প্রতিদিনের সংবাদ ডেস্ক

  ২৬ জুন, ২০২২

সারা দেশে আনন্দ উচ্ছ্বাস

স্বপ্নের পদ্মা সেতুর উদ্বোধন নিয়ে নানা আয়োজনে আনন্দে মেতেছে সারা দেশ। বিভিন্ন মহানগরীসহ দক্ষিণের জেলা-উপজেলায় শোভাযাত্রার আয়োজন করা হয়। এছাড়া প্রধানমন্ত্রীর উদ্বোধনী অনুষ্ঠান বড় পর্দায় দেখানোর ব্যবস্থা করা হয়। প্রতিনিধিদের পাঠানো রিপোর্ট :

খুলনা ব্যুরো : প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কর্তৃক পদ্মা সেতু উদ্বোধনের জাতীয় অনুষ্ঠানমালা খুলনা জেলা স্টেডিয়ামে বড় পর্দায় সরাসরি প্রদর্শন করা হয়। প্রধানমন্ত্রী কর্তৃক পদ্মা সেতু উদ্বোধনের সঙ্গে সঙ্গে খুলনায় নানা রঙের বেলুন উড়িয়ে মুহূর্তটি উদযাপন করা হয়। এ সময় উজ্জীবিত জনতার বাঁধভাঙ্গা উচ্ছ্বাস তৈরি হয়। সকালে খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশ-কেএমপি নগরীতে শোভাযাত্রা করে। এর উদ্বোধন করেন খুলনা সিটি করপোরেশনের মেয়র তালুকদার আবদুল খালেক। সদর থানা আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে শহীদ হাদিস পার্কে করা হয় মিষ্টি বিতরণ অনুষ্ঠানের। এসব অনুষ্ঠানে ছিল বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষের ঢল।

চট্টগ্রাম ব্যুরো : চট্টগ্রামে বিভিন্ন রাজনৈতিক, পেশাজীবী, আওয়ামী লীগ ও এর অঙ্গ সংগঠনগুলো আনন্দ মিছিল, সভা, শোকরিয়া মোনাজাতের আয়োজন করে। নগরীর বিভিন্ন মোড়ে সেতু উদ্বোধন উপলক্ষে টাঙানো হয় ব্যানার, ফেস্টুন ও প্ল্যাকার্ড। চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন কার্যালয়ে সকাল ৮টা থেকে কোরআনখানির আয়োজন করা হয়। সকাল ৯টায় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের মাধ্যমে দিনব্যাপী কর্মসূচি শুরু হয় কাজীর দেউড়ির ইন্টারন্যাশনাল কনভেনশন সেন্টারে। বড় পর্দায় দেখানো হয় সেতুর আনুষ্ঠানিক উদ্বোধনী কার্যক্রম। বেলা সাড়ে ১১টায় জামাল খান সড়কে চট্টগ্রামে সাংবাদিকদের বৃহৎ সংগঠন চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবে আয়োজন করা হয় আলোচনা সভা ও বিশেষ মোনাজাত। প্রেসক্লাব সভাপতি আলহাজ আলী আব্বাসের সভাপতিত্বে সভা, দোয়া ও শোকরানা মাহফিলে অংশ নেন সিনিয়র সহসভাপতি সালাহউদ্দিন মো. রেজা, সাধারণ সম্পাদক চৌধুরী ফরিদ, যুগ্ম সম্পাদক নজরুল ইসলামসহ বিপুলসংখ্যক সাংবাদিক।

চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশ : ‘আমার টাকায় আমার সেতু, বাংলাদেশের পদ্মা সেতু’ স্লোগানে চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের উদ্যোগে বর্ণিল শোভাযাত্রার আয়োজন করা হয়। গতকাল শনিবার সকাল সাড়ে ৮টায় বেলুন উড়িয়ে শোভাযাত্রা উদ্বোধন করেন চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার সালেহ্ মোহাম্মদ তানভীর। চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে এ উপলক্ষে নানা অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। এমএ আজিজ স্টেডিয়াম সংলগ্ন জিমনেসিয়াম চত্বরে সকালে নৃত্য পরিবেশেন করে জেলা শিল্পকলা একাডেমির শিশু শিল্পীরা।

