প্রতিদিনের সংবাদ ডেস্ক

  ২০ মে, ২০২২

সাগরে মৎস্য শিকারে নিষেধাজ্ঞা, অপ্রতুল বরাদ্দে ক্ষোভ

প্রজননসহ সামুদ্রিক মৎস্যসম্পদ বৃদ্ধির জন্য ২০ মে থেকে ২৩ জুলাই পর্যন্ত দেশের সমুদ্রসীমায় ইলিশসহ সব ধরনের মাছ আহরণ ও বিপণন নিষিদ্ধ করেছে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়। তবে জেলে ও সংশ্লিষ্টরা বলছেন, একই সময়ে ভারতের জলসীমায় একই ধরনের নিষেধাজ্ঞা জারি না হলে এসব বিধিনিষেধ কাজে আসবে না। তা ছাড়া নিষেধাজ্ঞাকালীন ভারতীয় জেলেরা বাংলাদেশের জলসীমায় প্রবেশ করে অবাধে মাছ ধরে নিয়ে যাচ্ছে বলে অভিযোগ জেলেদের। অপর দিকে নিষেধাজ্ঞাকালীন জেলেদের অপ্রতুল খাদ্য সহায়তার কথা বলছেন তারা। প্রতিনিধিদের পাঠানো রিপোর্ট-

শরণখোলা (বাগেরহাট) : বাগেরহাটের শরণখোলায় তালিকাভুক্ত সমুদ্রগামী জেলে চার হাজার। ৬৫ দিনের মৎস্য শিকারে নিষেধাজ্ঞাকালীন উপজেলার চার ইউনিয়নের তালিকাভুক্ত ৪ হাজার ১২০ জন জেলের বিপরীতে খাদ্য সহায়তার বরাদ্দ এসেছে মাত্র ৩৭৪ জনের। এ নিয়ে হতাশা দেখা দিয়েছে জেলে পরিবারের মধ্যে ও বিপাকে পড়েছেন উপজেলার চার ইউনিয়নের ইউপি চেয়ারম্যানসহ সংশ্লিষ্ট ওয়ার্ডের জনপ্রতিনিধিরা। এ বিষয়ে সম্প্রতি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত সভায় বরাদ্দ বাড়ানোর দাবি জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট ইউপি চেয়ারম্যানরা। উপজেলার চারটি ইউনিয়ন পরিষদ তথ্য সূত্রে জানা গেছে, উপজেলার ধানসাগর ইউনিয়নে সমুদ্রগামী তালিকাভুক্ত জেলে সংখ্যা ৫৮০ এর মধ্যে খাদ্য সহায়তা এসেছে ৫০ জন, খোন্তাকাটা ইউনিয়নে ৯০০ জেলের মধ্যে ১০৪ জন, রায়েন্দা ইনিয়নে ১২০০ জেলের মধ্যে ১১০ জন ও উপজেলার সিডর ও আয়লা বিধ্বস্ত জনপদ সাউথখালী ইউনিয়নের ১৪৪০ জেলের অনুকূলে খাদ্য সহায়তার বরাদ্দ এসেছে মাত্র ১১০ জনের।

শরণখোলা উপজেলা ফিশিং ট্রলার মালিক সমিতির সভাপতি মো. আবুল হোসেন হাওলাদার ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, নিষেধাজ্ঞার সময় আমাদের জেলেরা সাগরে মাছ ধরতে না পারায় ভারতীয় জেলেরা সেই সুযোগে মাছ ধরে নিয়ে যায়। এ বছর প্রয়োজনের তুলনায় কম বরাদ্দ আসায় অনেক জেলে পরিবারকে না খেয়ে দিন কাটাতে হবে। তা ছাড়া ভারত ও বাংলাদেশে একই সময়ে ৬৫ দিনের নিষেধাজ্ঞা দেওয়ার দাবি জানান তিনি।

