নিজস্ব প্রতিবেদক
ভাড়া কমিয়েও মিলছে না অর্ধেক যাত্রী
* ঢাকা-বরিশাল লঞ্চযাত্রা * ঈদ স্পেশাল সার্ভিস নিয়ে শঙ্কা
আনুষ্ঠানিক ঘোষণা না দিলেও বরিশাল-ঢাকা রুটের লঞ্চগুলোতে ডেক থেকে শুরু করে কেবিনের ভাড়া কম নেওয়া হচ্ছে। পদ্মা সেতু উদ্বোধনের পর সড়ক পথে যাত্রীর চাপ বেড়ে যাওয়ায় এ পথে হাঁটতে হচ্ছে লঞ্চ মালিকদের। স্বপ্নের সেতু চালু হওয়ায় দক্ষিণাঞ্চলে দীর্ঘদিন ধরে ঝিমিয়ে পড়া সড়ক পরিবহন ব্যবসা এখন চাঙা। নতুন পরিবহন কোম্পানির আগমন এবং বাস ও রুটের সার্ভিসে সরগরম পুরো দক্ষিণাঞ্চলের সড়ক পথ। তাই লঞ্চের যাত্রী ধরে রাখতে ভাড়া কমানো, সেবার মান উন্নয়নসহ যাত্রীবান্ধব নানা ধরনের সুযোগ-সুবিধা দিয়েও আগের মতো আর যাত্রী টানতে পারছেন না লঞ্চের স্টাফরা।
বরিশাল-ঢাকা রুটের বিভিন্ন লঞ্চের স্টাফদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, রবি থেকে বুধবার পর্যন্ত তাদের এ রুটে তেমন একটা যাত্রী হয় না। তবে বৃহস্পতি থেকে শনিবার এ তিন দিন প্রচুর যাত্রী হয়। একসময় ছিল যখন শুধু ঢাকার সদরঘাট থেকে বরিশাল অভিমূখে বৃহস্পতি থেকে শনিবার যাত্রীচাপ হতো, তবে কয়েক বছর ধরে ঢাকা থেকে বরিশাল এবং বরিশাল থেকে ঢাকা অর্থাৎ উভয়মুখী লঞ্চেই এই তিন দিন যাত্রীচাপ থাকে।
এ ছাড়া ঈদসহ ধর্মীয় উৎসব, বিভিন্ন ধরনের পরীক্ষা এবং বিশেষ ছুটির সময় লঞ্চে প্রচুর যাত্রী হয়। তবে পদ্মা সেতু উদ্বোধনের পর লঞ্চের যাত্রী অনেকটা কমেছে। এমনকি কমপক্ষে দুই সপ্তাহ আগে ঈদ স্পেশাল সার্ভিসের তোড়জোড় থাকলেও এবারে তাও দেখা যাচ্ছে না। এমনকি ঈদের আগে ঢাকা থেকে বরিশালে আসতে চাওয়া মানুষের কেবিনের জন্য অগ্রিম যোগাযোগও কমে গেছে।
১২০০ টাকার সিঙ্গেল কেবিন এক হাজার টাকায় এবং ২৪০০ টাকার ডাবল কেবিন ২ হাজার টাকায়ও মিলছে। লঞ্চের সুপারভাইজার আর টিকিট কাউন্টারে যোগাযোগ করে জানা গেছে, বরিশাল রুটে সুন্দরবন লঞ্চে সিঙ্গেল কেবিনের আগে ভাড়া ছিল ১৪০০ টাকা, এখন নেওয়া হচ্ছে ১২০০ টাকা। এ ছাড়া ডাবল কেবিনের ভাড়া ছিল ২৫০০, এখন ২২০০ টাকা। এসি কেবিন নেওয়া হচ্ছে ২২০০ টাকা, আগে ছিল ২৫০০ টাকা। নন-এসি কেবিনের আগে ভাড়া ছিল ২২০০ টাকা, এখন ২০০০ টাকা। সোফার ভাড়া নেওয়া হচ্ছে ৫০০ টাকা, যা আগে ছিল ৭০০ টাকা।
