বদরুল আলম মজুমদার

  ০২ জুলাই, ২০২২

ঈদযাত্রায় সড়কে ভোগান্তির আশঙ্কা

পবিত্র ঈদুল আজহা উপলক্ষে ট্রেনের অগ্রিম টিকিট বিক্রি শুরু হয়েছে গতকাল শুক্রবার। আজ শনিবার বাসের অগ্রিম টিকিট দেওয়া হচ্ছে। পদ্মা সেতু চালু হওয়ায় নৌপথে লঞ্চের ওপর চাপ কমেছে। তবে প্রতিবারের মতো এবারও ঈদযাত্রায় ভোগান্তি হতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।

রেলওয়ে এবং সড়ক পরিবহন খাতের সংশ্লিষ্টরা বলছেন, পবিত্র ঈদুল আজহায় রাজধানী ঢাকার প্রবেশ ও বহির্গমন পথে যাত্রীবাহী বাস ও পশুবাহী ট্রাকের চাপ থাকতে পারে। এদিকে ঢাকা নগরীর বাইরে প্রধান সড়কগুলোতে সংস্কার ও উন্নয়নের কাজ চলছে। এ কারণে এসব সড়কে প্রতিদিন যানজট লেগেই থাকে। এ অবস্থায় সঠিকভাবে সড়কে শৃঙ্খলা রক্ষা করতে না পারলে ভোগান্তি অসহনীয় পর্যায়ে চলে যেতে পারে।

এদিকে ঈদ সামনে রেখে ঢাকার প্রবেশ ও বহির্গমন পথে যানবাহন চলাচল স্বাভাবিক রাখতে দায়িত্বপ্রাপ্ত সংস্থার সদস্যরা প্রস্তুতি নিতে শুরু করেছেন। সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের সচিব এবিএম আমিন উল্লাহ নুরী এ বিষয়ে বলেন, পবিত্র ঈদুল আজহায় ঢাকায় প্রবেশ ও বহির্গমনমুখে যানজট রোধে বিশেষ পদক্ষেপ গ্রহণ করা হচ্ছে। সড়কে শৃঙ্খলা ঠিক রাখতে ঢাকা, গাজীপুর, টাঙ্গাইল, সিরাজগঞ্জ এলাকায় পুলিশ, হাইওয়ে পুলিশ ও অন্যান্য বিভাগের সঙ্গে আলোচনা এবং সভা করা হচ্ছে। সমস্যা চিহ্নিত করে তাৎক্ষণিক পদক্ষেপ গ্রহণ করা হচ্ছে। এসব পদক্ষেপ নেওয়ায় আমরা আশা করছি, আসন্ন ঈদে ঢাকার প্রবেশমুখ ও মহাসড়কে যানজটের ধকল সইতে হবে না মানুষকে।

জানা যায়, সড়ক পরিবহন এবং মহাসড়ক বিভাগ ঢাকা ও গাজীপুর মহানগর পুলিশ এবং ঢাকা জেলা, টাঙ্গাইল, সিরাজগঞ্জ, মুন্সীগঞ্জ ও নারায়ণগঞ্জ জেলা পুলিশের সঙ্গে সমন্বয় করে কাজ করছে। এই তৎপরতায় তারা মনে করছে, আসন্ন ঈদুল আজহায় এবার ঢাকার প্রবেশ ও বহির্গমনমুখে এবং মহাসড়কে যানবাহন চলাচলে শৃঙ্খলা বজায় রাখা সম্ভব হবে।

যোগাযোগ বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ঢাকামুখী মানুষের স্রোত না কমালে ঢাকার প্রবেশ ও বহির্গমন এবং মহাসড়কে যানজট থাকবে। প্রতি রোজার ঈদে শুধু ঢাকা থেকে বের হওয়ায় সড়কে গাড়ির চাপ বেশি থাকে। এ সময় ঢাকায় প্রবেশমুখে গাড়ির চাপ কম থাকে। আর কোরবানির ঈদে রাস্তার দুপাশেই প্রচণ্ড গাড়ির চাপ থাকে। হাজার হাজার পশুবাহী গাড়ি ঢাকায় প্রবেশ করে। আর বহির্গমনমুখে হাজার হাজার গাড়িতে মানুষ ঈদ উদযাপন করতে ঢাকা ছেড়ে যায়। এ কারণে কোরবানির ঈদে ঢাকার প্রবেশ ও বহির্গমনমুখে যানজটের মাত্রা বেশি থাকে এবং মানুষের ভোগান্তির মাত্রা রোজার ঈদের চেয়ে বেশি হয়ে থাকে।

