প্রতিদিনের সংবাদ ডেস্ক
সেতুর উদ্বোধন
আনন্দের জোয়ারে ভাসছে দেশ
স্বপ্নের পদ্মা সেতুর উদ্বোধন আজ। এ নিয়ে সারা দেশে বইছে আনন্দের জোয়ার। চলছে শোভাযাত্রা, সবখানেই উৎসবের আমেজ। শস্যভাণ্ডারখ্যাত ঝিনাইদহের মানুষের মাঝেও আবেগ, উচ্ছ্বাস, উত্তেজনার ঢেউ বয়ে যাচ্ছে। পটুয়াখালীতে তিন দিনব্যাপী নানা অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে। নওগাঁয় আম বেচাকেনা বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নেওয়া। খুলনার তিনটি পয়েন্টে বড় পর্দায় সরাসরি সম্প্রচার হবে পদ্মা সেতু উদ্বোধন অনুষ্ঠান। প্রতিনিধিদের পাঠানো খবর-
খুলনা : খুলনার জেলা স্টেডিয়াম, দৌলতপুর ও শিববাড়ী মোড় এই তিনটি পয়েন্টে বড় পর্দায় সরাসরি সম্প্রচার করা হবে পদ্মা সেতুর উদ্বোধন অনুষ্ঠান। এ ছাড়াও এ উপলক্ষে নগরীতে বর্ণিল আলোকসজ্জা, বিশেষ ভিডিও চিত্র প্রদর্শনী, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, পট গান এবং খুলনার আকাশকে বর্ণিল রঙে ও শব্দ তরঙ্গে সাজাতে আতশবাজি ফুটানো ও নান্দনিক লেজার-শোর আয়োজন করা হয়েছে। গতকাল শুক্রবার দুপুরে জেলা প্রশাসকের সম্মেলনকক্ষে অনুষ্ঠিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এসব তথ্য জানানো হয়। ব্রিফ করেন খুলনার জেলা প্রশাসক মো. মনিরুজ্জামান তালুকদার।
প্রেস ব্রিফিংয়ে জেলা প্রশাসক বলেন, পদ্মা সেতু নির্মাণের অনন্য ইতিহাস ও উদ্বোধন অনুষ্ঠানের মাহেন্দ্রক্ষণের সঙ্গে সবাইকে সম্পৃক্ত করতে খুলনা জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছে। উদ্বোধনের আনন্দবার্তা সবার মাঝে ছড়িয়ে দিতে গত বৃহস্পতিবার সকাল থেকে দুটি সুসজ্জিত প্রচার ভ্যানে পদ্মা সেতু উপর নির্মিত থিম সং এবং পদ্মা সেতু প্রোমোশনাল অডিও সম্প্রচার করা হচ্ছে। এ উপলক্ষে খুলনা মহানগরী ও সারা জেলায় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান আয়োজনের পোস্টার বিতরণ ও টানানো হয়েছে। খুলনাকে আলোয় উদ্ভাসিত করতে বিভিন্ন সরকারি দপ্তর ও গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনায় থাকছে বর্ণিল আলোকসজ্জা। পদ্মা সেতুকে উপজীব্য করে নির্মিত বিশেষ ভিডিও চিত্র প্রদর্শিত হচ্ছে খুলনা জেলা প্রশাসকের কার্যালয়, খুলনা রেলওয়ে স্টেশন এবং ডাক বিভাগীয় কার্যালয়ের এলইডি স্ক্রিনে।
ঝিনাইদহ : শস্য ভাণ্ডার খ্যাত ঝিনাইদহের অন্যান্য শ্রেণি-পেশার মানুষের মতো কৃষক ও কৃষিপণ্য ব্যবসায়ীরাও উচ্ছ্বসিত। এ জেলার উৎপাদিত খাদ্যপণ্য, শাক-সবজি, মাছ, মুরগী, দুধ, ডিম এখন সরাসরি রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন প্রান্তে পৌঁছে যাবে মাত্র কয়েক ঘণ্টার মধ্যে। উৎপাদিত ফসলের ন্যায্য মূল্য পাবেন চাষিরা। তাই পদ্মা সেতু আমাদের কৃষকের আশা ও সচ্ছলতার প্রতীক।
পদ্মা সেতু নির্মাণ, উদ্বোধন ও এর প্রভাবই এ অঞ্চলের মানুষের এখন প্রধান আলোচ্য বিষয়। হাটে-বাজারে, পাড়া-মহল্লায়, মাঠে-ঘাটে, পথে-প্রান্তরে, স্কুল-কলেজে, অফিস-আদালত থেকে শুরু করে, গ্রামীণ সড়কের পাশের চায়ের দোকানেও সব আলোচনাকে ছাপিয়ে প্রাধান্য পাচ্ছে স্বপ্নের পদ্মা সেতু। ব্যবসায়ী আবদুস সালাম বলেন, পদ্মা সেতু চালু হলে দ্রুত ও সহজে রাজধানীসহ সব দেশে যাতায়াত করা যাবে। ফলে ফড়িয়া ও ব্যাপারী বা মধ্য স্বত্বভোগীদের হাতে বন্দিদশা থেকে চাষিরা রেহাই পাবে।
