নিজস্ব প্রতিবেদক

  ২৪ জুন, ২০২২

পানিবণ্টনের আশা ধূসর তাগিদ ভিন্ন পথ খোঁজার

বাংলাদেশের পক্ষ থেকে বারবার তাগিদ দিলেও ভারতের অনীহায় গত ১১ বছর ধরে আটকে আছে যৌথ নদী কমিশনের বৈঠক। ফলে অভিন্ন নদীর পানিবণ্টন নিয়ে সব আশা ক্রমেই ধূসর হচ্ছে। তবে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ভারতের কেন্দ্র ও রাজ্য সরকারের দূরত্বের ফলে অচিরেই মিলবে না সমাধান। তিস্তাসহ অন্য নদীর পানিবণ্টন নিশ্চিতের জন্য প্রয়োজন চীনসহ কয়েকটি দেশ নিয়ে ভিন্ন পথ খোঁজার।

গত ৩০ মের জেসিসি সম্মেলন শেষ মুহূর্তে পিছিয়ে ১৮ থেকে ১৯ জুন তারিখ ধার্য করেন ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর-বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আবদুল মোমেন। এ বৈঠকের উদ্দেশ্য ছিল দীর্ঘদিন ধরে আটকে থাকা যৌথ নদী কমিশনের বিষয়টি সেরে ফেলা। তবে ৩ সপ্তাহ সময় পেলেও তা হয়নি শেষমেশ দিল্লিতে জেসিসি বৈঠক অংশ নিতে যান পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আবদুল মোমেন।

দেশে ফিরে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হন বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী। বারবার তাগিদের পরও জেআরসি বৈঠকে ভারতের অনাগ্রহের বিষয়টি আবারও উঠে আসে তার কথায়।

এর এক দিন পর ঢাকায় এক অনুষ্ঠানে ভারতীয় হাইকমিশনার বিক্রম কুমার দোরাইস্বামী বলেন, রাজ্যসরকারকে পাশ কাটিয়ে সদিচ্ছার প্রতিফলন ঘটাতে পারছে না কেন্দ্রীয় সরকার।

২০১০ সালে দিল্লিতে পানিসম্পদমন্ত্রী পর্যায়ের সর্বশেষ জেআরসি বৈঠক হয়েছিল। পরবর্তী বছর ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংয়ের ঢাকা সফরকালে তিস্তার পানিবণ্টন চুক্তি সই হওয়া কথা ছিল; কিন্তু পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জির আপত্তির কারণে শেষ মুহূর্তে তা বাতিল হয়ে যায়। তিস্তা চুক্তি নিয়ে ভারতের কেন্দ্রীয় সরকার বারবার বাংলাদেশকে আশ্বস্ত করলেও মমতা এখনো আগের অবস্থানেই আছেন। আর গত ১১ বছর ধরে বাংলাদেশ বারবার জেআরসি বৈঠকের অনুরোধ জানালেও ভারতের কাছ থেকে এ ব্যাপারে কোনো ইতিবাচক সাড়া পাওয়া যায়নি।

এ ব্যাপারে সাংবাদিকদের পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, জেসিসি বৈঠকে সীমান্ত ব্যবস্থাপনা, অভিন্ন নদীর পানিবণ্টন ও জ্বালানি নিরাপত্তাসহ সার্বিক দ্বিপক্ষীয় ইস্যুতে আলোচনা হবে। জেসিসির আগে আমরা জেআরসি বৈঠক চেয়েছিলাম। গত মাসে আসামে ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রীকে আমি বলেছিলাম জেআরসি করার জন্য; কিন্তু সেটি হয়নি। এজন্য তারা প্রস্তুত নয় বলে জানিয়েছে।

গত ২৮ ও ২৯ মে আসামের রাজধানী গৌহাটিতে ভারতের বেসরকারি সংস্থার আয়োজনে নদী সম্মেলন হয়। সম্মেলনের সাইডলাইনে ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্করের সঙ্গে ড. মোমেনের বৈঠক হয়েছিল। নদী সম্মেলন শেষে আসাম থেকেই দিল্লিতে জেসিসি বৈঠকে যোগ দেওয়ার কথা ছিল দুই পররাষ্ট্রমন্ত্রীর; কিন্তু শেষ মুহূর্তে তা বাতিল করে ঢাকায় ফিরে আসেন ড. মোমেন।

আর আসাম থেকে ফিরে ৩০ মে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে সাংবাদিকদের ড. মোমেন বলেন, জেআরসি বৈঠক অনুষ্ঠানের জন্য বাংলাদেশ বহু দিন ধরে ভারতকে তাগাদা দিয়ে আসছে; কিন্তু ইতিবাচক সাড়া পাওয়া যাচ্ছে না। অন্য দিকে চট্টগ্রাম ও মোংলা বন্দর ব্যবহারের জন্য ভারতের সঙ্গে বহু আগেই চুক্তি সই হয়েছে; কিন্তু এখনো কাজটা শুরু হয়নি। দুই দেশের মধ্যে এ ধরনের কত সিদ্ধান্ত হয়েছে; কিন্তু বাস্তবায়ন হয়নি। আসন্ন জেসিসি বৈঠকে এসব ইস্যু সুরাহার জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষগুলো তাগাদা দেওয়া হবে।

আসামে অবস্থানকালে এনডিটিভিকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে ড. মোমেন বলেছেন, ১১ বছরেও ভারতের সঙ্গে তিস্তার পানিবণ্টন চুক্তি করতে না পারাটা দুর্ভাগ্যজনক, লজ্জাজনক। এই চুক্তির জন্য ঢাকা প্রস্তুত রয়েছে, দিল্লিও প্রস্তুত রয়েছে। তারপরও চুক্তিটা সই হচ্ছে না। ভবিষ্যতে পানি নিয়ে বড় ধরনের সঙ্কট সৃষ্টি হবে। এজন্য আমাদের প্রস্তুত থাকতে হবে।

কূটনীতিক ও বিশ্লেষকরা বলছেন, কেন্দ্র রাজ্যকে ঢাল হিসেবে ব্যবহার করছে কি না? সেটিও ভেবে দেখার সময় এসেছে আমাদের।

সাবেক পররাষ্ট্র সচিব ওয়ালিউর রহমান সম্প্রতি বলেন, কেন্দ্রে এক সরকার আর তৃণমূলে এক সরকার, তাদের আচরণ দেখে মনে হয় না যে, তাদের মধ্যে ভালো সম্পর্ক আছে। সেখানে আমি মনে করি, বর্তমানে বা অদূর ভবিষ্যতে তাদের মধ্যে ভালো সম্পর্ক হবে এবং আমাদের এই পানিবণ্টন ইস্যু সমাধান হবে। আমার মনে হয়, দ্বিতীয় পন্থা খুঁজে বের করতে হবে।

সমাধানের উপায়ও বলছেন কেউ কেউ। ভারতের সাড়া না পাওয়ায় চীন ও নেপালকে সঙ্গে নিয়ে বহু দেশীয় রিভার বেসিন রেজিমের উদ্যোগ নেওয়ার কথাও বলা হচ্ছে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক বিভাগের অধ্যাপক ইমতিয়াজ আহমেদ বলেন, যৌথ নদী কমিশন না বরং বেসিন রিভার কমিশন করা প্রয়োজন। নেপাল, ভুটান এমনকি চীনকে নিয়ে আসা দরকার। পুরো রিভার বেসিন রেজিমকে নিয়ে যখন চিন্তাভাবনা করা হবে তখন পরিবর্তনটা হবে।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close