নিজস্ব প্রতিবেদক
ফুটপাতে জাল স্ট্যাম্প বিক্রি করে ধরা চার জালিয়াত
রাজধানীর মতিঝিল এলাকার ফুটপাতেই বিক্রি হতো জাল জুডিশিয়াল ও নন-জুডিশিয়াল স্ট্যাম্প এবং কোর্ট ফি স্ট্যাম্প। গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে এই জালিয়াতি চক্রের হোতা ফরমান আলীসহ চারজনকে গ্রেপ্তার করেছে র্যাব-৩। তাদের কাছ থেকে বিপুল পরিমাণ জাল জুডিশিয়াল ও নন-জুডিশিয়াল স্ট্যাম্প, কার্টিজ পেপার ও কোর্ট ফি স্ট্যাম্প উদ্ধার করা হয়।
গ্রেপ্তার বাকি তিনজন হলেন মো. তুহিন খান (৩২), মো. আশরাফুল ইসলাম (২৪) ও মো. রাসেল (৪০)। গতকাল শনিবার দুপুরে কারওয়ান বাজারের র্যাব মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা জানান র্যাব-৩ এর অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল আরিফ মহিউদ্দিন আহমেদ।
র্যাব জানিয়েছে, বৈধ ও অবৈধ স্ট্যাম্পের মধ্যে পার্থক্য করা খুবই কঠিন। এসব অবৈধ জাল জুডিশিয়াল ও নন-জুডিশিয়াল স্ট্যাম্প বিক্রির ফলে সরকার যেমন বিপুল পরিমাণ রাজস্ব হারাচ্ছে অন্যদিকে সেবাগ্রহীতারাও পড়ছেন বিপদের মুখে।
আরিফ মহিউদ্দিন আহমেদ জানান, ‘সম্প্রতি র্যাব-৩ ও এনএসআইয়ের গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে জানা যায়, একটি চক্র দীর্ঘদিন ধরে রাজধানীর মতিঝিল এলাকার ফুটপাতে জাল জুডিশিয়াল স্ট্যাম্প, নন-জুডিশিয়াল স্ট্যাম্প, রাজস্ব স্ট্যাম্প বিক্রি করে আসছে। এরই ধারাবাহিকতায় গত শুক্রবার র্যাব-৩ ও জাতীয় জাতীয় নিরাপত্তা গোয়েন্দা সংস্থার (এনএসআই) যৌথ আভিযানিক দল রাজধানীর মতিঝিল এলাকায় অভিযান চালিয়ে চারজনকে গ্রেপ্তার করে।
অভিযানে জব্দ নন-জুডিশিয়াল স্ট্যাম্প ১০০ টাকা মূল্যমানের স্ট্যাম্প ৬ হাজার ৫০০টি, ৫০ টাকা মূল্যমানের স্ট্যাম্প ৩ হাজারটি, ৩০ টাকা মূল্যমানের স্ট্যাম্প ৪০০টি, ২৫ টাকা মূল্যমানের স্ট্যাম্প ৫০০টি, ২০ টাকা মূল্যমানের স্ট্যাম্প ৪ হাজারটি, ১০ টাকা মূল্যমানের স্ট্যাম্প ২ হাজার ৫০০টি, ৫ টাকা মূল্যমানের স্ট্যাম্প ৬ হাজার ৫০০টি, ২ টাকা মূল্যমানের অনুলিপি স্ট্যাম্প ১ হাজার ৫০০টি।
