মিরসরাই (চট্টগ্রাম) প্রতিনিধি

  ৩০ জুন, ২০২২

নগদে উপবৃত্তি নিয়ে মিরসরাইয়ে হয়রানি

প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের জন্য দেওয়া সরকারি উপবৃত্তির টাকা উত্তোলন করতে গিয়ে মিরসরাইয়ে চরম হয়রানির মুখে পড়ছেন শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা। মোবাইল ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিস নগদের উপজেলায় কোনো গ্রাহক সেবা অফিস না থাকায় প্রতিষ্ঠানটির সেলস ডিস্ট্রিবিউশন হাউসে ভিড় করছেন শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা। উপজেলার প্রায় ৩৫ হাজার শিক্ষার্থী সরকারি উপবৃত্তির টাকা পান। যার ৭০ শতাংশ শিক্ষার্থী টাকা তুলতে গিয়ে হয়রানির শিকার হচ্ছেন বলে অভিযোগ রয়েছে।

অভিভাবকদের অভিযোগ, টাকা উত্তোলনের জন্য গোপন পিন দিলে ‘ডিড নট ম্যাচ’ পিনটি সঠিক নয় লেখা আসছে। আগে ব্যবহৃত গোপন পিন অটো পরিবর্তন হয়ে গেছে। নতুন গোপন পিন সেট করতে চাইলে তাও কাজ হচ্ছে না। জাতীয় পরিচয়পত্র ও অন্যান্য তথ্য নিয়ে নগদের (কাস্টমার কেয়ার) গ্রাহক সেবা ১৬১৬৭ নাম্বারে কল দিয়েও সংযোগ পাওয়া যাচ্ছে না।

মিরসরাই পৌরসভায় অবস্থিত নগদ সেলস ডিস্ট্রিবিউশন হাউসের অফিসে গিয়ে দেখা যায়, উপজেলার বিভিন্ন স্থান থেকে শিক্ষার্থীসহ অভিভাবকরা জাতীয় পরিচয়পত্র নিয়ে এসেছেন অভিযোগ জানাতে। প্রতিষ্ঠানটিতে কর্মরত দুজন সেবা দিচ্ছেন নিজেদের ইচ্ছামতো। অভিভাবকরা সমস্যার সমাধান না পেয়ে ফিরে যাচ্ছেন।

জানা গেছে, ২০২০-২১ অর্থবছরের উপবৃত্তি প্রদান প্রকল্পের আওতায় প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের উপবৃত্তি ও জামা, জুতা এবং ব্যাগ কেনার (কিডস অ্যালাউন্স) টাকা গত সপ্তাহ থেকে অধ্যায়নরত শিক্ষার্থীদের দেওয়া বৈধ অভিভাবকের মোবাইল নাম্বারে আসতে শুরু করে। শিক্ষার্থীদের শিক্ষা উপকরণ কেনার জন্য সরকার ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিস নগদের মাধ্যমে এ টাকা প্রদানের চুক্তি করে। এর আগে যা রূপালী ব্যাংকের শিওর ক্যাশের মাধ্যমে বিতরণ করা হতো। শিওর ক্যাশ বন্ধের পর কমলমতি শিক্ষার্থীদের মাঝে নগদের মাধ্যমে টাকাগুলো বিতরণ হচ্ছে। সে অনুযায়ী প্রতি বিদ্যালয় থেকে নগদের সার্ভারে এন্ট্রি করা মোবাইল নাম্বারে টাকা আসার ম্যাসেজ দেখে শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা উপজেলা বিভিন্ন বাজারে নগদ এজেন্টের দোকানে ভিড় করছেন। পিন ভুল হওয়ার ম্যাসেজ আসাতে কোনোভাবে টাকা উত্তোলন করতে পারছেন না। তবে নগদ কর্তৃপক্ষের দাবি অধিকাংশ অভিভাবক নগদ অ্যাকাউন্ট শুধু উপবৃত্তির টাকা উত্তোলনের জন্য ব্যবহার করেন। ফলে দীর্ঘদিন ব্যবহার না করার কারণে অনেকে পিন নাম্বার ভুলে যান। কয়েকবার ভুল পিন দেওয়াতে পিন রিসেট হয়ে যাচ্ছে। এতে করে অভিভাবকরা হয়রানির শিকার হচ্ছেন।

