নিজস্ব প্রতিবেদক, মুন্সীগঞ্জ, শরীয়তপুর ও টাঙ্গাইল প্রতিনিধি

  ২০ জুন, ২০২২

নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তা বলয়ে পদ্মা সেতু

অপেক্ষার বাকি আর ৪ দিন। এরই মধ্যে নিরাপত্তার চাদরে ঢেকে গেছে পদ্মা সেতু এলাকা। আগামী ২৫ জুন সেতুর আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন কেন্দ্র করে দেশের সব গোয়েন্দা সংস্থার পাশাপাশি সেতু এলাকার নিরাপত্তা নিশ্চিত করার কাজে ব্যস্ত সময় পার করছেন র‌্যাব, পুলিশ ও আনসার সদস্যরা। তারা সেনাবাহিনীর সদস্যদের সঙ্গে সমন্বয় করে কাজ করছেন। এদিকে পদ্মা সেতুর নিরাপত্তায় দুই পাড়ে আগামীকাল সোমবার চালু হচ্ছে ‘পদ্মা সেতু উত্তর’ ও ‘পদ্মা সেতু দক্ষিণ’ নামে দুটি থানা। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে থানা দুটি উদ্বোধন করবেন।

সেতুর ওপর-নিচে উভয় স্থানই নিরাপত্তার চাদরে ঢাকা। আশপাশের সড়কে এবং সড়কের বাইরেও বসানো হচ্ছে ক্লোজ সার্কিট (সিসি টিভি) ক্যামেরা। মাওয়া প্রান্তে সুধী সমাবেশস্থল এবং জাজিরায় জনসভাস্থল ঘিরে বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যদের কঠোর নজরদারি চলছে। পদ্মা নদীতেও চলছে টহল। সেতুর পাশাপাশি দুই পাড়ের মানুষের নিরাপত্তা নিশ্চিত করবে এ দুই থানা। প্রতিটি থানায় একজন সহকারী পুলিশ সুপারসহ ৪০ জন করে পুলিশ সদস্য দায়িত্বে থাকবে। ২৫ জুন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধনের পর ২৬ জুন থেকে সেতু দিয়ে দিনরাত ২৪ ঘণ্টা যানবাহন চলাচল করবে।

সাধারণ মানুষ ও পর্যটকদের নিরাপত্তার স্বার্থে থানা দুটির পাশাপাশি সেতু এলাকায় থাকবে বাড়তি নিরাপত্তা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য। এর আগে এ দুই থানায় জনগণের পদ সৃষ্টি করে প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়। অত্যাধুনিক এ থানা ভবন উদ্বোধনের জন্য প্রস্তুতি শুরু করা হচ্ছে।

সেতুর শরীয়তপুরের জাজিরা পয়েন্টে পদ্মা দক্ষিণ থানার আওতায় থাকবে পূর্ব নাওডোবা ও পশ্চিম নাওডোবা ইউনিয়ন। মুন্সীগঞ্জের মাওয়া প্রান্তে পদ্মা উত্তর থানার আওতায় থাকবে মেদিনীমণ্ডল ও কুমারভোগ ইউনিয়ন।

মুন্সীগঞ্জের লৌহজং উপজেলার মাওয়া পদ্মা উত্তর থানার ওসি আলমঙ্গীর হোসাইন জানান, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভার্চুয়ালি পদ্মা উত্তর থানার উদ্বোধনের পরই আমরা আমাদের দাপ্তরিক কার্যক্রম শুরু করব। এ সেতুর উদ্বোধনের পর এই অঞ্চলের নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার হবে। আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণে থাকবে। এছাড়া সংশ্লিষ্ট থানা এলাকায় কোনো যাত্রী সমস্যার সম্মুখীন হলে তাৎক্ষণিকভাবে তাকে আইনি সহায়তার পাশাপাশি প্রয়োজনীয় সেবা দেওয়া হবে।

পদ্মা নদীর উভয় প্রান্তে এ এলাকায় বলতে গেলে এক সময় প্রায় জনশূন্য ছিল। কিন্তু এখন পদ্মা সেতুকে ঘিরে দুই পাড়ের মানুষের জীবনযাত্রা পাল্টে গেছে। নতুন জনবসতি তৈরি হচ্ছে। হাটবাজার হাট বসেছে। মুন্সীগঞ্জ জেলার লৌহজং থানার মেদিনীমণ্ডলের পদ্মা সেতুর টোল প্লাজার অদূরে এ থানা ভবন দেখে খুশি এলাকার মানুষ।

মেদিনীমণ্ডল এলাকার শেখ জামান বলেন, আমাদের এলাকায় এমন থানা ভবন দেখে আমরা খুশি। কারণ এখানে এখন মানুষজন বেড়েছে।

এদিকে, পদ্মা সেতু উদ্বোধনের দিন টাঙ্গাইল কারাগারের দেড় হাজার কয়েদি ও টাঙ্গাইল জেনারেল হাসপাতালের ৭০০ রোগীকে উন্নত মানের খাবার দেওয়া হবে।

