নিজস্ব প্রতিবেদক

  ২৩ জুন, ২০২২

বন্যাকবলিত এলাকায় মৃত্যু বেড়ে ৪২

বন্যাকবলিত এলাকাগুলোতে সাপের কামড়, পানিতে ডুবে, ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়ে এবং আঘাতজনিতসহ বিবিধ কারণে ৪২ জনের মৃত্যু হয়েছে। এদের মধ্যে শুধু সিলেট বিভাগে ২১ ও ময়মনসিংহ বিভাগে ১৮ জনের মৃত্যু হয়েছে। বন্যা পরিস্থিতি নিয়ে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টার ও কন্ট্রোল রুম থেকে গতকাল বুধবার বিকালে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়। এত বলা হয়েছে, ১৭ মে থেকে বুধবার দুপুর পর্যন্ত বন্যাকবলিত এলাকায় বন্যাসৃষ্ট দুর্ঘটনা এবং বিভিন্ন রোগে ৪২ জনের মৃত্যু হয়েছে। আর মঙ্গলবার পর্যন্ত বন্যাজনিত বিভিন্ন রোগে ২ হাজার ৯৩৪ জন আক্রান্ত থাকলেও বুধবার তা বেড়ে ৩ হাজার ৪০৩ জনে দাঁড়িয়েছে।

বন্যার শুরু থেকে এ পর্যন্ত দেশে ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়েছেন ২ হাজার ৫১৬ জন। তবে এখন পর্যন্ত এই রোগে মৃত্যুর সংবাদ দেয়নি স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। আরটিআই (চোখের রোগ) রোগে আক্রান্ত হয়েছেন ১১৩ জন। এক্ষেত্রেও কারো মৃত্যুর খবর নেই।

বজ্রপাতে আক্রান্ত হয়েছে ১৩ জন, যাদের মধ্যে ১২ জনেরই মৃত্যু হয়েছে। সাপের দংশনের শিকার হয়েছেন চারজন। তাদের মধ্যে একজনের মৃত্যু হয়েছে। পানিতে ডুবে মৃত্যু হয়েছে ২৩ জনের।

বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, ১৭ মে থেকে ২২ জুন পর্যন্ত বন্যায় রংপুর বিভাগে তিন, ময়মনসিংহ বিভাগে ১৮ ও সিলেট বিভাগে ২১ জনসহ মোট ৪২ জনের মৃত্যু হয়েছে।

জেলাভিত্তিক মৃত্যুর সংখ্যায় শীর্ষে রয়েছে সিলেট। ১৭ মে থেকে ২১ জুনের মধ্যে এখানে ১৩ জনের মৃত্যু হয়। সুনামগঞ্জ, ময়মনসিংহ, নেত্রকোনা ও জামালপুর জেলায় মৃত্যু হয়েছে পাঁচজন করে। এছাড়া গাইবান্ধা ও শেরপুরে তিনজন করে এবং কুড়িগ্রামে দুইজন ও লালমনিরহাটে একজন মারা গেছেন।

এদিকে বন্যায় স্মরণকালের ভয়াবহ পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে সুনামগঞ্জে। জেলার শতভাগ মানুষই পানিবন্দি। তীব্র হচ্ছে খাবার ও নিরাপদ পানি সংকট। পুরো সিলেট অঞ্চলই বানের পানিতে ভাসছে।

এছাড়াও এক সপ্তাহ ধরে তীব্র বেগে পানি ঢুকছে সুনামগঞ্জের ছাতকে। ভারতের চেরাপুঞ্জিতে রেকর্ড বৃষ্টিপাতের পানি বাঁধ উপচে লোকালয়ে প্রবেশ করায় সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত এই উপজেলা। সড়ক ও রেললাইন বিধ্বস্ত হয়ে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। বানের তোড়ে ভেসে গেছে বাড়িঘর।

হবিগঞ্জেও বন্যা পরিস্থিতির দ্রুত অবনতি ঘটছে। পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন জেলার ৩ লক্ষাধিক মানুষ। এতে চরম দুর্ভোগে পড়েছেন বানভাসিরা। দেখা দিয়েছে বিশুদ্ধ পানি ও খাবার সংকট। কুশিয়ারা নদীর পানি উপচে আজমিরীগঞ্জ বাজারের নিচু এলাকায় প্রবেশ করেছে। তলিয়ে গেছে দোকানপাট ও অর্ধশতাধিক বাড়িঘর। এছাড়া মৌলভীবাজার জেলার সাত উপজেলার আড়াই লাখ মানুষ পানিবন্দি অবস্থায় রয়েছেন। বন্যাকবলিত এলাকায় নিরাপদ পানির তীব্র সংকট দেখা দিয়েছে। সিলেট বিভাগের অন্তত ৩০টি উপজেলার মানুষ ভয়াবহ বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

পানি বেড়ে যাওয়ায় উৎকণ্ঠার মাঝে রয়েছেন নদীর চরাঞ্চলের কৃষকরা। এরই মধ্যে বিভিন্ন এলাকায় চর ডুবে যাওয়ায় ফসলের ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। নিচু এলাকার বাড়িঘরে প্রবেশ করছে পানি। দুর্গাপুর উত্তর ইউনিয়নের জেলেপাড়া এলাকায় গোমতীর আইলে ফাটল দেখা দিচ্ছে। এলাকার মানুষের মাঝে আতঙ্ক বিরাজ করছে। অঘটন রোধে পানি উন্নয়ন বোর্ড সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে কাজ করছে।

এদিকে থৈ থৈ পানিতে ভাসছে কুড়িগ্রাম ও গাইবান্ধা। তলিয়ে গেছে রংপুর, নীলফামারী ও লালমনিরহাটের নিম্নাঞ্চল। দুর্ভোগে লাখ লাখ মানুষ। ত্রাণ সহায়তার দাবি জানিয়েছেন দুর্গতরা। প্রবল স্রোতে লোকালয়ে ঢুকছে পানি। ঘরবাড়ি তলিয়ে অসহায় রংপুর অঞ্চলের পাঁচ জেলার মানুষ।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close