নিজস্ব প্রতিবেদক

  ২৪ জুন, ২০২২

গবেষণা তথ্য

বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় জগাখিচুড়ি রাজধানীবাসী হুমকিতে

কঠিন বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় জগাখিচুড়ি অবস্থার কারণে ব্যস্ত নগরী রাজধানীর বাসিন্দাদের প্রাণ আজ হুমকিতে। কারণ গবেষণা সংস্থা স্টাডির এক প্রতিবেদনে দেখা গেছে, ছোট এই শহরে দৈনিক প্রায় ছয় হাজার টন বর্জ্য তৈরি হয়। এসব বর্জ্যরে ৩৫ শতাংশই নগরের আশপাশের রাস্তা, খাল, বিল, জলাধার ও নিম্নাঞ্চলে পড়ে থাকে। ফলে নগরীতে তৈরি হচ্ছে ভয়াবহ দূষণ। এ দূষণ থেকেই পানিবাহিত রোগসহ নানাবিধ রোগে আক্রান্ত হচ্ছে মানুষ। এ থেকে পরিত্রাণের জন্য বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের তদারকি বাড়ানোর সুপারিশ জানানো হয়েছে।

গতকাল বৃহস্পতিবার জাতীয় প্রেস ক্লাবে ঢাকা কলিং প্রকল্প আয়োজিত ‘কঠিন বর্জ্য ব্যবস্থাপনা : প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর স্বাস্থ্যগত প্রভাব’ শীর্ষক সংবাদ সম্মেলনে অংশ নেওয়া প্রতিনিধিরা এসব তথ্য তুলে ধরেন।

স্টাডি রিপোর্টে বলা হয়, স্বাধীনতা অর্জনের বছরে ঢাকা শহরে জনসংখ্যা ছিল ১৫ লাখ; বর্তমানে তা বেড়ে দুই কোটি দাঁড়িয়েছে। অথচ ইউনিসেফের গবেষণা বলছে, ঢাকার পাঁচ হাজারেরও বেশি বস্তিতে প্রায় ৪০ লাখেরও বেশি লোক বসবাস করলেও তাদের এখনো আমরা অন্তর্ভুক্তিমূলক বর্জ্য ব্যবস্থাপনার আওতায় আনতে পারিনি। ফলে দীর্ঘ মেয়াদে তারা শারীরিক, মানসিক, আর্থিক ও সামাজিকভাবে মারাত্মক ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছে এবং নগরবাসীর জনস্বাস্থ্যকেও হুমকির মুখে ফেলছে।

কারণ নিম্নআয়ের এলাকার প্রায় ৩৪ শতাংশ মানুষ নোংরা পরিবেশের কারণে এ ধরনের রোগে আক্রান্ত হন। এসব এলাকার প্রায় ২৭ শতাংশ মানুষ ময়লা পানির জন্য এবং প্রায় ১৯ শতাংশ জলাবদ্ধতার কারণে এ ধরনের রোগে আক্রান্ত হতে পারে বলে গবেষণায় ওঠে এসেছে।

রিপোর্টে আরো বলা হয়, প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর বসবাসরত এলাকায় বর্জ্য ব্যবস্থাপনার জন্য সরকারিভাবে উদ্যোগের ঘাটতি সুস্পষ্ট। কঠিন বর্জ্যরে অব্যবস্থাপনার জন্য যেসব কারণগুলোকে স্টাডিতে দায়ী করা হয় তার মধ্যে প্রধান হচ্ছে- পরিচ্ছন্নতাকর্মীদের তদারকি ও জবাবদিহির অভাব, উচ্চ সেবা মূল্য, পরিবেশ ধ্বংস ও দূষণের তদারকির অভাব, অপরিকল্পিত ও অপ্রতুল পয়ঃব্যবস্থা, ড্রেন ও পানি নিষ্কাশনের অভাব, সরাসরি সেকেন্ডারি ট্রান্সফার স্টেশন (এসটিএস) ব্যবহার করতে না পারা, এসটিএসের অব্যবস্থাপনা, অধিবাসীদের সচেতনতা বৃদ্ধির কার্যক্রমের অভাব, জটিল অভিযোগ গ্রহণ এবং নিষ্পত্তি ব্যবস্থা এবং সিটি করপোরেশনের অসম্পৃক্ততা।

সংবাদ সম্মেলনে জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ডা. লেনিন চৌধুরী বলেন, এই গবেষণা বর্জ্য ব্যবস্থাপনার সঙ্গে স্বাস্থ্যের সম্পর্ক নিয়ে আরো ব্যাপক গবেষণার পথকে উন্মোচিত করেছে। বর্জ্য ব্যবস্থাপনার জন্য পর্যাপ্ত বাজেট সরকারের বরাদ্দে রাখা উচিত। মিথেন গ্যাস নিঃসরণের মাধ্যমে বর্জ্যরে অব্যবস্থাপনা জলবায়ু পরিবর্তনেও ভূমিকা রাখছে। বর্জ্যরে অব্যবস্থাপনা একটি চক্রের মাধ্যমে খাদ্য প্রণালি হয়ে আমাদের শরীরেও ঢুকে যাচ্ছে। অসংক্রামক ব্যাধি সেই চক্রের মাধ্যমে সংক্রামক ব্যাধিতে রূপ নিচ্ছে।

সংবাদ সম্মেলনটি ইউএসএআইডির অর্থায়নে কাউন্টারপার্ট ইন্টারন্যাশনালের কারিগরি সহযোগিতায় প্রমোটিং অ্যাডভোকেসি অ্যান্ড রাইটস প্রকল্পে আওতায় ঢাকা কলিং প্রকল্পের অধীনে আয়োজন করা হয়েছে। প্রকল্পটি বাস্তবায়ন দুস্থ স্বাস্থ্যকেন্দ্র (ডিএসকে), বাংলাদেশ রিসোর্স সেন্টার ফর ইন্ডিজেনাস নলেজ (বারসিক), কোয়ালিশন ফর দ্য আরবান পুওর (কাপ) এবং ইনসাইটসের সমন্বয়ে বাস্তবায়ন করা হচ্ছে।

সংবাদ সম্মেলনটি সঞ্চালনা করেন, সানজিদা জাহান আশরাফী, কনসোর্টিয়াম কো-অর্ডিনেটর, ডিএসকে এবং সম্মেলনে স্বাগত বক্তব্য দেন খোন্দকার রেবেকা সান-ইয়াত, নির্বাহী পরিচালক, কোয়ালিশন ফর দ্য আরবান পুওর (কাপ) এবং ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন জনাব এমএহাকিম, পরিচালক-ওয়াশ, ডিএসকে। তা ছাড়া সম্মেলনে আরো উপস্থিত ছিলেন কাউন্টাপার্ট ইন্টারন্যাশনালের টিফ অব পার্টি মাইনউদ্দিন আহমেদ।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close