এ ছাড়া জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে আশ্রয়ণ প্রকল্পের শিশু ও বাসিন্দাদের মাঝে উন্নত মানের খাবার এবং নতুন পোশাক বিতরণ করা হবে। সকালে পদ্মা সেতুর উদ্বোধন অনুষ্ঠান দেখার আয়োজন, দুপুরে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, বিকালে ফুটবল খেলা ও রাতে আতশবাজির আয়োজন করা হবে। গতকাল রবিবার সকালে টাঙ্গাইল জেলা প্রশাসক ড. মো. আতাউল গনি জেলা পর্যায়ে পদ্মা সেতুর উদ্বোধন উদ্‌যাপন উপলক্ষে প্রস্তুতিমূলক সভায় এসব কথা জানান।

জেলা প্রশাসকের সভাকক্ষে আয়োজিত প্রস্তুতি সভায় বক্তব্য দেন সরকারি সা’দত কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ প্রফেসর আলীম মাহমুদ, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) আমিনুল ইসলাম, অতিরিক্ত জেলা পুলিশ সুপার মো. শরফুদ্দীন প্রমুখ।

সরকারের এক শীর্ষ কর্মকর্তা জানিয়েছেন, পদ্মা সেতু নির্মাণ বর্তমান সরকারের একটি বড় সাফল্য। এ সাফল্যে ঈর্ষান্বিত হয়ে সরকারবিরোধী একটি চক্র এবং দেশি-বিদেশি স্বার্থান্বেষী মহল নানা অপপ্রচারে লিপ্ত। মহলটি জনগণকে বিভ্রান্ত করতে এবং একইসঙ্গে সরকারকে বিব্রতকর পরিস্থিতিতে ফেলতে নানা ষড়যন্ত্র করছে। সেতুর উদ্বোধনকে ঘিরে সারা দেশে বিশেষ করে দক্ষিণাঞ্চলের মানুষের মধ্যে উৎসবের আমেজ দেখা যাচ্ছে। এই উৎসবমুখর পরিবেশকে ম্লান করে দিতে এবং জনগণের দৃষ্টি ভিন্ন দিকে প্রবাহিত করতে দেশে নাশকতা সৃষ্টির মাধ্যমে অস্থিতিশীল পরিবেশ তৈরির অপচেষ্টা চলছে বলেও জানিয়েছেন ওই কর্মকর্তা, যা প্রধানমন্ত্রী নিজেও বারবার বলেছেন।

এ প্রসঙ্গে সরকারের নিরাপত্তা সংক্রান্ত জাতীয় কমিটির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) সাবেক ডিএমপি কমিশনার আছাদুজ্জামান মিয়া জানিয়েছেন, যখনই জাতীয় নিরাপত্তার জন্য গুরুত্বপূর্ণ কোনো বিষয় থাকে তখনই কমিটির পক্ষ থেকে বিষয়টি সরকারের নজরে আনি। পদ্মা সেতু যেহেতু বর্তমান সরকারের উন্নয়ন কার্যক্রমের একটি যুগান্তকারী মাইলফলক, তাই এটিকে ঘিরে যাতে কোনো অপশক্তি তৎপর হতে না পারে সে বিষয়ে নিরাপত্তা সংক্রান্ত জাতীয় কমিটির নজরদারি রয়েছে।

পুলিশ সদর দপ্তরের ওই কর্মকর্তা আরো জানিয়েছেন, উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের এই মাহেন্দ্রক্ষণকে সামনে রেখে ষড়যন্ত্রকারীরা মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে। সম্প্রতি চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডে বি এম কনটেইনার ডিপোতে বিস্ফোরণে অর্ধশতাধিক নিহত ও দুই শতাধিক আহত হওয়া, রাজধানীতে বাসে আগুন, রাজধানীর বাইরে ট্রেনে আগুন লাগার মতো ঘটনাও ঘটেছে। সেতু উদ্বোধনের আগেই এ ঘটনাগুলো কোনো স্যাবোটাজ কি না পুলিশ তা খতিয়ে দেখছে।

এ প্রসঙ্গে মুন্সীগঞ্জের পুলিশ সুপার আবদুল মোমেন, শরীয়তপুরের পুলিশ সুপার এস এম আশরাফুজ্জামান এবং মাদারীপুরের পুলিশ সুপার গোলাম মোস্তফা রাসেল জানিয়েছেন, ২৫ জুনের সব কর্মসূচিকে সফল করতে কাজ করছি। পুলিশ সদর দপ্তর থেকেও সার্বক্ষণিক খোঁজ নেওয়া হচ্ছে। বড় আকারের জনসভাসহ সেতুর দুই পাড়ে প্রধানমন্ত্রীর ৫টি কর্মসূচি রয়েছে। তাই কঠোর নিরাপত্তা বেষ্টনীতে রাখা হয়েছে পুরো সেতু এলাকা। সেতু সংশ্লিষ্ট তিন জেলাসহ বরিশাল ও পটুয়াখালী জেলা পুলিশও এর সঙ্গে সম্পৃক্ত হয়েছে।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close