প্রতিদিনের সংবাদ ডেস্ক

  ২০ জুন, ২০২২

ইউক্রেনীয়দের সাহায্যার্থে নোবেল পদক নিলামে

নোবেল শান্তি পুরস্কারজয়ী রুশ সাংবাদিক দিমিত্রি মুরাটভ ইউক্রেনীয় শরণার্থীদের সাহায্যের জন্য তার নোবেল পদক নিলামে উঠিয়েছেন। তার মতে, মস্কোর সামরিক অভিযানকে রাশিয়ার নাগরিকদের অধিকাংশই সমর্থন করেন না। ক্রেমলিনের সমালোচক বলে পরিচিত সংবাদপত্র ‘নোভায়া গাজেটা’র সহ-প্রতিষ্ঠাতা এবং মুখ্য সম্পাদক মুরাটভ। সাংবাদিক মুরাটভ বলেছেন, তার নোভেল পদক ২০ লাখ ডলারে বিক্রি হতে পারে।

বছরের পর বছর ধরে কঠোর নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে কাজ চালিয়ে গিয়েছে রুশ গণমাধ্যম নোভায়া। কিন্তু গত মার্চ মাসে এটি শেষ পর্যন্ত তার অনলাইন এবং মুদ্রণ কার্যক্রম বন্ধ করে দেয়। রাশিয়ায় ভুয়া খবর প্রচারের শাস্তি ১৫ বছরের কারাদণ্ড। রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন স্বাক্ষর করায় এমন একটি বিল আইনের মর্যাদা পেয়েছে চলতি বছরের শুরুর দিকে। এরপর রাশিয়ায় ‘বন্ধ হয়ে যাওয়া’ গণমাধ্যমের তালিকায় যোগ হয় ‘নোভায়া গাজেটা’র নাম।

‘আমার দেশ অন্য একটি দেশ ইউক্রেনকে আক্রমণ করেছে। সেখানে এখন ১ কোটি ৫৫ লাখ শরণার্থী রয়েছে। আমরা কী করতে পারি তা নিয়ে দীর্ঘ সময় ধরে ভেবেছি। তখন সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়, প্রত্যেকেরই প্রিয় কিছু দেওয়া উচিত’ রয়টার্সকে এ কথা জানিয়েছেন মুরাটভ।

স্বর্ণপদক নিলাম করার মানে হল শরণার্থীদের ভাগ্যের শরিক হলেন মুরাটভ নিজেও। কারণ শরণার্থীরা তো তাদের ‘অতীতের স্মৃতি’ হারিয়ে ফেলেছেন।

মুরাটভের মত, ‘এখন তাদের ভবিষ্যৎ কেড়ে নেয়ার চেষ্টা চলছে। আমাদের অবশ্যই নিশ্চিত করতে হবে যে তাদের ভবিষ্যৎ সুরক্ষিত রয়েছে। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ যে জিনিসটি আমরা বলতে চাই এবং দেখাতে চাই তা হলো মানব সংহতি।’

রাশিয়ার আক্রমণের পর প্রায় ৬৮ লাখ ইউক্রেনিয়ান দেশ ছেড়েছেন। জাতিসংঘের হিসেবে, এদের প্রায় ৩০ লাখ প্রতিবেশী দেশগুলো ছাড়িয়ে অন্যান্য দেশেও আশ্রয় নিয়েছেন। জার্মানিতে সাত লাখেরও বেশি ইউক্রেনিয়ান আশ্রয় নিয়েছেন। আরো ৭৭ লাখ দেশের ভেতরেই ঘরছাড়া হয়েছেন। মুরাটভ তার সম্মান উৎসর্গ করেছেন নোভায়া গাজেটার ছয়জন সাংবাদিককে। সেই সাংবাদিকদের তাদের কাজের জন্য হত্যা করা হয়েছে। হত সাংবাদিকদের মধ্যে ছিলেন প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সর্বোচ্চ সমালোচকরাও।

