প্রতিদিনের সংবাদ ডেস্ক

  ৩০ জুন, ২০২২

বুদ্ধিমান মাস্ক!

করোনা মহামারি গোটা বিশ্বে ফেস মাস্কের ব্যবহার নিশ্চিত করেছে। কিন্তু ঘণ্টার পর ঘণ্টা সেই মাস্ক পরে থাকলে দম বন্ধ হওয়ার উপক্রম হয়। স্পেনের এক গবেষক দল ‘বুদ্ধিমান’ মাস্কের মাধ্যমে সমস্যার সমাধান করতে চাইছে। ২০২০ সালের শুরুতে বিশে^র দেশে দেশে করোনা মহামারির সূচনাপর্ব থেকেই ফেস মাস্ক জীবনযাত্রার অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ হয়ে উঠেছে। ভাইরাস থেকে সুরক্ষা দিচ্ছে এই বস্তুটি। সেটির কার্যকারিতা নিয়ে সংশয় না থাকলেও অনেক ঘণ্টা ধরে এমন মাস্ক পরে থাকার অসুবিধা সম্পর্কেও সবাই একমত। যেমন সুপার মার্কেটের ক্যাশিয়ার মিগেল রামোন রডরিগেস নিজের অভিজ্ঞতা বর্ণনা করে বলেন, ‘মহামারির শুরুতে বেশ কয়েক দিন আমার মাথায় ব্যথা হচ্ছিল, অতিরিক্ত ক্লান্ত হয়ে পড়ছিলাম। সারা দিন মাস্ক পরে থাকলে নিঃশ্বাস নিতে অসুবিধা হয়। ফলে বেশি ক্লান্তি আসে।’

এফএফপি-২ মাস্ক ব্যবহার করলে মুখ ও মাস্কের মাঝের অংশে নিঃশ্বাসের মাধ্যমে বেরিয়ে আসা কার্বন ডাই-অক্সাইডের ঘনত্ব অনেক বেশি থাকে। সেই গ্যাস আবার শরীরে প্রবেশ করলে মাথাব্যথা বা ক্লান্তির মতো স্বাস্থ্যগত সমস্যা দেখা যায়। রেস্তোরাঁর পরিচারিকা এনকার্না উরিয়েনিয়া বলেন, ‘আমি অনেকক্ষণ মাস্ক পরে থাকলে ও বেশি মানুষের কারণে মানসিক চাপের মধ্যে থাকলে কখনো কখনো প্রচণ্ড ক্লান্ত হয়ে পড়ি। তখন নাক ও গলা পুরো শুকিয়ে যায়। কিচেনে গিয়ে একটু পানি খেয়ে নিজেকে চাঙা করার চেষ্টা করি। বুকভরে নিঃশ্বাস নিয়ে আবার কাজে ফিরে যাই।’

মাস্ক ব্যবহারকারীদের এমন শারীরিক প্রভাব এড়াতে সহায়তা করতে গ্রানাদা বিশ্ববিদ্যালয়ের ৯ ইঞ্জিনিয়ার ও রসায়নবিদ নিয়ে বিশেষজ্ঞের এক দল ‘ইন্টেলিজেন্ট মাস্ক’ তৈরি করেছে। নির্ধারিত সিওটু-মাত্রা অতিক্রম করলেই সেই মাস্ক মোবাইল ফোনের মাধ্যমে সতর্ক করে দেয়।

ইসিসেন্স প্রকল্পের সমন্বয়ক আলব্যার্তো জে পালমা জানান, এই ইন্টেলিজেন্ট মাস্কের মধ্যে এক সেন্সর রয়েছে, যেটি মুখ ও মাস্কের মাঝের অংশের বাতাস পরীক্ষা করতে পারে। সেই সিওটু সেন্সরের মধ্যে প্রয়োজনীয় ইলেকট্রনিক উপাদান ভরা রয়েছে, যা সেন্সরে রঙের পরিবর্তন ঘটলেই স্মার্টফোনে সংকেত পাঠিয়ে দেয়।

সাধারণ এফএফপি-টু মাস্ককে ইন্টেলিজেন্ট মাস্কে রূপান্তরিত করতে হলে মাস্কের মধ্যে বিশেষ ইলেকট্রনিক স্টিকার বসাতে হয়। গবেষক পাবলো এস্কোবেদো বিষয়টি বিস্তারিতভাবে বুঝিয়ে বলেন, মাস্কের মধ্যে বসানো স্টিকার এমন এক প্রণালি, যার দুটি অংশ রয়েছে। একদিকে তথাকথিত ‘রিডআউট ইলেকট্রনিকস রয়েছে, যেটি পরিবাহী কালির মাধ্যমে নমনীয় ও স্বচ্ছ প্লাস্টিকের মাধ্যমের ওপর প্রিন্ট করে। যেমনটা এখানে দেখতে পাচ্ছেন। অন্যদিকে সেন্সরের রাসায়নিক অংশ রয়েছে, যেটি সিওটুর ঘনত্ব অনুযায়ী নিজস্ব রং বদলায়।

প্রস্তাবিত সিওটুর মাত্রা পেরিয়ে গেলে মাস্ক ব্যবহারকারীকে সতর্ক করতে গবেষক দল এক বিশেষ মোবাইল অ্যাপ তৈরি করেছে। এস্কোবেদো বলেন, ব্যবহারকারীর কাছে এমন এক মোবাইল অ্যাপ থাকে, যা দিয়ে কার্বন ডাই-অক্সাইডের ঘনত্ব জানা যায়। মোবাইল পেমেন্টের জন্য যে এনএফসি প্রযুক্তি ব্যবহার করা হয়, সেটির সাহায্যেই মাস্কের কাছে থাকা স্মার্টফোন সজাগ হয়ে উঠে। স্মার্টফোন তখন স্টিকার চিনতে পারে এবং সিওটুর ঘনত্ব পড়ে নেয়। সেই অ্যাপ লাল বা সবুজ রঙের মাধ্যমে ব্যবহারকারীকে জানিয়ে দেয়, কখন তাজা বাতাস নেওয়া উচিত।

অনেক দেশেই মাস্ক পরা বাধ্যতামূলক না হলেও গবেষকরা নিশ্চিত যে, ইন্টেলিজেন্ট মাস্কের প্রয়োজন মোটেই ফুরিয়ে যায়নি। কারণ অনেক মানুষকে এখনো কর্মস্থলে মাস্ক পরতে হচ্ছে। সে কারণে এই টিম তাদের প্রযুক্তি যেকোনো ক্ষেত্রের জন্য উপযুক্ত করে তুলতে প্রস্তুত।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close