আওয়ামী লীগ : নগরের পুরোনো রেলস্টেশনে বিকাল ৩টায় শুরু হয় আওয়ামী লীগের আলোচনা সভা। সভায় বক্তাদের আলোচনায় উঠে আসে পদ্মা সেতু নিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সফলতার কথা। চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ শহীদুল আলমের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন রাজনৈতিক, সামাজিক, পেশাজীবী নেতা, প্যানেল মেয়র, ওয়ার্ড কাউন্সিলর, সংরক্ষিত কাউন্সিলর, ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা-কর্মচারীসহ নগরীর সাধারণ জনগণ।

চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন : চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের উদ্যোগে মাওয়া ঘাট থেকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কর্তৃক পদ্মা সেতুর উদ্বোধন অনুষ্ঠান এলইডি স্ক্রিনের মাধ্যমে নগরীর বিভিন্ন স্পটে সরাসরি সম্প্রচার করা হয় এবং বিভিন্ন মোড়ে ব্যানার, পেস্টুনসহ এই আনন্দঘন মুহূর্তকে প্রাণবন্ত করতে ইন্টারন্যাশনাল কনভেনশন হলে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।

চবি : আনন্দ শোভাযাত্রার আয়োজন করেছেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় (চবি) কর্তৃপক্ষ। এতে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও বিভিন্ন দপ্তরের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা অংশগ্রহণ করেন। গতকাল দুপুর ১২টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের বিবিএ অনুষদ ভবনের সামনে থেকে শুরু হয়ে শোভাযাত্রাটি শহীদ মিনার ও জয় বাংলা চত্বর প্রদক্ষিণ করে বঙ্গবন্ধু স্মৃতি ম্যুরালে এসে শেষ হয়। শোভাযাত্রা শেষে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর ড. রবিউল হাসান ভূঁইয়ার সঞ্চালনায় উপাচার্য অধ্যাপক ড. শিরীণ আখতার সেখানে বক্তৃতা দেন। এ সময় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য অধ্যাপক বেনু কুমার দে, রেজিস্ট্রার (ভারপ্রাপ্ত) অধ্যাপক এস এম মনিরুল হাসান, শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক ড. সেলিনা আখতার, সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ড. সজীব কুমার ঘোষ ও প্রক্টরিয়াল বডির সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।

রাজশাহী ব্যুরো : রাজশাহীতে করা হয় বর্ণাঢ্য আয়োজন। গতকাল সকাল থেকে মহানগরীর কামারুজ্জামান চত্বর থেকে বাদ্য বাজিয়ে শুরু হয় বিশাল শোভাযাত্রা। শোভাযাত্রাটি নগরীর বিভিন্ন রাস্তা প্রদক্ষিণ করে রাজশাহী জেলা মুক্তিযোদ্ধা স্মৃতি স্টেডিয়ামে গিয়ে শেষ করে। এরপর স্টেডিয়ামে বড় পর্দায় সেতুর উদ্বোধন দেখার পাশাপাশি সবাই দোয়া অনুষ্ঠানে অংশ নেন। শোভাযাত্রায় রাজশাহী বিভাগীয় কমিশনার জি এস এম জাফরউল্লাহ (এনডিসি), রাজশাহী মেট্রোপলিটন পুলিশ (আরএমপি) কমিশনার মো. আবু কালাম সিদ্দিক, অতিরিক্ত ডেপুটি ইন্সপেক্টর জেনারেল (ডিআইজি) জয়দেব কুমার ভদ্র, জেলা প্রশাসক (ডিসি) আবদুল জলিল, পুলিশ সুপার (এসপি) এ বি এম মাসুদ হোসেন প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন। সেতু উদ্বোধনের পর ঐতিহাসিক এই ক্ষণে উপস্থিত রাজশাহী জেলা প্রশাসন, বিভাগীয় প্রশাসন, বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীসহ বিভিন্ন শ্রেণিপেশার মানুষ মিষ্টিমুখ করেন।

