প্রাচীন যুগ থেকে সচল থাকলেও বর্তমানে হারিয়ে যেতে বসেছে বাংলাদেশের ধাতব মুদ্রা। ১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশ স্বাধীনতা অর্জনের পর ১৯৭২ সালের ৪ মার্চ সর্বপ্রথম বাংলাদেশি মুদ্রার প্রচলন শুরু হয়। সরকারি মুদ্রার নাম রাখা হয় টাকা, পরবর্তী সময়ে টাকাকে প্রকাশের চিহ্ন বা সংকেত হিসেবে ‘$’ কে নির্ধারণ করা হয়। টাকার সর্বনিম্ন একক নির্ধারণ করা হয় এক টাকা। আর এক টাকার শতাংশকে পয়সা নামে অভিহিত করা হয়। অর্থাৎ $১ সমান ১০০ পয়সা।

১৯৭৩ সালে বাংলাদেশ ৫, ১০, ২৫ ও ৫০ পয়সা মূল্যের ধাতব মুদ্রার প্রচলন করা হয়। এরপর ৭৪ সালে ১ পয়সা এবং তারপর ৭৫ সালে ১ টাকা ধাতব মুদ্রা প্রবর্তন করা হয়। এরপর দুই টাকা মূল্যের ধাতব মুদ্রার প্রচলন করা হয়। বর্তমানে ৫ টাকা মূল্য মানের ধাতব মুদ্রাও প্রচলিত আছে।

জানা যায়, ২০০৪ সালে স্টিলের তৈরি ২ টাকার মুদ্রা ইস্যু হয়। এই মুদ্রা নকশা অভিমুখ দিকে রয়েছে বাংলাদেশর জাতীয় প্রতীক। জাতীয় প্রতীকের কেন্দ্রে রয়েছে পানিতে ভাসমান একটি শাপলা ফুল, ফুলটিকে বেষ্টন করে আছে দুটি ধানের শিষ। ২০১৩ সালে ২ টাকা মূল্যমানের ৫০ কোটি ধাতব মুদ্রা (কয়েন) তৈরিতে জাপানের একটি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে চুক্তি করে সরকার। মুদ্রার অভিমুখে জাতীয় প্রতীক আর বিপরীত ভাগে ছিল জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতি।

দেশে বর্তমানে পয়সা আকারে ধাতব মুদ্রা চালু আছে। কিন্তু দৈনন্দিন কেনাকাটা বা লেনদেনে ১, ৫, ১০ ও ২৫ পয়সার ধাতব মুদ্রার ব্যবহার হয় না। ৫০ পয়সার ব্যবহার মাঝে মাঝে দেখা গেলেও অন্য চার ধরনের পয়সাই কার্যত অচল বা মূল্যহীন। বাস্তব জীবনে কাজে না লাগা এসব পয়সা আইনগতভাবে সচল। অর্থাৎ সচল মুদ্রা বাস্তবে আজ অচল। বাস্তবে ‘অচল’ মুদ্রা লেনদেনে কাজে লাগছে না। এমনকি ১-২ টাকা মানের ধাতব মুদ্রাও আর ভিক্ষুকরা নিতে চায় না। তা ছাড়াও দোকান-পাট, ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে এমনকি বিভিন্ন ব্যাংকেও ১, ৫, ১০ ও ২৫ পয়সার ধাতব মুদ্রার লেনদেন চোখে পড়ে না। যদিও বাংলাদেশ ব্যাংকের কারেন্সি ম্যানেজমেন্ট বিভাগ থেকে জারিকৃত এক সার্কুলারে সকল ব্যাংক শাখাকে গ্রাহকের কাছ থেকে কয়েন নিতে বলা হয়েছে। কিন্তু গ্রাহকের পকেটে এসব ধাতব মুদ্রা না থাকায় আর লেনদেন হয় না।

১ পয়সা, ৫ পয়সা, ১০ পয়সা, ২৫ পয়সার ধাতব মুদ্রা আগামী প্রজন্মের কাছে অচেনা হয়ে থাকবে বলে সচেতন মহল মনে করে। আর ১০০ পয়সা বা ১ টাকা এই কথাটি পুস্তকের পাতায় স্থান পাবে।

"