রাঙ্গাবালী (পটুয়াখালী) প্রতিনিধি

  ১৯ জুন, ২০২২

১২ বছর পর বাড়িতে অপহৃত ইয়াসমিন

ইয়াসমিনের বয়স তখন সাড়ে ৬ বছর। ফুফুর সঙ্গে ঢাকা বেড়াতে গিয়ে ১২ বছর আগে নিখোঁজ হয় সে। দিশাহারা হয়ে পরিবারের লোকজন ইয়াসমিনকে অনেক খোঁজাখুঁজি করে। কিন্তু কোথাও তার সন্ধান মেলেনি তখন। একপর্যায় তার আশাই ছেড়ে দিয়েছিল পরিবার।

অবশেষে দীর্ঘ এক যুগ পর ইয়াসমিন ফিরেছেন তার স্বজনদের কাছে। ছোট্ট ইয়াসমিন এসেছেন স্বপ্না নাম নিয়ে, বয়স এখন তার প্রায় ১৯ বছর। তার আছে স্বামী, আছে পাঁচ বছরের এক ছেলেও। দীর্ঘদিন পর পরিবারের কাছে ফিরে আবেগাপ্লুত ইয়াসমিন ও তার পরিবার।

গত শুক্রবার সকালে পটুয়াখালীর রাঙ্গাবালী উপজেলার ছোটবাইশদিয়া ইউনিয়নের গহিনখালী গ্রামে অবস্থিত নিজ জন্মভূমিতে স্বামী-সন্তান নিয়ে এসে পৌঁছেছেন ইয়াসমিন। হারিয়ে যাওয়া সেই ইয়াসমিনের ফিরে আসার খবর পেয়ে প্রতিবেশীরা তাদের বাড়িতে করছেন ভিড়। আর পরিবার তাদের হারিয়ে যাওয়া মেয়েকে পেয়ে যেন আবেগঘন এক পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছে। পরিবার সূত্রে জানা গেছে, ২০১০ সালে নিজ গ্রামের বাড়ি রাঙ্গাবালী থেকে ইয়াসমিন তার ফুফু মিনারা বেগমের সঙ্গে ঢাকার কেরানীগঞ্জ বেড়াতে যান। ওই ফুফুর বাসা সংলগ্ন বালুর মাঠে খেলতে গিয়ে সে তখন নিখোঁজ হয়। পরে তাকে অনেক খোঁজাখুঁজি করেও পাওয়া যায়নি। ইয়াসমিনের সন্ধান পাওয়ার পর পরিবার জানতে পারে যে, খেলাধুলা করতে গিয়ে ওইসময় ইয়াসমিন অপহরণ হয়। পরে অপহরণকারীদের কাছ থেকে তাকে উদ্ধার করে কয়েকজন লোক। সেখান থেকে নাটোরের বাগাতিপাড়া উপজেলার সদর ইউনিয়নের নূরপুর মালঞ্চ গ্রামে বসবাসরত সিরাজ মণ্ডলের পরিবারে আশ্রয় পায় ইয়াসমিন। সেখানেই সে বড় হয়, কেটে যায় এক যুগ। এর মাঝে তার বিয়েও হয় একই উপজেলার পার্শ্ববর্তী ইউনিয়ন জামনগরের রাঙামাটি গ্রামের খাইরুল ইসলামের সঙ্গে।

এক যুগ পর নিজ বাড়িতে ফিরে আসা ইয়াসমিন (স্বপ্ন) বলেন, ‘আমি ছোটবেলায় ফুফুর সঙ্গে বেড়াতে ঢাকাতে যাই। ওইসময় বালুর মাঠে খেলতে গিয়েছিলাম। পেছন থেকে একজন মহিলা মুখ চেপে ধরে আমাকে নিয়ে যায়। এরপর আমি অচেতন হয়ে পড়ি, ওইসময় কী হয়েছে আমি কিছুই বলতে পারি না। পরে নাটোরে একটি পরিবারে আমি বড় হই। প্রায় ১২ বছর পর আমার জন্মদাতা বাবা-মায়ের খবর পাই। তারাই আমাকে রাঙ্গাবালীতে নিয়ে আসছে। বাবা-মাকে পেয়ে আমার অনেক ভালো লাগছে।’

ইয়াসমিনের জন্মদাতা বাবা ইউসূফ প্যাদা বলেন, ‘আমার মেয়ে যখন হারানো যায় তখন ওর বয়স ৬ বছর ছয় মাস। ওরে অনেক খোঁজাখুঁজি করেছি। কিন্তু কোথাও পাইনি। আমার এক আত্মীয়ের কাছ থেকে হারিয়ে যাওয়া মেয়ের খবর পাই। পরে নাটরে গিয়ে আমার মেয়েকে শনাক্ত করি। তার দুই হাঁটুর কাটা চিহ্ন এবং ছোটবেলার কিছু স্মৃতি শুনে আমি নিশ্চিত হয়েছি যে, সে-ই আমার হারিয়ে যাওয়া মেয়ে ইয়াসমিন। পরে নাটোর সদর আদালতে ডিএনএ পরীক্ষার জন্য আবেদন করি। নমুনা দেওয়া হয়। দুই মাস পর আদালতের মাধ্যমে ডিএনএর ফল পাব।’ রাঙ্গাবালী থানার ওসি দেওয়ান জগলুল হাসান এ ব্যাপারে বলেন, আমাকে এ বিষয়ে কেউ অবহিত করেনি।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close