বদরুল আলম মজুমদার

  ২৫ মে, ২০২২

বৃহৎ ঐক্যের সংলাপ শুরু বিএনপির

বৈঠক হয়েছে নাগরিক ঐক্যের সঙ্গে

বর্তমান সরকারবিরোধী বৃহৎ ঐক্য গড়ার লক্ষ্যে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সংলাপের সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিএনপি। গতকাল মঙ্গলবার বিকালে নাগরিক ঐক্যের সঙ্গে বৈঠক করেছে বিএনপি মহাসচিবের নেতৃত্বে একটি দল। গত ২৩ তারিখে অনুষ্ঠিত জাতীয় স্থায়ী কমিটির বৈঠকে সিদ্ধান্ত অনুযায়ী এ সংলাপ শুরু করেছে দলটি। বৈঠকে উপস্থিত একটি সূত্র জানায়, চলতি মাসের মধ্যে সরকারের বাইরে থাকা সব রাজনৈতিক দলের সঙ্গে প্রথম দফার বৈঠক শেষ করতে চায় বিএনপি।

আগামী কয়েক দিনে অন্য রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে বৈঠকের শিডিউল নির্ধারণ করা হবে বলে জানিয়েছে দলীয় একটি সূত্র। এ দিকে ইসলামপন্থি দলগুলোর সঙ্গেও একই ধরনের বৈঠকের কথা রয়েছে। এমনকি জামায়াতে ইসলামীর সঙ্গে সংলাপে বসার কথা বলেছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তবে আপাতত সরকারের সঙ্গে থাকা ১৪ দল এবং জাতীয় পার্টির সঙ্গে সংলাপ করার কোনো ইচ্ছা নেই বলে জানান বিএনপি নেতারা।

গতকাল মঙ্গলবার সকালে গুলশানে চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর দলের স্থায়ী কমিটির সিদ্ধান্তের কথাগুলো জানান। এদিন নাগরিক ঐক্যের সঙ্গে বিকাল ৫টায় বৈঠক করে বিএনপি। নাগরিক ঐক্যের তোপখানা রোডের কার্যালয়ে এ বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। এতে বিএনপির পক্ষে নেতৃত্ব দেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ ৩ জন এবং নাগরিক ঐক্যর পক্ষে উপস্থিত ছিলেন মান্নার নেতৃত্বে দলের আরো ১০/১২ নেতা।

বৈঠক শেষে বিএনপি মহাসিচব ও নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন। এ সময় তারা উভয়ে একটি বৃহৎ জোট গঠনের বিষয়ে একমত পোষণ করেন। পরে বৈঠকের বিষয়ে জানতে চাইলে মান্না বলেন, অনেক আলোচনা হয়েছে, এখন তেমন বলতে চাই না, পরে বিস্তারিত বলব।

গতকাল সকালে ফখরুল বলেন, স্থায়ী কমিটির সভায় গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের দাবিতে জাতীয় ঐক্য সৃষ্টির লক্ষ্যে আনুষ্ঠানিকভাবে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা শুরু করার সিদ্ধান্ত হয়েছে। তাদের সঙ্গে আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে ঐক্যবদ্ধ আন্দোলনের যে রূপরেখা, সেই রূপরেখা তৈরি করা হবে। এই সংলাপ শুধু ২০ দলীয় জোটের সঙ্গে হবে, না কি অন্যান্য দলের সঙ্গেও হবে- সাংবাদিকরা জানতে চাইলে বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘সবার সঙ্গেই হবে, অল দ্য পলিটিক্যাল পার্টিসের সঙ্গে।’ জামায়াতের সঙ্গে সংলাপ হবে কি না এ প্রশ্নের উত্তরে ফখরুল বলেন, ‘কথা তো বলতে হবে। অবশ্যই। তাদের সঙ্গে কথা না বললে কেমন করে হবে! সবার সঙ্গেই তো কথা বলতে হবে।’

২০ দলীয় জোট থাকবে কি না এ প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘২০ দলীয় জোট তো আমরা এখন পর্যন্ত বিলুপ্ত করিনি। এই জোটের কী হবে, সেটা এই আলোচনার মধ্য দিয়ে ফাইনালাইজড (চূড়ান্ত) করব।’

এই সংলাপের মূল উদ্দেশ্য কী জানতে চাইলে ফখরুল বলেন, মূল উদ্দেশ্য হলো গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার। এই ফ্যাসিবাদী সরকার, যারা সব অধিকার কেড়ে নিয়েছে- এগুলো ফিরিয়ে নিয়ে এসে জনগণ ও ভোটের অধিকারকে প্রতিষ্ঠিত করাই মূল লক্ষ্য। এজন্য আন্দোলন তৈরি করা। এই আন্দোলন সৃষ্টি করার জন্য এই ঐক্যের আলোচনা শুরু করা হচ্ছে।

ঐক্যের মূল ভিত্তিটা কী হবে এই প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, মূল যে দাবিগুলো আছে, এর মধ্যে প্রথম দাবি বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াসহ সব রাজবন্দির মুক্তি দাবি। দ্বিতীয় হচ্ছে, এই সরকারকে পদত্যাগ করতে হবে এবং পদত্যাগ করে নির্দলীয়-নিরপেক্ষ সরকারের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর করতে হবে। তৃতীয় হচ্ছে, সংসদ বাতিল করতে হবে।

তারপর পুনর্গঠিত নির্বাচন কমিশনের অধীনে একটি অবাধ-সুষ্ঠু এবং সবার অংশগ্রহণের মাধ্যমে একটি নির্বাচন অনুষ্ঠিত করতে হবে। সেই নির্বাচনের মধ্য দিয়ে সংসদ গঠিত হবে। এরপর সরকার গঠিত হবে। এই দাবিগুলোই বিএনপির প্রধান দাবি। এখন অন্যান্য দলের সঙ্গে আমরা আলোচনা করব। আর তাদের দাবিগুলো নিয়ে আলোচনা করে একটা একক দাবি তৈরি করা হবে। তার ভিত্তিতে আমরা ঐক্যবদ্ধ আন্দোলন শুরু করব। এটাকে কি জোট বলছেন, জানতে চাইলে বিএনপি মহাসচিব বলেন, আমরা একটা জোট বলছি না। আলোচনার মাধ্যমেই সেগুলো নির্ধারিত হবে।

আলোচনা কি ২০-দলীয় জোটের সঙ্গে হবে, এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আলোচনা সবার সঙ্গেই হবে। আর ২০ দলীয় জোটে তো এখন পর্যন্ত আমরা বিলুপ্ত করি নাই। এই জোটের কি হবে, সেটি ওই আলোচনার মধ্য দিয়ে চূড়ান্ত করা হবে। আর জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের বিষয়েও একই কথা।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close