সংশ্লিষ্টরা বলেন, ঢাকার প্রধান প্রবেশ ও বহির্গমনমুখের মধ্যে অন্যতম গাবতলী, টঙ্গী ও যাত্রাবাড়ী। এ ছাড়া পদ্মা সেতু চালু হওয়ায় বাবুবাজার, বছিলা এবং মেয়র হানিফ ফ্লাইওভার ব্যবহার করে ঢাকায় যাতায়াত বেড়েছে। ঢাকার প্রবেশ ও বহির্গমনমুখগুলোর সক্ষমতা বাড়াতে দায়িত্বপ্রাপ্ত সংস্থাগুলো সবসময়ই কিছু না কিছু কাজ করছে। কখনো সড়ক প্রশস্ততার কাজ করছে, কখনো সড়ক সংস্কারকাজ।

গাবতলী ও টঙ্গী ব্রিজের আধুনিকায়নের কাজ চলমান রয়েছে। টঙ্গী প্রবেশমুখে বাস র‌্যাপিড ট্রানজিট (বিআরটি) নির্মাণকাজ চলছে। প্রতি বছর দুই ঈদ ও ব্যস্ততম সময়ে মানুষের সীমাহীন দুর্ভোগ হচ্ছে। আয়তনের তুলনায় ঢাকায় মানুষের বসবাস কয়েকগুণ বেশি হয়ে গেছে। এ কারণে সড়ক প্রশস্ত করেও তেমন কোনো লাভ হচ্ছে না। ঢাকার প্রবেশ ও বহির্গমনমুখের যানজট কমাতে হলে ঢাকার বিকেন্দ্রীকরণের কোনো বিকল্প নেই। সরকার এদিকে দৃষ্টি না দিলে প্রতি বছর যানজটের দুর্ভোগ, সড়কের দুর্ঘটনা মেনে নিয়েই চলতে হবে।

বাংলাদেশ প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের অধ্যাপক ড. হাদিউজ্জামান বলেন, ঈদের সময় ঢাকার প্রবেশ ও বহির্গমনমুখে গাড়ির চাপ বাড়ে। তখন তীব্র যানজট হয়। এটা অনেক দিন ধরে চলে আসছে। দ্রততম সময়ে এর কোনো সমাধান দেখছি না। সবকিছু এভাবে চলতে থাকলে এমন ভোগান্তি মেনে নিয়েই চলতে হবে। তিনি বলেন, ঢাকার প্রবেশ ও বহির্গমনমুখ প্রশস্ত করা হচ্ছে। কিন্তু ঢাকার ভেতরের সড়ক প্রশস্ত করা সম্ভব হচ্ছে না। এ কারণে ঢাকার প্রবেশমুখ প্রশস্ত করেও লাভ হচ্ছে না। যানজটের টেকসই সমাধান করতে হলে ঢাকার জনসংখ্যা কমাতে হবে। এ ব্যাপারে উদ্যোগ গ্রহণ না করলে এ সমস্যার সমাধান মিলবে না। তবে ঢাকার নগর পরিবহন ব্যবস্থাপনায় টেকসই সমাধান নিশ্চিত করা গেলে যানজট পরিস্থিতি কিছুটা উন্নতি করা সম্ভব হবে।

এ বিষয়ে ঢাকা যানবাহন সমন্বয় কর্তৃপক্ষের (ডিটিসিএ) সাবেক মহাপরিচালক ড. এএসএম সালেহ উদ্দিন বলেন, ঢাকার প্রবেশ ও বহির্গমনমুখের যানজট নিরসনে প্রবেশমুখে দুই লেনের সড়কগুলো চার লেন করে দেওয়া যেতে পারে। আর ঢাকার বৃত্তাকার সড়ক ব্যবস্থা গড়ে তুলতে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। পাশাপাশি ঢাকার জনসংখ্যা কমাতে সরকারকে কার্যকর ভূমিকা পালন করতে হবে।

এ সম্পর্কে বাংলাদেশ প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) অধ্যাপক ড. সামসুল হক বলেন, পদ্মা সেতু, এক্সপ্রেসওয়ে হওয়ার কারণে দক্ষিণাঞ্চল থেকে মানুষ খুব কম সময়ে ঢাকার প্রবেশমুখে পৌঁছে যাবে। তাদের সবাইকে পোস্তগোলা দিয়ে ঢাকায় প্রবেশ করাতে হলে দীর্ঘ যানজটের ধকল সামলাতে হবে যাত্রীদের। তখন পদ্মা সেতুর উদ্দেশ্য ব্যাহত হবে। এজন্য কেরানীগঞ্জ এলাকা দিয়ে ঢাকার যে রিং রোড (বৃত্তাকার সড়কপথ) হওয়ার কথা, সেটা দ্রুত বাস্তবায়ন করতে হবে।

তিনি আরো বলেন, যে লোক উত্তরা যাবেন, তার পোস্তগোলা ব্রিজ দিয়ে ঢাকায় প্রবেশ করার কোনো যুক্তি নেই। তিনি বছিলা বা গাবতলী এলাকা দিয়ে ঢাকায় প্রবেশ করে বেড়িবাঁধ সড়ক ব্যবহার করে সে এলাকায় চলে যেতে পারবেন। অন্যান্য এলাকার যাত্রীরাও একইভাবে রিং রোডের সুবিধা গ্রহণ করতে পারবেন।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close