোবাইল ফোনটি বাস থেকে ছিনিয়ে নেয় রিপন ওরফে আকাশ। ওই শিক্ষার্থী তাকে ধাওয়া করলে ফোনটি আরেক ছিনতাইকারী কিশোর রাশেদুল ইসলামকে দিয়ে পালিয়ে যায়। পরে তারা ওই মোবাইল ফোনটি কারওয়ানবাজারের একটি চোরাই মোবাইলের দোকানে বিক্রি করে দেয়।

ঘটনাস্থল ও আশপাশের সিসিটিভি ফুটেজ পর্যালোচনা করে দেখা যায়, আকাশ মোবাইলটি ছিনিয়ে দৌড় দেওয়া সময় তার পিছু পিছু অন্য এক কিশোরকে দ্রুত হাঁটতে দেখা যায়। পরে ২৪ জুলাই ওই কিশোর রাশেদুলকে (১৭) কারওয়ান বাজার থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। প্রথমে কিশোর রাশেদ ছিনতাইয়ে জড়িত থাকার কথা অস্বীকার করলেও জিজ্ঞাসাবাদের এক পর্যায়ে দুজন মিলে ছিনতাই করার কথা স্বীকার করে।

এডিসি রুবাইয়াত বলেন, এ ঘটনার মূল অভিযুক্ত আকাশ এরই মধ্যে অন্য একটি মামলায় গ্রেপ্তার করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। পরে আদালতের অনুমতিতে আকাশকে দুই দিনের রিমান্ডে এনে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। জিজ্ঞাসাবাদে আকাশও প্রথমে ছিনতাইয়ের অভিযোগ অস্বীকার করেছিল। তবে কিশোর রাশেদুল ও আকাশকে মুখোমুখি জিজ্ঞাসাবাদে তারা ঘটনার সঙ্গে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করে। পরে তাদের দেওয়া তথ্যে কারওয়ান বাজারের চোরাই মোবাইল ক্রয়-বিক্রয়ের এক ব্যবসায়ীর দোকান থেকে মোবাইল ফোনটি উদ্ধার করা হয়। ছিনতাই করা ফোন কেনার অপরাধে ওই ব্যবসায়ী মো. শফিককে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

গ্রেপ্তারদের জিজ্ঞাসাবাদে পুলিশের এই কর্মকর্তা বলেন, ছিনতাই হওয়া মোবাইল ফোনটি ছিনতাইকারী আকাশ ও রাশেদুল ৪ হাজার টাকায় বিক্রি করে দেয়। সেখান থেকে তারা এক হাজার করে দুজনে দুই হাজার টাকা ভাগ করে নেয়। আর বাকি দুই হাজার টাকা দিয়ে একটি বারে গিয়ে মদ পান করে।

এডিসি রুবাইয়াত আরো বলেন, গ্রেপ্তার তিনজনের নামে এরই মধ্যে একাধিক মামলা রয়েছে। এছাড়াও জবি ছাত্রীর মোবাইল ফোন ছিনতাই করার এক সপ্তাহ আগে ছিনতাইকারী আকাশ অন্য একটি মামলায় জামিনে বের হয়ে আসে।

এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, শুধুমাত্র গণমাধ্যমে এলে যে আমরা কাজ করি তা নয়। গত মাসে আমরা প্রায় ৪০টি চুরি ও ছিনতাইয়ের মোবাইল উদ্ধার করে ফিরিয়ে দিয়েছি।

গবেষণার কাজে গত ২১ জুলাই সকালে রাজধানীর সদরঘাট থেকে মিরপুর চিড়িয়াখানা গিয়েছিলেন পারিশা। সারা দিন কাজ করে তানজিল পরিবহনের বাসে করে ফেরার সময় কারওয়ানবাজার এলাকা থেকে এক ছিনতাইকারী তার মোবাইল ফোন ছিনিয়ে নেয়।

ওই ছিনতাইকারীকে ধাওয়া করে ধরতে পারেননি তিনি। তবে আরেকজনের মোবাইল ছিনিয়ে নিয়ে পালানোর সময় এক ছিনতাইকারীকে ধরে ফেলেন। কৌশলে ওই ছিনতাইকারীর এক সহযোগীকেও আটক করা হয়। পরে দুই ছিনতাইকারীকে পিটিয়ে পুলিশের হাতে তুলে দেন ওই শিক্ষার্থী। দীর্ঘ এক বছর মিরপুর চিড়িয়াখানা থেকে বন্যপ্রাণী হাতির ওপর গবেষণার তথ্য সংগ্রহ করছিলেন তিনি। তার গবেষণার সব তথ্য ছিল ছিনতাই হওয়া ওই ফোনে। এ কারণেই তিনি হুম্মি হয়ে ছিনতাইকারীদের পিছু নিয়েছিলেন।

বুধবার (৩ আগস্ট) সংবাদ সম্মেলনে পারিশা বলেন, ‘আমি আসলে অনেক খুশি। পুলিশ প্রতিনিয়ত আমাকে আপডেট জানিয়েছে। ছিনতাইকারী ধরা পড়েছে তাতে খুশি। আর ছিনতাইকারী যাতে আবার ছাড়া পেয়ে ছিনতাইয়ে না জড়ায়। ছিনতাইকারীদের সর্বোচ্চ শাস্তির জন্য আমার যেখানে যাওয়া প্রয়োজন আমি যাব।’

এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘তখন ওই মোবাইলটি আমার খুব দরকার ছিল। তাই ছিনিয়ে নেওয়ার পর ঝুঁকি নিয়ে তাড়া করি। ২৮ জুলাই থিসিস জমা দিয়েছেন বলেও উল্লেখ করেন পারিশা।’

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close