বদরুল আলম মজুমদার

  ০১ জুলাই, ২০২২

বিএনপি-জামায়াতের সম্পর্ক চলবে কৌশলেই

বিএনপির সঙ্গে জামায়াতের সম্পর্ক প্রায় দুই যুগের। দীর্ঘ এ সময়ে দলটি বিএনপির ওপর ভর করে রাজনৈতিক অবস্থান পোক্ত করেছে বলে অনেকেই মনে করেন। তবে গত ৫-৬ বছর বিএনপি থেকে কিছুটা আলাদা থাকার চেষ্টা করছে জামায়াত। এ সময়টায় বিএনপিও জামায়াতকে খুব একটা কাছে টানার চেষ্টা করেনি। বর্তমান সময়েও একই অবস্থান ধরে রেখেছে দল দুটি। যুগপৎ আন্দোলন গড়ে তুলতে বিএনপি বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সংলাপ করলেও জামায়াতের সঙ্গে সংলাপে অংশ নাও নিতে পারে। বিএনপির এমন অবস্থানের বিষয়টি সমঝোতার ভিত্তিতেই হচ্ছে বলে প্রতীয়মান হচ্ছে। দল দুটির বিভিন্ন সূত্রে এমনটাই জানা গেছে।

বর্তমান সরকারের বিরুদ্ধে যুগপৎ আন্দোলনের ক্ষেত্র তৈরি করার চেষ্টা করছে বিএনপি। এজন্য সরকারবিরোধী অপর রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সংলাপে অংশ নিচ্ছে রাজপথের প্রধান এ বিরোধী দল। জামায়াত পছন্দ করে না এমন রাজনৈতিক শক্তি বা বহিঃশক্তিকে কাছে টানতে প্রয়োজনে জামায়াতকে ত্যাগ করার ঘোষণা দিতে পারে বিএনপি। আবার একধাপ এগিয়ে জামায়াতও বিএনপি জোট থেকে বের হয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিতে পারে। দল দুটির সূত্রগুলো বলছে, দুই দলের মধ্যে আপাতত দৃশ্যমান যা কিছু হোক না কেন, তা শীর্ষপর্যায়ের নেতাদের সমঝোতার ভিত্তিতেই হবে। তবে কয়েক বছর ধরে বিএনপিতে থাকা উদারপন্থি নেতারা জামায়াতকে জোট থেকে বের করে দিতে ক্রমাগত চাপ তৈরি করছে। দলটির স্থায়ী কমিটির একাধিক নেতা জামায়াতকে ত্যাগ করার পক্ষে নিজেদের মতামতও তুলে ধরেছে। তবে এ বিষয়ে বিএনপির দুই শীর্ষ নেতা বরাবরই চুপ থেকেছেন। সরকারবিরোধী বৃহৎ আন্দোলন গড়ে তোলার প্রেক্ষাপটে জামায়াত ইস্যুটি বিএনপিতে আবার সামনে নিয়ে আসছেন জামায়াতবিরোধী নেতারা। তারা এবার জামায়াতের বিষয়ে একটা সিদ্ধান্তে পৌঁছাতে চান। সম্প্রতি এসব নেতা তাদের তৎপরতাও বাড়িয়েছেন।

বিএনপির ভেতরে কিছু নেতার এমন তৎপরতার বিষয়টি বেশ ওয়াকিবহাল জামায়াতও। তবে দলটির উচ্চপর্যায়ের একজন নেতা এই প্রতিবেদককে বলেন, ‘বিএনপি নেতারা কী করবে, এটা তাদের ব্যাপার। তবে আমাদের দলের বিষয়ে শীর্ষপর্যায়ে ভালো বোঝাপড়া আছে। যা হবে, বৃহৎ স্বার্থেই হবে।’ এ বিষয়ে জামায়াতের কেন্দ্রীয় নায়েবে আমির ডা. সৈয়দ আবদুল্লাহ মুহাম্মদ তাহের প্রতিদিনের সংবাদকে বলেন, ‘সরকারবিরোধী আন্দোলনে সফলতার জন্য কৌশলগত কারণে যেটা উত্তম আমরা সেটাই করব। সে ক্ষেত্রে নিজ নিজ প্ল্যাটফরমে থেকে সরকারবিরোধী আন্দোলনে আপত্তি নেই। এক দফার আন্দোলনের মূল লক্ষ্যই হচ্ছে বর্তমান সরকারের পতনের মধ্য দিয়ে অন্তর্বর্তী সরকার ব্যবস্থা, নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠন ও অবাধ নির্বাচন। এসব দাবি আদায়ে সফলতার জন্য কৌশলগতভাবে যেটা উত্তম সেটাই করা হবে। কৌশলগত কারণে যেভাবেই আন্দোলন হোক, ২০-দলীয় জোটের পারস্পরিক আলোচনার মাধ্যমে সবার সম্মতির ভিত্তিতে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।’

এই নেতা আরো বলেন, ‘তা ছাড়া জোটের জন্য যেকোনো ত্যাগ স্বীকারে প্রস্তুত জামায়াত। তাই বলছি, বিএনপি অস্বস্তিবোধ করলে আমাদের পক্ষ থেকেও জোট ছাড়ার ঘোষণা আসতে পারে।’

