মোহাম্মদ শহীদুল ইসলাম, চট্টগ্রাম

  ২৮ মে, ২০২২

চট্টগ্রামে আ.লীগ-যুবলীগের সম্মেলন ঘিরে সাজসাজ রব

চট্টগ্রাম আওয়ামী লীগ, যুবলীগ ও এর বিভিন্ন অঙ্গ সংগঠনের আসন্ন সম্মেলনকে কেন্দ্র করে গোটা চট্টগ্রামে দলের নেতাকর্মীদের মধ্যে প্রাণচাঞ্চল্য বিরাজ করছে। নগরীর বিভিন্ন সড়কের দু’পাশ ছেয়ে গেছে ছবি সংবলিত বিভিন্ন ব্যানার, পোস্টার, ফেস্টুন ও তোরণে। মোড়ে মোড়ে শোভা পাচ্ছে পছন্দের প্রার্থীদের বড় বড় ছবি, ব্যানার, তোরণ। আওয়ামী লীগের সহযোগী সংগঠন বাংলাদেশ আওয়ামী যুবলীগ। ২৮ মে চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা, ২৯ মে চট্টগ্রাম উত্তর জেলা ও ৩০ মে চট্টগ্রাম মহানগর যুবলীগের সম্মেলনের দিন ধার্য করা হয়েছে। যুবলীগ চেয়ারম্যান শেখ ফজলে শামস পরশ ত্রিবার্ষিক সম্মেলনের তারিখ নির্ধারণ করে সম্মেলনের সর্বাত্মক প্রস্তুতি গ্রহণের নির্দেশ দেওয়ার পর চট্টগ্রামে যুবলীগের নেতকর্মীদের মধ্যে এখন উৎসবের আমেজ চলছে।

এদিকে, চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের সম্মেলন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে আগামী ১ অক্টোবর। এ উপলক্ষে চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের সদস্য নবায়ন ও নতুন সদস্য সংগ্রহ কার্যক্রমের উদ্বোধন করেছেন আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুবুল-উল আলম হানিফ। নেতাকর্মীদের পদচারণায় মুখর দলীয় কার্যালয় ও সম্মেলনস্থল। সব মিলিয়ে গোটা চট্টগ্রামে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী-সমর্থকদের মধ্যে এখন খুশির আমেজ লক্ষ্য করা গেছে।

৩০ মে নগর যুবলীগের সম্মেলনের স্থান নগরীর পাঁচলাইশ থানার বিপরীতে উঁচু পাহাড়ে অবস্থিত ‘কিং অব চিটাগাং’ কমিউনিটি সেন্টারে এখন চলছে শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতি। সূত্র জানায়, সম্মেলনকে কেন্দ্র করে কেন্দ্রীয় নেতারা অবস্থান করবেন নগরীর র‌্যাডিসন ব্লু হোটেলে। সম্মেলনকে আরো প্রাণবন্ত করতে ব্যানার-ফেস্টুনে ছেয়ে গেছে হোটেলের সামনের সড়ক। চট্টগ্রাম নগর যুবলীগের সম্মেলনে প্রধান অতিথি থাকবেন আওয়ামী লীগের সভাপতিমন্ডলীর সদস্য শেখ ফজলুল করিম সেলিম। যুবলীগ চেয়ারম্যান শেখ ফজলে শামস পরশ ও সাধারণ সম্পাদক মাইনুল হোসেন খান নিখিলসহ আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় ও চট্টগ্রামের নেতারা। যুবলীগের সিনিয়র নেতারা বলছেন, এবারের সম্মেলনের পর নতুন কমিটিতে তরুণ নেতৃত্বই প্রাধান্য পাবে। তবে এবারের কমিটিতে ত্যাগী তৃণমূলের কর্মীরা স্থান পাবে কিনা তা নিয়েও অনেকে শঙ্কায় রয়েছেন। কারা পাচ্ছেন পদণ্ডপদবি তা নিয়ে কৌতূহলের শেষ নেই। চায়ের দোকান, রেস্টুরেন্ট থেকে শুরু করে হাটবাজারে একটাই আলোচনা যুবলীগের সম্মেলন।

যুবলীগের তিন ইউনিটের মধ্যে নগর কমিটির সভাপতি পদের জন্য ৩৫ জন এবং সাধারণ সম্পাদক পদের জন্য ৭০ জন জীবনবৃত্তান্ত জমা দিয়েছেন। সভাপতি পদে আলোচনায় আছেন সিটি কলেজ ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি দেবাশীষ পাল দেবু, নগর ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক এম আর আজিম, নগর যুবলীগের বর্তমান কমিটির যুগ্ম আহ্বায়ক মাহবুবুল হক সুমন ও দিদারুল আলম চৌধুরী, এমইএস কলেজ ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক সুরনজিৎ বড়ুয়া লাবু, যুবলীগ নেতা হেলাল উদ্দিন, আরশেদুল আলম বাচ্চু, আবদুল মান্নান ফেরদৌস, মোহাম্মদ সাজ্জাত হোসেন, সুমন দেবনাথ ও হাবিবুর রহমান তারেক।

চট্টগ্রাম নগর যুবলীগের কমিটিতে পদপ্রাপ্তির ক্ষেত্রে স্থানীয় আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতৃত্বের অনুসারীরা প্রাধান্য পেয়ে আসছেন বহু বছর ধরেই। তবে এবার ঢাকায় গিয়ে যুবলীগের কেন্দ্রীয় নেতাদের কাছে পদপ্রত্যাশীদের ধরনা- এই পরিবর্তনের ইঙ্গিত দিচ্ছে।

