রাজশাহী ব্যুরো

  ২১ জুন, ২০২২

অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের অভিযোগ ছাত্রীর

এবারও কি পার পেয়ে যাবে ন্যাশনাল ট্রাভেলস

জাতীয় ভোক্তা সংরক্ষণ অধিদপ্তরে জানিয়েও মেলেনি প্রতিকার

যাত্রীসেবার নামে দীর্ঘদিন ধরেই অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের মাধ্যমে লাখ লাখ টাকা আত্মসাতের অভিযোগ রয়েছে ন্যাশনাল ট্রাভেলসের বিরুদ্ধে। এ বিষয়ে সমাধানের জন্য জাতীয় ভোক্তা সংরক্ষণ অধিদপ্তরে লিখিতভাবে অভিযোগও করে আসছেন ভুক্তভোগী যাত্রীরা। তবে অন্য বিষয়ে দাখিলকৃত অভিযোগগুলোর সমাধান করলেও অজ্ঞাত কারণে এই গণপরিবহন প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয় না বলে অভিযোগ উঠেছে।

উত্থাপিত এমন অভিযোগের বিষয়ে জানতে গেলে দেখা যায়, ইতোপূর্বেও ন্যাশনাল ট্রাভেলসের বিরুদ্ধে অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের অভিযোগ করা হয়েছিল। তবে অজ্ঞাত কারণে প্রতিষ্ঠানটি পার পেয়ে গেছে।

সম্প্রতি অতিরিক্ত ভাড়া নেওয়ার অভিযোগে জাতীয় ভোক্তা সংরক্ষণ অধিদপ্তরের প্রধান কার্যালয়ে লিখিত অভিযোগ করেন রাজশাহী মহানগরীর ফারজানা ইয়াসমীন নীপা নামের এক ছাত্রী। তিনি বলেন, আমি রাজশাহী হতে ঢাকা যাওয়ার জন্য গত ২৫ এপ্রিল ন্যাশনাল ট্রাভেলস রাজশাহীর প্রধান কাউন্টার থেকে একটি টিকিট ক্রয় করি। যার মূল্য নেয় ১২০০ টাকা। ঠিক তার পরদিন ২৬ এপ্রিল কাজ শেষ করে রাজশাহীতে ফেরার জন্য একই প্রতিষ্ঠানের কল্যাণপুর কাউন্টার থেকে আরেকটি টিকিট ক্রয় করি। তবে আশ্চার্যের বিষয় হচ্ছে- এক দিনের ব্যবধানে একই পথের টিকিটের মূল্য নেয় ১৮০০ টাকা। আর মাত্র এক দিনের ব্যবধানে এমন পরিবর্তন দেখে কাউন্টারে দায়িত্বরত ব্যক্তির কাছে সরকারিভাবে নির্ধারিত ভাড়ার তালিকা দেখতে চাইলে তিনি তা দেখাতে ব্যর্থ হয়ে বলেন, ‘পরিবহন মালিক সমিতির সিদ্ধান্তে আমরা এই ভাড়া নিচ্ছি। এ বিষয়ে আমার কিছুই করার নেই। তখন কাছে ওই পরিমাণ টাকা না থাকায় আমার এক আত্মীয়র কাছ থেকে বিকাশের মাধ্যমে লোন করতে বাধ্য হই।’

তিনি আরো বলেন, “এরপর দেশের সাধারণ জনগণের স্বার্থে বিষয়টি নিয়ে গত ২৪ মে জাতীয় ভোক্তা সংরক্ষণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক বরাবর ডাকযোগে রেজিস্ট্রি করে একটি লিখিত অভিযোগ করি। যে অভিযোগটি গ্রহণের রিসিপ্ট কপিও আমার কাছে সংরক্ষিত। তবে অভিযোগ দাখিলের এক মাস হতে চললেও বিষয়টির কোনো অগ্রগতি না হওয়ায় অধিদপ্তরটির ওয়েবসাইডে থাকা নম্বরে অনেকবার যোগাযোগ করেও তাদের কাছ থেকে কোনো সঠিক উত্তর পাইনি। দপ্তরটির এক কর্মকর্তা অন্য কর্মকর্তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করার কথা বলে হয়রানি করাচ্ছেন। তবে আমি একজন মফস্বল শহরের সাধারণ ছাত্রী হওয়ায় বিষয়টি নিয়ে কোনো কূলকিনারা না পেয়ে আমার সহপাঠীদের পরামর্শে মানবাধিকার সংস্থা ‘সচেতন নাগরিক ফোরাম বাংলাদেশ’-এর শরণাপন্ন হই। এরপর প্রতিষ্ঠানটি জানিয়েছে, আইন অনুযায়ী নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে জাতীয় ভোক্তা সংরক্ষণ অধিদপ্তর কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ না করলে তখন আমরা প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেব। তবে মানবাধিকার সংস্থার পক্ষ থেকে বিষয়টি নিয়ে এ অবস্থায় গণমাধ্যমের সহযোগিতা নেওয়ার পরামর্শ দেন।”