এ ছাড়া লঞ্চের ডেকে যেখানে ভাড়া নেওয়া হতো ৩৫০ টাকা (সরকার নির্ধারিত ৩৫২ টাকা) সেখানে এখন নেওয়া হচ্ছে মাত্র ২০০ টাকা। আর ভিআইপি কেবিন ৮০০০ টাকা পর্যন্ত নেওয়া হচ্ছে।
বরিশালগামী আরেক জনপ্রিয় লঞ্চ মানামি। তবে এ লঞ্চে কেবিনের ভাড়া অপরিবর্তিত রয়েছে। এ ছাড়া অন্য ছোট লঞ্চগুলোতেও ভাড়া কমানো হয়েছে। তবে ভাড়া কমিয়েও যাত্রী পাচ্ছে না লঞ্চগুলো। ধারণক্ষমতার অর্ধেক যাত্রীও মিলছে না। যদিও লঞ্চমালিকদের দাবি, রোজার ঈদের পর থেকেই যাত্রীর চাপ কম। তবে পদ্মা সেতু চালুর পর তা আরো কমে গেছে বলে জানিয়েছেন লঞ্চ সুপারভাইজার, স্টাফ ও অন্য কর্মকর্তারা।
বরিশালগামী লঞ্চ সুন্দরবনের ধারণক্ষমতা ১ হাজার ৩৫০ হলেও বেশ কয়েক দিন ধরে মাত্র ৩০০-৪০০ যাত্রী নিয়ে লঞ্চটি যাতায়াত করছে। এ ছাড়া ৯০০ ধারণক্ষমতার লঞ্চ মানামি যেখানে ৬০০-৭০০ জন যাত্রী নিয়ে ঘাট ছেড়ে যেত, সেখানে তিন দিন ধরে ২৫০-৩০০ জন যাত্রী নিয়ে পাড়ি জমাচ্ছে। লঞ্চটির সর্বশেষ ট্রিপে ১৬৭টি কেবিনের মধ্যে ৬৮টিই ছিল ফাঁকা।
এদিকে ঢাকা থেকে পটুয়াখালী, গলাচিপা রুটে ডেকের ভাড়া অপরিবর্তিত রয়েছে। সরকার নির্ধারিত ৫৩৪ টাকা হলেও ডেকে পটুয়াখালীর ভাড়া নেওয়া হচ্ছে ৪০০ টাকা। আর গলাচিপার ভাড়া ৫০০। তবে এ রুটের লঞ্চগুলোতে কেবিনের ভাড়া কমানো হয়েছে। তবে ঈদে যাত্রী বাড়বে বলে আশা লঞ্চ কর্তৃপক্ষের।
ঢাকা থেকে বরিশালগামী লঞ্চ এমভি মানামির ইনচার্জ সোহেল বলেন, ‘যাত্রীসংখ্যা এখনো স্বাভাবিক আছে। এক সপ্তাহ পর ঈদের মৌসুম আসবে, তখন এখনকার চেয়ে যাত্রী বাড়বে।’
সুন্দরবন-১১ লঞ্চের সুপারভাইজার সিরাজ মিয়া জানান, পদ্মা সেতুতে লঞ্চে কতটুকু প্রভাব পড়বে তা ঈদের পর বোঝা যাবে। এখন তো এমনিতেই মানুষ বাড়ি কম যায়। কয়েক দিন পর ঈদের চাপ বাড়বে।
ডলার কোম্পানির ২৪টি লঞ্চের মালিক ও যাত্রী পরিবহন সংস্থার সহসভাপতি আবুল কালাম বলেন, ‘ব্যবসায়িক প্রতিযোগিতা থাকলে যাত্রীরা সুফল ভোগ করবে। পদ্মা সেতুর কারণে লঞ্চযাত্রায় কিছুটা প্রভাব পড়েছে। তবে তা বেশি দিন স্থায়ী হবে না। কারণ লঞ্চে চলাচল আরামদায়ক ও সাশ্রয়ী। আর লঞ্চে যাত্রীদের জন্য থাকাণ্ডখাওয়াসহ বিনোদনেরও ব্যবস্থা রয়েছে। এ ছাড়া বেশির ভাগ লঞ্চে রয়েছে ওয়াইফাই সুবিধা। সব মিলিয়ে আমাদের যাত্রী কমবে না।’
"