উপজেলার মিঠানালা ইউনিয়নের রাজাপুর গ্রামের বাসিন্দা রাজিয়া সুলতানা সুবর্ণা জানান, তার মেয়ে জান্নাতুল নাইমা মিঠানালা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের তৃতীয় শ্রেণির শিক্ষার্থী। তার উপবৃত্তির টাকা উঠাতে নগদ এজেন্টে গেলে পিন ভুল হয়েছে ম্যাসেজ আসে। উপজেলায় নগদের অফিসে দুই দিন আসলেও কোনো সমাধান পাননি।

উপজেলার খইয়াছড়া গ্রামের বাসিন্দা ফাতেমা আক্তার বলেন, তার মেয়ে ফারিয়া বিন হাসনাত মসজিদিয়া ভূঁইয়াপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের তৃতীয় শ্রেণির ছাত্রী। মোবাইলে মেয়ের টাকা আসার মেসেজ আসলেও পিনের সমস্যার কারণে টাকা উত্তোলন করতে পারছেন না। মিরসরাই সদরের নগদ অফিসে গত কয়েক দিন এসেও কোনো প্রতিকার পাননি।

তিনি আরো বলেন, আগের ব্যবহৃত গোপন পিন অটো পরিবর্তন হয়ে গেছে। নতুন পিন সেট করতে চাইলে তাও কাজ হচ্ছে না। নগদের কাস্টমার কেয়ারের গ্রাহক সেবা ১৬১৬৭ নাম্বারে কল দিয়েও লাইন পাওয়া যায় না। বাড়ি থেকে মিরসরাই আসতে প্রতিদিন ৫০-৬০ টাকা খরচ হয়ে যায়।

নগদের মিরসরাই সেলস ডিস্ট্রিবিউটর দায়িত্বে থাকা হাক্কানী লজিস্ট্রিকের জেনারেল ম্যানেজার ইরফান মিয়া বলেন, মিরসরাইতে নগদের কোনো কাস্টমার কেয়ার নেই। মিরসরাই সদরে একটি সেবা প্রতিষ্ঠান আছে। আরো দুটি স্থাপনের কাজ চলছে। টাকা তুলতে গিয়ে শিক্ষার্থীদের হয়রানির অভিযোগ প্রায় ৯০ শতাংশ সমাধান হয়েছে বলে দাবি করেন তিনি।

উপজেলার মধ্য তালবাড়িয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ও উপজেলা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সভাপতি মনজুর কাদের চৌধুরী বলেন, উপজেলার ১৯১টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা উপবৃত্তির টাকা তুলতে গিয়ে হয়রানির শিকার হচ্ছেন। অধিকাংশ অভিভাবক পিন নাম্বার ভুলে যাওয়াতে মূলত এ সমস্যা হচ্ছে। যেসব শিক্ষার্থী টাকা তুলতে পারেনি তাদের মোবাইল নাম্বার সংগ্রহ করা হচ্ছে। নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে শিক্ষার্থীদের টাকা উত্তোলনের বিষয়ে শঙ্কা প্রকাশ করেছেন তিনি।

উপজেলা শিক্ষা অফিসার এ কে এম ফজলুল হক বলেন, বিভিন্ন বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের সঙ্গে কথা বলে জেনেছি প্রায় ৭০ শতাংশ শিক্ষার্থী টাকা তুলতে গিয়ে হয়রানির শিকার হয়েছেন। অনেকের সমস্যা সমাধান হয়েছে। যেসব শিক্ষার্থী টাকা তুলতে গিয়ে সমস্যায় পড়েছেন তাদের মোবাইল নাম্বার জমা দেওয়ার জন্য প্রধান শিক্ষকদের বলা হয়েছে। ওই নাম্বারগুলো অধিদপ্তরে মেইল করলে আশা করি সমস্যা সমাধান হয়ে যাবে।

তিনি আরো বলেন, গত ১৪ জুন থেকে মোবাইলে টাকার মেসেজ আসা শুরু হয়েছে। টাকা আসার ১৫ দিনের মধ্যে টাকা উত্তোলন না করলে তা পুনরায় ফিরে যাওয়ার আশঙ্কা থাকতে পারে। তাই দ্রুত সমস্যা সমাধান করা উচিত।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close