নগর যুবলীগ সূত্রে জানা গেছে, নগরে ৪৩টি সাংগঠনিক ওয়ার্ডের মধ্যে কমিটি আছে উত্তর পতেঙ্গা, পতেঙ্গা, শুলকবহর ও পাঠানটুলি ওয়ার্ডে। সাংগঠনিক ১৬ থানায় কোনো কমিটি হয়নি। দীর্ঘ সময় ধরে পুরোনো আহ্বায়ক কমিটি দিয়ে যুবদলের কার্যক্রম চলছিল। আহ্বায়ক কমিটি ছাড়াও সাবেক কয়েকজন ছাত্রলীগ নেতা পদণ্ডপদবি ছাড়াই নগর যুবলীগের ব্যানারে কেন্দ্রঘোষিত বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করে আসছেন। ‘ভাই লীগ’মুক্ত যুবলীগের আহ্বায়ক কমিটি ঘোষিত হলে তারা সদস্য হবেন বলে আশাবাদী।

নগর যুবলীগের সর্বশেষ কমিটি হয়েছিল ২০১৩ সালে। সেই কমিটির আহ্বায়ক মহিউদ্দিন বাচ্চু বলেন, যারা অতীত দুঃসময়ে মাঠে ছিলেন এবং ছাত্রলীগে মেধার স্বাক্ষর রেখেছেন, তাদের নিয়েই কমিটি হবে বলে প্রত্যাশা।

সম্মেলন প্রস্তুতির বিষয়ে সাধারণ সম্পাদক মাইনুল হোসেন খান নিখিল বলেন, সম্মেলনের শেষ মুুহূর্তের প্রস্তুতি পুরোদমে চলছে। দ্বিতীয় অধিবেশনে সিদ্ধান্ত হবে, কারা আসবে নতুন কমিটিতে।

চট্টগ্রাম চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা যুবলীগের ত্রিবার্ষিক সম্মেলন ২৮ মে। সম্মেলনের স্থান পটিয়া উপজেলা আদর্শ উচ্চবিদ্যালয় মাঠ প্রাঙ্গণ। অপরদিকে উত্তর জেলা আওয়ামী যুবলীগের সম্মেলন আসছে রবিবার ২৯ মে। অনুষ্ঠিত হবে হাটহাজারী উপজেলার পার্বতী স্কুল মাঠে।

আগামী ডিসেম্বরে আওয়ামী লীগের কে›ন্দ্রীয় সম্মেলন অনুষ্ঠিত হবে। এর অন্তত দুই মাস আগে সারা দেশে সব জেলা-উপজেলা, ইউনিয়ন, থানা, ওয়ার্ড ও ইউনিটের সম্মেলন শেষ করতে চায় দলটি। এর আলোকেই গত ২৫ মে বুধবার দুপুরে চট্টগ্রাম মহানগরীর কাজীর দেউড়িতে ইন্টারন্যাশনাল কনভেনশন হলে চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের সম্মেলনের তারিখ ঘোষণা করেন আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতা মাহবুবুল-উল আলম হানিফ।

চট্টগ্রামের দায়িত্বপ্রাপ্ত কেন্দ্রীয় যুবলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নাঈম বলেন, বিতর্কিতদের যুবলীগে স্থান হবে না।

গত ২৬ মার্চ বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে সাংগঠনিক কমিটির জন্য সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক পদে আসতে আগ্রহী নেতাদের জীবনবৃত্তান্ত জমা দিতে বলা হয়। এতে সভাপতি পদের জন্য ১৩ জন ও সাধারণ সম্পাদক পদপ্রত্যাশী ৩৯ জনের আবেদন জমা পড়ে। এসব আবেদন বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার মাধ্যমে যাচাই-বাছাই শেষ করেছেন দায়িত্বপ্রাপ্তরা। দক্ষিণ জেলা যুবলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক পদে ৫২ জন জীবন বৃন্তান্ত জমা দিয়েছেন। এখান থেকে যাচাই-বাছাই করে সম্মেলনের মাধ্যমে যুবলীগের সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক নির্বাচন করা হবে।

অপরদিকে ২৯ মে রবিবারের উত্তর জেলা আওয়ামী যুবলীগের সম্মেলনকে ঘিরে এখন নেতাকর্মীদের মধ্যে ব্যাপক উৎসাহ-উদ্দীপনা বিরাজ করছে। সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক প্রার্থীদের চেয়ে কর্মী-সমর্থকদের মধ্যে হিসাব-নিকাশ বেশি চলছে। দলীয় কার্যালয় ছাড়াও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে নিজ নিজ নেতার পক্ষে প্রচারণা চালাচ্ছেন অনেকে। সমর্থকদের মধ্যে কার নেতা পদ পাবেন তা নিয়ে চলছে জল্পনা-কল্পনা। উত্তর চট্টগ্রামের হাটহাজারী, রাউজান, রাঙ্গুনিয়া, ফটিকছড়ি, সীতাকুন্ড, মিরসরাই ও সন্দ্বীপ উপজেলায় নেতাকর্মীরা পছন্দের প্রার্থীদের ছবি দিয়ে তৈরি করছেন ব্যানার, ফেস্টুন, তোরণ ও বিলবোর্ড। সম্মেলনের তারিখ ঘোষণার পর থেকে শীর্ষ পদ নিজেদের দখলে রাখতে নেতারা যে যার মতো তদবির করে যাচ্ছেন।

এ সম্মেলন সফল করতে গঠন করা হয়েছে ১২টি উপকমিটি। এর মধ্যে রয়েছে অর্থ উপকমিটি, প্রচার-প্রকাশনা উপকমিটি, শৃঙ্খলা উপকমিটি, আপ্যায়ন উপকমিটি, মঞ্চ সাজসজ্জা উপকমিটি, সাংস্কৃতিক উপকমিটি, অভ্যর্থনা উপকমিটি ও স্বাস্থ্য উপকমিটি।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close