বিএনপির নির্ভরযোগ্য সূত্র জানায়, যুগপৎ আন্দোলনের প্রস্তাব নিয়ে বাম ও প্রগতিশীল দলগুলোর সঙ্গে বিএনপির চলমান সংলাপ মূলত জামায়াতের কারণেই। এবারের আন্দোলনে জামায়াতকে নিলে বা কোনো ধরনের সম্পৃক্তা থাকলে বাম দলগুলোর পাশাপাশি উদার প্রগতিশীল মতের দল ও ব্যক্তিরা সঙ্গে আসবেন না। এমনটা জেনে-বুঝেই যুগপৎ আন্দোলনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে দলটি। তবে রাজপথে জামায়াতের শক্তি প্রদর্শনের বিষয়ে অন্য রাজনৈতিক দলগুলোও প্রায় একমত। তবে দলটিকে এক মঞ্চে নিয়ে আন্দোলন করা তাদের জন্যও অস্বস্তিকর। জামায়াতকে তাদের মতো করে রাজপথে সক্রিয় রাখতে বিএনপিকেই দায়িত্ব নিয়ে এগোতে হচ্ছে। এ অবস্থায় জামায়তকে সঙ্গে না রেখে চললেও বিএনপির প্রদর্শিত পথেই থাকতে পারে জামায়াত।

সূত্র আরো জানায়, বাম ও প্রগতিশীল দলগুলোর সঙ্গে সংলাপ শুরুর আগেই জামায়াতের সঙ্গে সব বিষয়ে ফয়সালা করেছে বিএনপি। তবে বিষয়টি স্বীকার না করে ভিন্ন যুক্তি দিচ্ছেন নেতারা। তাদের ভাষ্য, আগে বৃহত্তর ঐক্য বা জোট গঠন করে আন্দোলনে যেতে দেরি হয়ে যাবে। এর চেয়ে কর্মসূচির ভিত্তিতে যুগপৎ আন্দোলন গড়ে তোলার মধ্য দিয়ে রাজপথে ঐক্য গড়ে তোলাই যুক্তিযুক্ত।

প্রথম থেকেই ঐক্যজোট গঠনে তৎপর থাকা বিএনপি নেতারা জানিয়েছেন, দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটির সদস্য, জোট সমন্বয়ক নজরুল ইসলাম খান ও গয়েশ্বর চন্দ্র রায় তিন মাস ধরে দফায় দফায় বৈঠক করেছেন জোট নেতাদের সঙ্গে। ওইসব বৈঠকে প্রত্যেক দলকে নিজস্ব দলীয় শক্তির ভিত্তিতে সরকারবিরোধী কর্মসূচি প্রণয়নের পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। তবে কর্মসূচি আলাদাভাবে পালন করলেও তাতে সমন্বয় থাকবে।

বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর জামায়াত প্রসঙ্গে গণমাধ্যমে বলেন, ‘জামায়াত বিএনপির কোনো অংশ নয় এবং জামায়াতের সঙ্গে আদর্শিক কোনো সম্পর্ক নেই। ভোটের রাজনীতিতে ২০-দলীয় জোটে তারা আছে। তবে বিএনপির সঙ্গে বাস্তবে তারা নেই। কারণ, ২০১৮ সালের নির্বাচনের পর তারা তেমনভাবে সক্রিয় না।’

তিনি আরো বলেন, ‘জামায়াত সব সময় রাজনীতিতে ছিল। ৬৯-এর গণ-অভ্যুত্থান, ৯০-এর আন্দোলন, আওয়ামী লীগের সঙ্গে আন্দোলন করেছে। সাইডলাইন থেকে তারা আন্দোলনে ছিল। তাই নির্বাচন ও আন্দোলনকেন্দ্রিক সম্পর্ক যেকোনো সময় যেকোনো দলের সঙ্গেই হতে পারে। বহুদলীয় গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় এটা খুবই সাধারণ বিষয়। একটু অপেক্ষা করুন। কিছুদিনের মধ্যেই সব মেরূকরণ আরো স্পষ্ট ও পরিষ্কার হবে।’

এরই মধ্যে ২০-দলীয় জোটের অনেকগুলো দলের সঙ্গে সংলাপে অংশ নিয়েছে বিএনপি। আরো বেশ কটি দলের সঙ্গে সংলাপের দিনক্ষণ চূড়ান্ত করা হয়েছে। তবে জামায়াতের সঙ্গে সংলাপে বসা নিয়ে এক ধরনের ধোঁয়াশা তৈরি হয়েছে।

তবে এ বিষয়ে ২০-দলীয় জোটের সমন্বয়ক ও বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান প্রতিদিনের সংবাদকে বলেন, ‘আমরা জোটের এবং জোটের বাইরে থাকা দলগুলোর সঙ্গে সংলাপ করছি, আরো করব। কারো সঙ্গে করব না এমন কথা তো আমরা বলিনি। সময় হলে জানতে পারবেন।’

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close