বগুড়ার আদমদিঘীতে ক্রিকেট প্রতিযোগিতাকে কেন্দ্র করে রমরমা জুয়া খেলা চলছে। বিভিন্ন বয়সের মানুষ বিশেষ করে তরুণরা এই জুয়ায় বেশি আসক্ত হয়ে পড়েছেন। অনেকে জুয়ার নেশায় সর্বস্ব হারাতে বসেছেন। জুয়ার টাকা জোগাড় করতে বিভিন্ন জায়গা থেকে ঋণ নেওয়ার পাশাপাশি ব্যবসার মূলধনও ভেঙে ফেলেছেন।

বিভিন্ন সূত্র জানায়, উপজেলার সান্তাহার পৌর এলাকা থেকে শুরু করে আশপাশের প্রত্যন্ত গ্রামে এই জুয়া বিস্তার লাভ করছে। দেশে ও বিদেশে অনুষ্ঠিত হওয়া আন্তর্জাতিক বা ঘরোয়া যেকোনো ক্রিকেট প্রতিযোগিতা হলেই তা নিয়ে জুয়ার বাজি ধরা হচ্ছে। বছর দু-এক আগে সীমিত পরিসরে শুরু হলেও সম্প্রতি বাংলাদেশ ও জিম্বাবুয়ে ক্রিকেট দলের জিম্বাবুয়ে সফরে এই ক্রিকেট জুয়া ব্যাপক বিস্তার লাভ করে।

এলাকার গণ্যমান্যরা আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন, টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে এই জুয়া সবচেয়ে ভয়াবহ রূপ নিতে পারে। সান্তাহার পৌর এলাকা থেকে শুরু করে প্রত্যন্ত গ্রামের বেশকিছু এলাকায় রয়েছে জুয়াড়িদের প্রতিনিধি (এজেন্ট)। ক্রিকেট টুর্নামেন্ট শুরুর আগে এসব প্রতিনিধির কাছে টাকা জমা দিয়ে বাজি ধরতে হয়।

তথ্যানুসন্ধানে জানা গেছে, পৌর শহরজুড়েই এই জুয়া খেলা বিস্তার লাভ করেছে। তবে পৌর শহরের চা-বাগান মোড়, স্টেশন রোড, রেলগেটে চত্বর, রেলওয়ে সুপার মার্কেট, বাজার এলাকা, বাসস্ট্যান্ড ও বিভিন্ন অভিজাত মার্কেটসহ বিভিন্ন স্থানে জুয়াড়িদের তৎপরতা সবচেয়ে বেশি। স্মার্টফোনে কিছু অ্যাপসের মাধ্যমেও জুয়ার বাজি ধরার ব্যবস্থা এলাকার চা-স্টল ও সেলুনগুলোতে থাকা টেলিভিশন ঘিরে রয়েছে। ক্রিকেট জুয়ায় বাজি ধরে অনেকেই নিঃস্ব হয়ে গেছেন। সন্ধ্যার পর খেলা শুরু হতেই এসব স্থানে শিক্ষার্থী, ব্যবসায়ী, কর্মজীবী ও তরুণরা এক জায়গায় হয়ে জুয়া খেলা শুরু করে।

ফলে পরিবারের জমানো অর্থ শেষ করে দিয়ে বাবা-মাকে পথে বসিয়েছেন অনেক তরুণ ও শিক্ষার্থী। আবার অনেকে বিভিন্ন সমিতি থেকে ঋণ নিয়ে বা ব্যবসার মূলধন ভেঙে ক্রিকেট জুয়ায় সব খুঁইয়েছেন।

সান্তাহার বাজারের ব্যবসায়ী এনামুল হক মঙ্গলবার (২ আগস্ট) বলেন, আমার বড় ভাই কাপড়ের ব্যবসা করতেন। ক্রিকেট জুয়া শুরুর কিছুদিনের মধ্যেই তিনি জড়িয়ে পড়েন। জুয়ার টাকা জোগাড় করতে বিভিন্ন জায়গা থেকে ঋণ নেওয়ার পাশাপাশি ব্যবসার মূলধনও ভেঙে ফেলেছেন। পাওনাদারের চাপে এখন এলাকা ছাড়তে বাধ্য হয়েছেন তিনি।

শহরের স্টেশন রোডে ফটোকপি ব্যবসায়ী মো. আবু সাঈদ বলেন, আমাদের পাশে বসে জুয়াড়িরা মুঠোফোনের মাধ্যমে জুয়া খেলায় অংশ নেন। সাধারণ মানুষ পাশে বসেও বুঝতে পারেন না সেখানে হাতবদল হচ্ছে হাজার হাজার টাকা। বিভিন্ন সাংকেতিক ভাষায় চলছে এই ক্রিকেট জুয়া। প্রতি ২০ ওভারের ম্যাচে কোন দল জিতবে, কোন ক্রিকেটার কত রান করবে বা কত উইকেট নেবে তা নিয়ে ধরা হচ্ছে বাজি।

সান্তাহার ফল ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি আসাদুল ইসলাম বলেন, ক্রিকেট জুয়ায় বাজি ধরে ওভারে কত রান হবে, কোন খেলোয়াড় বেশি রান করবে, কোন বোলার বেশি উইকেট পাবে, কোন ব্যাটসম্যান বেশি ছক্কা মারবে, কে বেশি চার মারবে, কোন বলে চার বা ছয় হবে তা নিয়েও ধরা হচ্ছে বাজি। হার-জিতের টাকার লেনদেন হচ্ছে নগদে অথবা মোবাইলের মাধ্যমে। শুধু তাই নয়, হোয়াটসঅ্যাপ, ফেসবুক মেসেঞ্জারের মাধ্যমেও বাজি ধরা হচ্ছে। এভাবে ক্রিকেট জুয়ার ফাঁদে পড়ে সর্বস্বান্ত হচ্ছেন লোকজন।

সান্তাহার নাগরিক কমিটির সভাপতি ও সাবেক অধ্যক্ষ মোসলেম উদ্দীন বলেন, ক্রিকেট জুয়ার পরিস্থিতি উদ্বেগজনক পর্যায়ে পৌঁছেছে। এতে অনেকের নিঃস্ব হওয়ারও খবর পাচ্ছি। যেকোনোভাবে এই জুয়া বন্ধ করতে না পারলে সামাজিক বিপর্যয় ঠেকানো যাবে না। তাই পুলিশ প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করছি।

সান্তাহার পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ আরিফুল ইসলাম বলেন, ক্রিকেটের জুয়ার বিষয়টি আমার জানা নেই। খোঁজখবর নিয়ে জড়িতদের খুঁজে বের করে জুয়াড়িদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

"