ইতালির কার্টুনিস্ট পাওলো লাম্বার্ডি ইউক্রেন যুদ্ধ নিয়ে তার কার্টুনটির নাম দিয়েছেন ‘মাদার ওয়ার’। সেখানে ইউক্রেনে হামলা শুরু করা রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনকে দেখানো হয়েছে যমদূত গ্রিম রিপারের কোলে। পুতিনকে ফিডারে দুধ খাওয়াচ্ছেন মৃত্যুদূত। চার পাশে মাছি এমনভাবে উড়ছে যেন পুতিন হয় মরে গেছেন, নয়তো অচিরেই মরবেন! তিনি মুক্ত গণমাধ্যমের অভাব রয়েছে রাশিয়ায়। প্রতিবাদের ফলে রাষ্ট্রের তরফে নেমে আসা তীব্র আঘাতের জন্য দুঃখ প্রকাশ করেছেন তিনি।

তিনি বলেন, ‘রাশিয়ায় বাকস্বাধীনতা নেই, মতামতের প্রকৃত বিনিময় নেই, মতপ্রকাশের প্রকৃত স্বাধীনতা নেই, এতেই বোঝা যাচ্ছে মানুষের কাছে কোনো বিকল্প নেই। রাষ্ট্রের প্রচারকারীরা যা বলছে, জনগণকে বিশ্বাস করতে হচ্ছে। কোনো মুক্ত গণমাধ্যম নেই। যেকোনো বিবৃতির জন্য, একটি প্রশাসনিক বা ফৌজদারি মামলা শুরু করা হচ্ছে।’

মুরাটভের বক্তব্য, যখন তারা ফোন করে জিজ্ঞাসা করে, আপনি কি প্রেসিডেন্ট পুতিনের পদক্ষেপকে সমর্থন করেন? মুরাটভের উত্তর, যুদ্ধের প্রতি সমর্থন, প্রায়শই লাদিন বর্ণমালা থেকে ‘জেড’-এর প্রদর্শনদ্বারা প্রদর্শিত হয়। তার মতে, আপনি যদি এখন মস্কোর রাস্তা দিয়ে হেঁটে যান, আপনি দেখতে পাবেন যে রাস্তায় কার্যত কোনো ‘জেড’ অবশিষ্ট নেই। এমনকি ক্রেমলিন স্বীকার করেছে যে জনসংখ্যার ২৫ থেকে ৩০ শতাংশ অভিযানকে সমর্থন করে না।

মুরাটভ বলেন, যারা বিশ্বাস করেন যে অভিজাতদের মধ্যে বিভক্তির ফলে রাশিয়ায় পরিবর্তন আসতে পারে তারা ভুল করেছেন। তার কথায়, শক্তিগুলো কখনো এতটা ঐক্যবদ্ধ ছিল না। ক্ষমতায় থাকা লোকদের কোথাও যাওয়ার নেই। ইউরোপ নয়, আমেরিকা নয়, অন্য কোথাও তাদের অনুমতি নেই। সাবমেরিনের ক্রুদের মতো অবস্থা, পালানোর পথ নেই। তারা প্রেসিডেন্টকে ঘিরে ঐক্যবদ্ধ।’

পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞার কারণে যদি জীবনযাত্রার মান ক্ষতিগ্রস্ত হয় তবে রুশ নাগরিকরা কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে যেতে পারে এমন পরামর্শ নিয়েও তিনি প্রশ্ন তোলেন। মুরাটভ জানান, রাশিয়া এমন এক পর্যায়ে পৌঁছেছে যেখানে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট হিসেবে পুতিন যত দিন ক্ষমতায় থাকবেন, যতক্ষণ তিনি নিজেকে উপযুক্ত মনে করেন। তিনি মনে করেন, এটি রাশিয়ার মঙ্গলের জন্য। তিনি রাষ্ট্রপতি হবেন নাকি কোনো রাজা হবেন, আমি জানি না। কিন্তু স্বৈরাচারী হওয়ার দিকে তার ঝোঁক একেবারে স্পষ্ট।’ সূত্র ডয়েসে ভেলে।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close