রাকিবুল হাসান, বাকৃবি

  ২৮ জুন, ২০২২

উচ্চফলনশীল সরিষার পাঁচ জাত উদ্ভাবন

বাকৃবি গবেষকদের সাফল্য

ছত্রাকজনিত অলটারনারিয়া ব্লাইট রোগ প্রতিরোধী এবং উচ্চফলনশীল পাঁচটি সরিষার জাত উদ্ভাবনে সফলতা পেয়েছেন বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বাকৃবি) গবেষক। পাঁচ বছরের গবেষণায় এ সাফল্য পেয়েছেন অধ্যাপক ড. আরিফ হাসান খান রবিন ও তার দল ।

উদ্ভাবিত সরিষার জাতগুলো হলো বাউ সরিষা-৪, বাউ সরিষা-৫, বাউ সরিষা-৬, বাউ সরিষা-৭ এবং বাউ সরিষা-৮। জাতগুলোর গড় ফলন হেক্টরপ্রতি ২ দশমিক ৫ টন, যা দেশে প্রচলিত অন্যান্য জাতের তুলনায় ৫০ থেকে ৮০ শতাংশ বেশি। জাতগুলো সারা দেশে চাষের উপযোগী এবং এগুলোর জীবনকাল ৯০ থেকে ৯৫ দিন। কৃষকরা এসব জাত চাষ করে প্রচলিত জাতের তুলনায় প্রায় দেড় থেকে দুই গুণ লভ্যাংশ আয় করতে পারবে। গতকাল সোমবার বেলা ১১টায় বাকৃবি সাংবাদিক সমিতির কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান গবেষক দলের প্রধান বাকৃবির কৌলিতত্ত্ব ও উদ্ভিদ প্রজনন বিভাগের অধ্যাপক ড. আরিফ হাসান খান রবিন।

গবেষক ড. রবিন জানান, দেশে সরিষা উৎপাদনের ক্ষেত্রে বড় বাধা হলো নানা রোগ ও পোকার আক্রমণ; যার মধ্যে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি হলো অলটারনারিয়া ব্লাইট রোগ। এটি একটি ছত্রাকজনিত রোগ। রোগটি এককভাবে তেলবীজের ফলন ৩০ থেকে ৫০ শতাংশ কমিয়ে দেয়। এমনকি কোনো কোনো ক্ষেত্রে জমির শতভাগ ফসল নষ্ট করে দেয়। নতুন উদ্ভাবিত জাতগুলো অলটারনারিয়া ব্লাইট রোগের প্রতি উচ্চমাত্রায় সহনশীল এবং প্রায় ৯৯ শতাংশ প্রতিরোধী। আগাম ও স্বল্প জীবনকালের আমন ধান চাষের পর একই জমিতে এই সরিষার জাতগুলো কৃষকরা চাষ করতে পারবে। বিগত তিন বছর ধরে বাংলাদেশ সরকারের শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অর্থায়নে প্রকল্পটির গবেষণা চলমান রয়েছে। গবেষণা প্রকল্পটির সঙ্গে উপদেষ্টা হিসেবে যুক্ত ছিলেন বাকৃবি উপাচার্য অধ্যাপক ড. লুৎফুল হাসান।

সরিষার উপকারিতা সম্পর্কে গবেষক বলেন, সরিষার তেলে মনোআনসেচুরেটেড এবং পলিআনসেচুরেটেড ফ্যাটি অ্যাসিড থাকায় রক্তে ভালো কোলেস্টেরলের মাত্রা বাড়িয়ে খারাপ কোলেস্টেরলের পরিমাণ কমিয়ে দেয়। এছাড়া ওমেগা-৩ এবং ওমেগা-৬ ফ্যাটি অ্যাসিডের একটি আদর্শ অনুপাত (২.৫ ঃ ১) থাকায় এটি স্বাস্থ্যের জন্য অতি উপকারী। এছাড়া সরিষার তেল হৃদরোগ ও ক্যান্সারের ঝুঁকি কমাতেও সাহায্য করে।

তিনি আরো জানান, উদ্ভাবিত জাত পাঁচটি ব্রাসিকা জুনসিয়া প্রজাতির অন্তর্ভুক্ত। জাতগুলো অতিরিক্ত আর্দ্রতাতেও ১০০ দিনের মধ্যে দানা পরিপক্ব হতে সক্ষম। দেশে বর্তমানে প্রায় ০.৩ মিলিয়ন হেক্টর জমিতে সরিষা চাষ হয়। পুষ্টিগুণ, স্বাদ ও ঝাঁঝের কারণে রসনাবিলাসের পাশাপাশি ভোজ্য তেলের চাহিদার একটি বড় অংশ পূরণ করছে সরিষা। সরিষার তেলবীজে জাতভেদে ৪০ থেকে ৪৫ শতাংশ তেল থাকে। এ উৎপাদন দেশের মোট চাহিদার মাত্র ১৫ থেকে ২০ শতাংশ পূরণ করছে। ভোজ্য তেল আমদানিতে বাংলাদেশকে প্রতি বছর ২ হাজার ১০০ মিলিয়ন ডলার বৈদেশিক মুদ্রা খরচ করতে হয়।

সরিষা জাতগুলো আবাদের মাধ্যমে দেশে ভোজ্য তেলের সংকট অনেকটাই কমিয়ে আনা সম্ভব বলে জানান গবেষক ড. রবিন।

অধ্যাপক ড. আরিফ হাসান খান রবিন নিউজিল্যান্ডের ম্যাসি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ২০১১ সালে ডক্টরেট ডিগ্রি অর্জন করেন। পরবর্তী সময়ে ২০১৫ থেকে ২০১৭ সাল পর্যন্ত দক্ষিণ কোরিয়ায় সুনচুন ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি থেকে পোস্ট ডক্টরেট গবেষণা সম্পন্ন করেন। বর্তমানে তিনি সরিষা, ধান, গম ও মিষ্টিআলুর উন্নত জাত উদ্ভাবন নিয়ে গবেষণা করছেন। অধ্যাপক রবিন বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ২০১৮, ২০২০ এবং ২০২২ সালে ‘সেরা প্রকাশনা অ্যাওয়ার্ড’ প্রাপ্ত হন। এছাড়া ২০২২ সালের বাউরেসের বার্ষিক গবেষণা অগ্রগতি কর্মশালায় সেরা ‘প্রবন্ধ উপস্থাপক’ অ্যাওয়ার্ড প্রাপ্ত হন।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close