হরিণাকুণ্ডু উপজেলা চেয়ারম্যান মো. জাহাঙ্গীর হোসাইন বলেন, ঝিনাইদহ পানের জন্য বিখ্যাত। সারা দেশে এ জেলার পানের খ্যাতি ও সুনাম রয়েছে। পদ্মা সেতুর ফলে পান চাষিরা তাদের পানের ন্যায্য মূল্য পাবেন। পরিবেশকর্মী মাসুদ আহমেদ সনজু বলেন, পদ্মা সেতু ঝিনাইদহ তথা দক্ষিণাঞ্চলের বিনিয়োগ ব্যবস্থার দ্বার খুলে দিয়েছে। এতে সৃষ্টি হবে কর্মসংস্থান।
পটুয়াখালী : পদ্মা সেতু উদ্বোধন উৎসব নানা আয়োজনে উদযাপন করছে জেলা প্রশাসন। উৎসব উপলক্ষে গতকাল শুক্রবার সন্ধ্যায় শেখ রাসেল শিশুপার্ক সংলগ্ন স্বাধীনতা চত্বরে স্থানীয় শিল্পীদের পরিবেশনায় পরিবেশিত হচ্ছে মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। আজ শনিবার সকাল ৯টায় শহীদ আলাউদ্দিন শিশুপার্ক থেকে পদ্মা সেতু উদ্বোধন উৎসবে নানা রং-বেরঙে সজ্জিত হয়ে একটি বর্ণাঢ্য আনন্দ শোভাযাত্রা বের হয়ে শহরের বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করে শেখ রাসেল শিশুপার্ক সংলগ্ন স্বাধীনতা চত্বরে এসে শেষ হবে। সকাল ১০টায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কর্তৃক উদ্বোধনী অনুষ্ঠান প্রজেক্টেরের মাধ্যম প্রদর্শন করা হবে। বিকাল সাড়ে ৪টায় শেখ রাসেল শিশুপার্ক সংলগ্ন স্বাধীনতা চত্বরে বিজয় স্মারক পদ্মা সেতু উদ্বোধন উৎসব উপলক্ষে জেলা প্রশাসক মোহাম্মাদ কামাল হোসেনের সভাপতিত্বে এক আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হবে। সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায় রাখাইন ও স্থানীয় শিল্পীদের পরিবেশনায় পরিবেশিত হচ্ছে মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। রাত ৯টায় সার্কিট হাউস পুকুরে পদ্মা সেতুর আদলে ব্রিজ আলোকসজ্জা এবং বর্ণিল আতজবাজি প্রদর্শন। ২৬ জুন সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায় পটুয়াখালী পৌরসভার আয়োজনে শেখ রাসেল শিশুপার্ক সংলগ্ন স্বাধীনতা চত্বরে দেশ বরেণ্য শিল্পীদের অংশগ্রহণে কনসার্ট অনুষ্ঠিত হবে।
নওগাঁ : আজ নওগাঁর সাপাহারে আম বেচাকেনা বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। সাপাহার উপজেলা আম আড়ত ব্যবসায়ী সমিতির পক্ষ থেকে এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। তাই আমচাষিরা গাছ থেকে আম পেড়ে বাজারে নিয়ে না আসে এই জন্য উপজেলা জুড়ে মাইকিং করা হচ্ছে। এদিন উপজেলা থেকে বিভিন্ন মহলের উদ্যোগে আনন্দ শোভাযাত্রা বের হবে। এ বিষয়ে সাপাহার আম আড়ত ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি কার্তিক সাহা বলেন, আমের মৌসুমে এমনিতেই প্রতিদিন রাস্তায় প্রচুর যানজট থাকে। এর মধ্যে আনন্দ মিছিল হলে বিড়ম্বনা আরো বাড়তে পারে। এ কারণে খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদার, স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতারা, আমচাষি ও ব্যবসায়ীসহ বিভিন্ন মহলকে ডেকে এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
"