নরসিংদী প্রতিনিধি

  ২৫ মে, ২০২২

ঋণের কিস্তির দায়মুক্তির জন্য স্ত্রী-সন্তান খুন

নরসিংদীর বেলাবতে স্ত্রী ও দুই সন্তানকে হত্যার রহস্য উদঘাটন করেছে পিবিআই নরসিংদী। স্ত্রীর নামে করা ঋণের চাপ থেকে মুক্তি পেতে, জুয়ার টাকা না পেয়ে ও প্রতিপক্ষকে ফাঁসাতেই দুই সন্তানসহ স্ত্রীকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করেন স্বামী। গত শনিবার গভীর রাতে ছুরি ও ক্রিকেট ব্যাট দিয়ে আঘাত করে স্ত্রী-সন্তান হত্যার পর পালিয়ে নানা নাটক সাজান তিনি। হত্যার পর সকালে স্ত্রী-সন্তানের মরদেহ উদ্ধারের খবর পেয়ে বাড়ি ফিরে প্রতিপক্ষের ওপর হত্যার দায় চাপানোর চেষ্টা করেন গিয়াস উদ্দিন শেখ। গতকাল মঙ্গলবার দুপুরে নরসিংদী পিবিআই কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে এমন তথ্য জানান পিবিআই নরসিংদীর পুলিশ সুপার এনায়েত হোসেন মান্নান।

সংবাদ সম্মেলনে তিনি জানান, হত্যাকাণ্ডের পর পিবিআইয়ের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে স্ত্রী-সন্তানকে হত্যার কথা স্বীকার করেন গিয়াস উদ্দিন শেখ। পরে সোমবার বিকালে নরসিংদীর সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট রকিবুল হকের আদালতেও হত্যার দায় স্বীকার করে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দেন তিনি।

জবানবন্দিতে জানা যায়, গিয়াস উদ্দিন শেখ দীর্ঘদিনের জুয়াড়ি ও বখাটে। জুয়া খেলার অর্থ জোগাতে স্ত্রী রহিমাসহ শ্বশুর, শ্যালকসহ শ্বশুরবাড়ির লোকজনদের মাধ্যমে বিভিন্ন সমিতি, এনজিও এবং ব্যক্তির কাছ থেকে প্রায় ১০ লাখ টাকা ঋণ নেন এবং জুয়ায় খেলে দেউলিয়া হয়ে যায়। ওইসব ধার-দেনার কিস্তির জন্য প্রতি মাসে প্রায় ২২-২৩ হাজার টাকা দরকার হয়। কিন্তু দেউলিয়া গিয়াস উদ্দিনের পক্ষে তা পরিশোধ করা সম্ভব হয় না। অপরদিকে ফের জুয়া খেলার টাকা না পেয়ে সে মাতলামি করতে থাকে।

পুলিশ সুপার এনায়েত হোসেন মান্নান আরো জানান, প্রায় দুই বছর আগে চাচাতো ভাই রেনু শেখ বাড়ির পাশে পুকুর খনন করার সময় গিয়াস উদ্দিনের কাছে চার হাত জায়গা চায়। গিয়াস উদ্দিন অস্বীকৃতি জানালে রেনু শেখ তার বাড়িতে প্রবেশের রাস্তা গিয়াস উদ্দিন শেখ ও তার পরিবারকে ব্যবহারে বাধা দেয়। গিয়াস উদ্দিন সপ্তাহ দুই আগে দুটি আকাশি গাছ বিক্রি করে। রেনু শেখ বাধা দেয়। এ নিয়ে বিবাদ হয়। ফলে রেনু শেখ ও তাদের পরিবারের প্রতি ক্ষুব্ধ হয়ে তাদের ফাঁসাতে নানা ফন্দি আটতে থাকে।

গিয়াস উদ্দিন মনে করে, তার স্ত্রী মারা গেলে তার নামে নেওয়া ঋণ পরিশোধ করতে হবে না। একই সঙ্গে স্ত্রী খুনের দায় প্রতিপক্ষের ওপর চাপায়ে তাদেরও ঘায়েল করা যাবে। তাই শনিবার রাত আড়াইটায় ক্রিকেট খেলার ব্যাট এবং ছুরি দিয়ে প্রথমে স্ত্রী রহিমা বেগমকে পরে ছেলে রাব্বি শেখ এবং মেয়ে রাকিবাকে উপর্যুপরিভাবে আঘাত করে মৃত্যু নিশ্চিত করেন। পরে বাড়ির পেছনে গঙ্গাজরি নদীতে ছুরি ফেলে দিয়ে নদী পার হয়ে ডেভলারটেক নামক স্থানে ঝোপের মধ্যে ক্রিকেট খেলার ব্যাটটি লুকিয়ে রাখে। হেঁটে ভূঁইয়া বাজারে যায়। ভূঁইয়া বাজার থেকে সিএনজি করে গাজীপুরের কাপাসিয়া থানার আড়াল নামক স্থানে তার কর্মস্থলে চলে যায়। গিয়াস উদ্দিনের ছোট ভাই রিয়াজ সকাল পৌনে ৭টার দিকে তার ভাবি ও সন্তানদের নৃশংসভাবে হত্যাকাণ্ডের কথা জানায়। গিয়াস উদ্দিন পুনরায় সিএনজি যোগে বাড়িতে এসে ঘটনার বিষয়ে কোনো কিছু না জানার অভিনয় করতে থাকে।

তাদের বাড়ির জমি, রাস্তা ও গাছ কাটা নিয়ে তার প্রতিপক্ষ চাচাতো ভাই রেনু ও তার পরিবার এই হত্যাকাণ্ড ঘটাতে পারে বলে অভিযোগ উত্থাপন করে এবং ন্যায় বিচার দাবি করে। পরে ঘটনার সম্ভাব্য সময় গিয়াস উদ্দিনসহ তাদের অবস্থান এবং তাদের স্বভাব, আচরণ, পূর্ববর্তী রেকর্ড (পিসিপিআর) সম্পর্কে খোঁজ খবর নেওয়া হয় এবং তার প্রতিটি বক্তব্যের সত্যতা যাচাই-বাছাই করা হয়। একপর্যায়ে গিয়াস উদ্দিনের বক্তব্যে অসংগতির কারণে তার প্রতি সন্দেহ ঘনীভূত হয়। এ ছাড়া তার পরকীয়ার বিষয়টিও নজরে আসে। পিবিআই হেফাজতে জিজ্ঞাসাবাদে গিয়াস উদ্দিন স্ত্রী-সন্তানদের খুনের কথা স্বীকার করে।

পিবিআই পুলিশ সুপার এনায়েত হোসেন মান্নান আরো বলেন, মামলাটির তদন্ত অব্যাহত রয়েছে। গত রবিবার রাতে বেলাব থানায় একটি মামলা দায়ের করেন নিহত রহিমা বেগমের ভাই মোশাররফ হোসেন। ওই মামলায় গিয়াস উদ্দিন শেখকে একমাত্র আসামি করা হয়। মামলাটি তদন্তের জন্য পিবিআইয়ের নিকট হস্তান্তর করা হয়েছে।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close