পদ্মা সেতুর উদ্বোধন উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে মেয়র লিটনের নির্দেশনায় যোগ দেন রাজশাহী সিটি করপোরেশনের (রাসিক) কাউন্সিলর, কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। এছাড়া পদ্মা সেতুর উদ্বোধন উপলক্ষে নগর ভবন বর্ণিল আলোকসজ্জায় সাজানো হয়। এছাড়াও প্রধানমন্ত্রীকে অভিনন্দন জানিয়ে নগর ভবনে ড্রপডাউন, সাহেব বাজার ও রেলস্টেশন এলাকায় টাঙানো হয় ব্যানার।

অন্যদিকে, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে (রাবি) শনিবার নানা আয়োজন অনুষ্ঠানের মধ্যে দিয়ে স্বপ্নের পদ্মা সেতুর উদ্বোধন উদযাপন করা হয়। এই উপলক্ষে এদিন সকাল ১০টা থেকে শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ সিনেট ভবনের উত্তর চত্বরে সংগীত বিভাগের উপস্থাপনায় পদ্মা সেতুর থিম সং ও শেখ রাসেল মডেল স্কুলের শিক্ষার্থীদের পরিচালনায় সংগীত পরিবেশন করা হয়। বেলা সাড়ে ১০টায় এক আনন্দ র‌্যালি রাবি ক্যাম্পাস প্রদক্ষিণ করে।

শরীয়তপুর : সকাল সাড়ে ৯টায় জেলা সদরের চৌরঙ্গীর বঙ্গবন্ধু ম্যুরাল চত্বর থেকে আনন্দ র‌্যালি বের হয়ে শরীয়তপুর জেলা শহরের প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ করে।

র‌্যালিতে জেলা প্রশাসনসহ জেলা পরিষদ, এলজিইডি, গণপূর্ত, সড়ক ও জনপথ, পিটিআই, টিটিসিসহ জেলাপর্যায়ের বিভিন্ন দপ্তরের কর্মকর্তা-কর্মচারী, এনজিও প্রতিনিধি, বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষক-শিক্ষার্থী অংশগ্রহণ করে। এছাড়াও অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক, সিভিল সার্জন, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক, এলজিইডির নির্বাহী প্রকৌশলী, মুক্তিযোদ্ধা, ইসলামিক ফাউন্ডেশনের ডিডিসহ বিভিন্ন পেশার প্রতিনিধিরা অংশগ্রহণ করেন।

কলারোয়া (সাতক্ষীরা) : সাতক্ষীরার কলারোয়ায় বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রা করেছে থানা পুলিশ। ‘আমার টাকায় আমার সেতু, বাংলাদেশের পদ্মা সেতু’ শীর্ষক স্লোগানে কলারোয়া থানা চত্বর থেকে শুরু করে শোভাযাত্রাটি উপজেলা সদরের গুরুত্বপূর্ণ সড়ক প্রদক্ষিণ করে। এতে নেতৃত্ব দেন থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) নাসির উদ্দীন মৃধা।

মালদ্বীপ প্রতিনিধি : মালদ্বীপে অবস্থিত বাংলাদেশ হাইকমিশন অফিসে ব্যাপক উৎসাহ ও উদ্দীপনার মধ্য দিয়ে পদ্মা সেতুর জাঁকালো উদ্বোধন উদযাপন করা হয়েছে। গতকাল মালদ্বীপের বাংলাদেশ হাইকমিশন এ তথ্য জানায়। অনুষ্ঠানের শুরুতেই উদ্বোধন অনুষ্ঠানটি সরাসরি প্রদর্শন করা হয়।