ন্যায্য বিচার না পাওয়ার সংশয় প্রকাশ করে অভিযোগকারী এই ছাত্রী বলেন, ‘বাল্যকাল থেকে পিতৃহীন, মায়ের সেলাইয়ের টাকা ও সরকারি সহায়তায় পড়াশোনা করে আজ এ অবধি এসেছি। আর বর্তমান সরকার আমাদের মতো সাধারণ জনগণের লাইফস্টাইল চেঞ্জ করানোর জন্য ব্যাপক কর্মযোগ্য বাস্তবায়ন করছে। সরকারের সাফল্য অমøান করতেই মাত্র এক দিনের ব্যবধানে একটি টিকিটের ভাড়া ৬০০ টাকা বাড়িয়ে সাধারণ যাত্রীদের মধ্যে নেতিবাচক প্রভাব ফেলানোর অপচেষ্টা করা হয়েছে। আর সাধারণ জনগণের পকেট কেটে অবৈধভাবে উপার্জিত অর্থগুলোই যে সরকারবিরোধী কর্মকান্ডে ব্যবহার হচ্ছে না, তা কে নিশ্চিত করে বলতে পারে? তাই বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে দেখা প্রয়োজন।’

এদিকে, গণপরিবহন প্রতিষ্ঠানটির বিরুদ্ধে দাখিলকৃত অভিযোগের বিষয়ে অনুসন্ধান করতে গিয়ে পাওয়া যায় একটি তথ্য। প্রাপ্ত সূত্র বলছে, এমন অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের কারণে ২০১৭ সালে জাতীয় ভোক্তা সংরক্ষণ অধিদপ্তর রাজশাহীর কার্যালয়ে জনস্বার্থে স্বপ্রণোদিত হয়ে চৌধুরী মশিউর রহমান নোমান নামের এক যাত্রী লিখিত অভিযোগ করেছিলেন। কিন্তু সে অভিযোগটিও অজ্ঞাত কারণে গুরুত্বের সফঙ্গ না দেখায় ন্যাশনাল ট্রাভেলস্ পার পেয়ে যায়। যে অভিযোগের বিষয়ে সোমবার (২০ জুন) দুপুরে কথা হয় জাতীয় ভোক্তা সংরক্ষণ অধিদপ্তর রাজশাহীর সহকারী পরিচালক অপূর্ব অধিকারীর সফঙ্গ। তিনি জানান, ওই অভিযোগ প্রমাণিত না হওয়ায় তা খারিজ করে দেওয়া হয়েছে।

এরপর খারিজের কারণ বিষয়ে যোগাযোগ করা হয় সেই অভিযোগকারী চৌধুরী মশিউর রহমান নোমানের সঙ্গে। তিনি জানান, অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের যথাযথ প্রমাণাদি থাকা সত্ত্বেও অজ্ঞাত কারণে জনগণের পক্ষে রায়টি দেওয়া হয়নি। এ কারণে এরই মধ্যে তিনি উচ্চ আদালতের আশ্রয় নিয়েছেন। এবার ন্যায়বিচার সাধারণ জনগণের পক্ষে আসবে বলেও আশাবাদ ব্যক্ত করেন চৌধুরী নোমান।

আর অতিরিক্ত ভাড়া নেওয়ার বিষয়ে ছাত্রী ফারজানা ইয়াসমীন নীপার অভিযোগ যাচাই করতে গিয়ে প্রতিবেদকের সঙ্গেও অসহযোগিতামূলক আচরণ করেন জাতীয় ভোক্তা সংরক্ষণ অধিদপ্তরের প্রধান কার্যালয়ের একাধিক কর্মকর্তা। বিষয়টি নিয়ে বেশ কয়েকবার মুঠোফোনে কথা হয় জাতীয় ভোক্তা সংরক্ষণ অধিদপ্তরের প্রধান কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক মো. মাগফুর রহমান ও মাসুম আরেফিনের সফঙ্গ। একপর্যায়ে সহকারী পরিচালক মো. মাগফুর রহমান বিষয়টি নিয়ে অভিযোগ কেন্দ্রের সঙ্গে কথা বলার পরামর্শ দেন। এ সময় অভিযোগ কেন্দ্রের সঙ্গে যোগাযোগের নম্বর চাইলে তিনি বলেন, ‘এটা আমার কাজ নয়।’ এ সময় যোগাযোগের নম্বর দিয়ে সহযোগিতা করতে পারবেন না বলে সাফ জানিয়ে অন্য কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলতে বলেন। পরে মাসুম আরেফিনের অভিযোগ কেন্দ্রের নম্বর দিয়ে সহযোগিতা করলেও সেই নম্বর বন্ধ পাওয়া যায়।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close