প্রতিদিনের সংবাদ ডেস্ক

  ২৭ মে, ২০২২

দূষণ ও জাহাজশিল্প...

জলপথে পণ্য পরিবহন অবিশ্বাস্য রকম সস্তার হওয়ায় বিশ্বায়নের নামে অদ্ভুত সব ‘সাপ্লাই চেন’ গড়ে উঠেছে। পরিবেশদূষণ সত্ত্বেও জাহাজ শিল্পকে এখনো কোনো ক্ষতিপূরণ দিতে হয় না। নিজের টি-শার্টের দিকে তাকালে বলতে পারবেন সেটা আসলে কোথা থেকে এসেছে? লেবেলে লেখা আছে ‘মেড ইন টার্কি, মেক্সিকো বা বাংলাদেশ’। কিন্তু সেই তথ্য আসলে আংশিকভাবে সত্য। তুলা হয়তো টেক্সাসের লাববক থেকে এসেছে। তারপর সেই কাপড় চীনে সেলাই, ট্রিটমেন্ট, ব্লিচিং ও ডায়িং করা হয়েছে। তারপর বাংলাদেশে কাপড় কেটে টি-শার্টের রূপ পাবার পর আবার আমেরিকায় পাঠানো হয়েছে। শেষে সমুদ্রের অন্য প্রান্তে বার্লিনে সেটি মাত্র চার ইউরো ৯৯ সেন্ট দামে বিক্রি করা হয়েছে।

শুনলে পাগলামি মনে হলেও পুরোটা ঘটছে শিপিং বা জাহাজপথে পণ্য পাঠানোর অবিশ্বাস্য কম মাসুলের কারণে। ফাইগ আবাসভ ‘ট্রান্সপোর্ট অ্যান্ড এনভায়রনমেন্ট ’ নামের এক এনজিওর নেতৃত্ব দিচ্ছেন, যেটি আরো দূষণহীন পরিবহনের জন্য প্রচার চালাচ্ছে। ‘অপচয়’-এর একটি উদাহরণ তুলে ধরে তিনি বলেন, ‘যেমন বেলজিয়ামে প্রায় ২৪ ঘণ্টাই বৃষ্টি হয়। অথচ আমরা দক্ষিণ প্রশান্ত মহাসাগরে বোতলে ভরা পানি কিনি।’

একই রকম একটি উদাহরণ তুলে ধরে লুসি গিলিয়াম বলেন, ‘উত্তর সাগরে মাছ ধরা হয়। তারপর সে মাছ হিমায়িত করে এশিয়ায় পাঠিয়ে ফিলে করে আবার ফেরত পাঠানো হয়।’ গিলিয়াম ‘সিস অ্যাট রিস্ক’ সংঘের হয়ে কাজ করেন, যার আওতায় একাধিক এনজিও মহাসাগরের সুরক্ষার চেষ্টা চালাচ্ছে। তবে এমন উদ্ভট প্রক্রিয়ার প্রকৃত ব্যয় আড়ালে থেকে যায়। পণ্য পাঠানোর পূর্ণ মূল্য পরিবেশকেই মেটাতে হচ্ছে। আপেক্ষিকভাবে দেখলে শিপিং অত্যন্ত কার্যকর এক প্রক্রিয়া মনে হবে। জাহাজে করে এক টন পণ্য পরিবহন করলে কিলোমিটারপ্রতি ১৬ গ্রাম কার্বন-ডাই-অক্সাইড নির্গত হয়। বিমানযোগে পাঠালে সে মাত্রা আরো অনেক বেশি। কিন্তু সার্বিকভাবে দেখলে গোটা বিষয়টি দুঃস্বপ্নের মতো। লুসি গিলিয়ামের মতে, বিশাল দূরত্বের কারণে কার্বন নির্গমনের মাত্রাও বেশি হয়, যা একটা সমস্যা। কারণ ৮০ শতাংশ জাহাজ হেভি ফুয়েল অয়েল ব্যবহার করে, যা মোটা, চটচটে, দূষণকারী জ্বালানি।

গত মাসের শুরুর দিকে ব্রাজিলের পরিবেশ সংস্থাগুলো দেশটির শতাধিক সমুদ্রতটে অশোধিত তেল ভেসে আসার বিষয়টি লক্ষ্য করে। লাতিন আমেরিকার এই দেশটির পরিবেশমন্ত্রী রিকার্ডো সেলেস চলতি সপ্তাহে জানিয়েছেন, তিন হাজার কিলোমিটার সমুদ্রতট থেকে ১০০ টনের মতো ভেসে আসা তেল সংগ্রহ করা হয়েছে।

জাহাজ শিল্প আমেরিকার সব কয়লা কারখানার তুলনায় কিছুটা বেশি এবং বিমান চলাচল শিল্পের তুলনায় সামান্য কম কার্বন নির্গমন করে। কিন্তু পণ্যবাহী জাহাজ এখনো নজর এড়িয়ে থাকতে পারছে। ফাইগ আবাসভ মনে করিয়ে দিলেন যে, শিপিংই একমাত্র শিল্পক্ষেত্র, যা কার্বন দূষণের মূল্য দেয় না। তিনি আরো বলেন, ‘এটাই একমাত্র শিল্পক্ষেত্র, যেটি জীবাশ্মভিত্তিক জ্বালানি ব্যবহারের জন্য কোনো কর দেয় না। ভ্যাট বা বিক্রয় করও দেয় না। সম্প্রতি বিশ্বনেতারা কমপক্ষে ১৫ শতাংশ করপোরেট ট্যাক্সের হারের বিষয়ে ঐকমত্যে পৌঁছেছেন। কিন্তু একমাত্র জাহাজ পরিবহন শিল্পকে সেটির আওতার বাইরে রাখা হয়েছে।’

কিন্তু দূষণের এত বড় মাত্রা সত্ত্বেও কেন এমনটা ঘটছে? বিশ্ব বাণিজ্যের প্রায় ৯০ শতাংশ জাহাজের মাধ্যমে ঘটে। কিন্তু এ ক্ষেত্রে অদ্ভুত একটা হেঁয়ালি কাজ করে। ধরুন জাপানে তৈরি, আমেরিকার মালিকানার এক ট্যাংকারে কোনো সমস্যা দেখা দিয়েছে। নাবিকরা ফিলিপাইন্সের, ক্যাপ্টেন সাইপ্রাসের এবং জাহাজটি আন্তর্জাতিক জলসীমার ওপর দিয়ে চীন থেকে কানাডার দিকে চলেছে। তাহলে কি পানামাকে সেই সমস্যার দায় নিতে হবে? ‘ট্রান্সপোর্ট অ্যান্ড এনভায়রনমেন্ট; প্রতিষ্ঠানের ফাইগ আবাসভ বলেন, ‘পানামা, মার্শাল দ্বীপপুঞ্জ, লাইবেরিয়া, বাহামা ও মাল্টা- এই পাঁচটি দেশ সম্পর্কে দৈনিক খবরে তেমন কিছু চোখে পড়ে না। এ সব দেশ রাজনীতি বা অর্থনীতির ক্ষেত্রে কোনো বড় শক্তি নয়। কিন্তু শিপিং জগতে ‘কিংমেকার’ হিসেবে তাদের বিশাল প্রতিপত্তি রয়েছে। ‘ফ্ল্যাগ অফ কনভিনিয়েন্স’ নামের এক প্রণালীর জন্য এমনটা ঘটছে।

সূত্র : ডয়সে ভেলে

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close