ঝিনাইদহ : ঝিনাইদহ জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে শনিবার সকালে শহরের প্রেরণা একাত্তর চত্বর থেকে শোভাযাত্রা বের করা হয়। এতে সরকারি বিভিন্ন দপ্তরসহ সামাজিক সংগঠন অংশ নেয়। শোভাযাত্রাটি শহরের বিভিন্ন সড়ক ঘুরে পুরাতন ডিসি কোর্ট চত্বরে এসে শেষ হয়। পরে পুরাতন ডিসি মুক্তমঞ্চে আলোচনা অনুষ্ঠিত হয়। অনুষ্ঠানে ঝিনাইদহ জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও শৈলকুপা-১ আসনের সংসদ সদস্য আবদুল হাই, জেলা প্রশাসক মনিরা বেগম, পুলিশ সুপার মুনতাসিরুল ইসলাম, জেলা পরিষদের প্রশাসক কনক কান্তি দাস, জেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সাবেক কমান্ডার মকবুল হোসেনসহ অন্যরা বক্তব্য রাখেন। এছাড়াও দিনভর নানা অনুষ্ঠানমালা, আতশবাজি উৎসব, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানসহ নানা কর্মসূচির মধ্য দিয়ে পালিত হচ্ছে উদ্বোধনী অনুষ্ঠান।

স্বপ্নের পদ্মাসেতুর আদলে ঝিনাইদহে তৈরি করা হয়েছে প্রতীকী পদ্মা সেতু। মূল সেতুর উদ্বোধন উপলক্ষে শহরের পায়রা চত্বরে জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সাইদুল করিম মিন্টুর উদ্যোগে প্রতীকী এই সেতু নির্মাণ করা হয়।

ফরিদপুর পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের বর্ণাঢ্য র‌্যালি

ফরিদপুর : পদ্মা সেতুর উদ্বোধনকে স্মরণীয় করে রাখতে ফরিদপুর পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের আয়োজনে এক বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রা বের হয়। র‌্যালির উদ্বোধন করেন ইনস্টিটিউটের অধ্যক্ষ প্রকৌশলী মো. আককাছ আলী সেখ। এ সময় উপস্থিত ছিলেন এস এম ইসহাক, মো. শাহ্ সেকেন্দার, মো. মুজিবুর রহমান, মোহাম্মদ রেজাউল করিম, মো. আনোয়ার হোসেন প্রমুখ। শোভাযাত্রায় স্বপ্নের পদ্মা সেতু, বঙ্গবন্ধু ও প্রধানমন্ত্রীর ছবি সংবলিত ব্যানার, ফেস্টুন ও প্ল্যাকার্ড শোভা পায়। ইনস্টিটিউট থেকে বের হওয়া র‌্যালিটি শহরের গুরুত্বপূর্ণ সড়ক প্রদক্ষিণ করে জেলা প্রশাসকের কার্যালয় হয়ে শেখ জামাল স্টেডিয়ামে গিয়ে শেষ হয়।

সাইকেল চালিয়ে স্বপ্নের পদ্মা সেতুতে ১১ কিশোর : উদ্বোধনের পর সেতু দেখতে গোপালগঞ্জের মুকসুদপুর থেকে সাইকেল চালিয়ে রওনা হয় ১১ কিশোর। প্রায় ৫২ কিলোমিটার সাইকেল চালিয়ে দুপুর পৌনে ২টার দিকে জাজিরার কাছে পৌঁছায় তারা। পদ্মা সেতুর ৮ কিলোমিটার আগে পাচ্চর এলাকায় তারা যখন পৌঁছায়, সে সময় বৃষ্টি শুরু হয়। তবুও থামেনি তারা। এই ১১ জন মুকসুদপুরের দিকনগর উচ্চবিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী। দলের নেতৃত্ব দেওয়া দশম শ্রেণির শিক্ষার্থী মো. ফরহাদ শেখ জানায়, শনিবার সকাল ৮টার দিকে তারা দিকনগর থেকে রওনা হয়। দলের অপর সদস্য হৃদয় মোল্লা বলে, ‘যে দিন শুনেছি ২৫ জুন স্বপ্নের পদ্মা সেতু উদ্বোধন হবে, সে দিনই আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি যে আমরা ২৫ জুন সেতু দেখতে যাব।’

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close