এ ছাড়া, ৫০০ টাকা মূল্যমানের রাজস্ব স্ট্যাম্প ২০০টি, ১০০ টাকা মূল্যমানের রাজস্ব স্ট্যাম্প ৩ হাজার ৬৪০টি, ৫০ টাকা মূল্যমানের রাজস্ব স্ট্যাম্প ৪ হাজার ২০০টি, ২৫ টাকা মূল্যমানের রাজস্ব স্ট্যাম্প ১৬০টি, ২০ টাকা মূল্যমানের রাজস্ব স্ট্যাম্প ৩ হাজার ৭২০টি, ১০ টাকা মূল্যমানের রাজস্ব স্ট্যাম্প ১১ হাজার ২৮০টি, ৫ টাকা মূল্যমানের রাজস্ব স্ট্যাম্প ১৪ হাজার ২৮০টি, ৪ টাকা মূল্যমানের রাজস্ব স্ট্যাম্প ২৪০টি ও ২ টাকা মূল্যমানের রাজস্ব স্ট্যাম্প ৪৮০টি। মোট রাজস্ব স্ট্যাম্প ৩৮ হাজার ২০০টি, যার বর্তমান বাজারমূল্য ৯ লাখ ৩৮ হাজার ৫২০ টাকা।
উদ্ধার স্ট্যাম্পের মোট মূল্য ১৯ লাখ ৩ হাজার ৫২০ টাকা। এ ছাড়া কার্টিজ পেপার ৫ হাজারটি, মনিটর একটি, সিপিইউ একটি, প্রিন্টার একটি ও ৮ লাখ ৮৬ হাজার ৪৬০ টাকাও জব্দ করা হয়।
লেফটেন্যান্ট কর্নেল আরিফ মহিউদ্দিন আহমেদ বলেন, গ্রেপ্তাররা দীর্ঘদিন ধরে জাল জুডিশিয়াল স্ট্যাম্প, নন-জুডিশিয়াল স্ট্যাম্প, রাজস্ব স্ট্যাম্প সংগ্রহ করে বিক্রি করে কোটি কোটি টাকা আয় করছিল। তাদের কাছ থেকে উদ্ধার সব স্ট্যাম্পের কোনো ধরনের কাগজপত্র ও সন্তোষজনক জবাব দিতে পারেনি। গ্রেপ্তাররা কোনো ট্রেজারি চালানও উপস্থাপন করতে পারেনি। গ্রেপ্তার তুহিন খান ও রাসেল অবৈধ জাল স্ট্যাম্প ফুটপাতের ভাসমান দোকানে মতিঝিলের বিভিন্ন স্থানে আর্থিক লাভের আশায় বিক্রি করত। তারা প্রায় ৩ থেকে ৪ বছর ধরে এই প্রতারণা ও জাল জালিয়াতির সঙ্গে জড়িত।’
র্যাব-৩ এর অধিনায়ক বলেন, ফরমান আলী সরকার চক্রের হোতা। তিনি কুড়িগ্রাম সরকারি ডিগ্রি কলেজ থেকে ডিগ্রি পাস করে ১৯৯৩ সাল থেকে স্ট্যাম্প ভেন্ডারের ব্যবসায় জড়িত হন। ফরমান আলী সরকারের বিরুদ্ধে আগেও সিআইডির হাতে একই কর্মকাণ্ডের জন্য মামলা হয়। সেই মামলায় তিনি জেলহাজতে ছিলেন।
লেফটেন্যান্ট কর্নেল আরিফ মহিউদ্দিন আহমেদ বলেন, ঢাকার বাইরে তারা প্রিন্টিংয়ের কাজ করত। তবে অভিযানের জন্য আপাতত আমরা সেই ঠিকানা বলতে চাচ্ছি না।’
বৈধ ভেন্ডরের আড়ালে অবৈধ জাল স্ট্যাম্প কারবারি করছে কি না এমন প্রশ্নের জবাবে র্যাবের এই অধিনায়ক বলেন, আমরা যাদের গ্রেপ্তার করেছি তাদের কাছে কোনো লাইসেন্স ছিল না। তবে লাইসেন্সধারী বৈধ ভেন্ডাররাও জাল স্ট্যাম্প বিক্রি করে। তারা এক লাখ টাকার বৈধ স্ট্যাম্প রাখলেও বাকি ১০ লাখ টাকার অবৈধ স্ট্যাম্প রাখছে।
"