রায়েন্দা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. আজমল হোসেন মুক্তা জানান, রায়েন্দা ইউনিয়নে সমুদ্রগামী জেলের সংখ্যা ১২০০। কিন্তু খাদ্য সহায়তা এসেছে মাত্র ১১০ জনের। যা বিতরণ করা একজন জনপ্রতিনিধির পক্ষে খুবই কষ্টসাধ্য ও বিব্রতকর।

উপজেলা সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা বিনয় কুমার রায় বলেন, শরণখোলায় মোট জেলে সংখ্যা ৬ হাজার ৭৪৪। তাদের মধ্যে সমুদ্রগামী জেলে সংখ্যা চার হাজারের বেশি। ৬৫ দিন মাছ ধরা বন্ধ থাকাকালীন জেলেপ্রতি ৮৬ কেজি করে চাল বরাদ্দ হয়েছে। সে হিসাবে উপজেলায় প্রথম কিস্তিতে ৩৭৪ জন জেলের চাল বরাদ্দ পাওয়া গেছে। শিগগিরই দ্বিতীয় কিস্তিতে আরো বরাদ্দ আসবে। কম বরাদ্দের বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করা হয়েছে। শরণখোলা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. নুর-ই আলম সিদ্দিকী বলেন, বিষয়টির সমাধানে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে লিখিতভাবে জানানো হবে।

পাথরঘাটা (বরগুনা) : মাছ ধরা বন্ধ থাকায় বেকার হয়ে পড়বেন উপকূলীয় পাথরঘাটার প্রায় ৫০ হাজার জেলে ও শ্রমিকরা। পরিবার-পরিজন নিয়ে কীভাবে দিন কাটাবেন সে চিন্তায় দিশাহারা হয়ে পড়ছেন তারা। পাথরঘাটা উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, পাথরঘাটায় নিবন্ধিত জেলে রয়েছেন ১১ হাজার ৪১১ জন। নিবন্ধিত প্রত্যেক জেলে দুই ধাপে ৮৬ কেজি সরকারের বরাদ্দ চাল পাবেন। গতকাল দেশের বৃহত্তম মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র (বিএফডিসি) বরগুনার পাথরঘাটায় দেখা যায়, সাগরে ইলিশ ধরতে যাওয়া উপজেলার প্রায় সব এলাকার জেলেদের ট্রলার ঘাটে অবস্থান করেছে। এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত কিছু জেলে সাগরে থাকলে তারাও ঘাটের উদ্দেশে ফিরছেন বলে জানা গেছে। এ সময় জেলেদের সঙ্গে কথা বললে তারা জানান, প্রতি বছর বছর ইলিশের মৌসুম শুরুতেই ইলিশ শিকারে ৬৫ দিনের নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়। এতে উপজেলার প্রায় ৫০ হাজার জেলে ও শ্রমিককে না খেয়ে জীবনযাপন করতে হয়। নিবন্ধিত জেলেদের সরকার চাল দিলেও অনিবন্ধিতত জেলে ও শ্রমিকরা কোনো সহায়তা পান না।

বরগুনা জেলা মৎস্যজীবী ট্রলার মালিক সমিতির সভাপতি গোলাম মোস্তফা চৌধুরী বলেন, বাংলাদেশের জেলেরা আইন মেনে মাছ শিকার বন্ধ রাখলেও ভারতীয় জেলেরা বাংলাদেশ জলসীমায় এসে মাছ শিকার করে নিয়ে যায়। অন্যদিকে কিছু অসাধু জেলেরা নিষিদ্ধ বেহুন্দী, গড়া, বাঁধা, ঘোপ জাল দিয়ে ছোট মাছ শিকার করছেন। এগুলো বন্ধ করা না গেলে এসব নিষেধাজ্ঞা কোনো কাজে আসবে না। পাথরঘাটা উপজেলা সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা জয়ন্ত কুমার (অপু) বলেন, নিষেধাজ্ঞার আগে তেমন ইলিশ ধরা না পড়লেও নিষেধাজ্ঞার পরে প্রচুর ইলিশ ধরা পড়বে, এমনটা আশা করছেন মৎস্য বিভাগ। পাথরঘাটা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) হোসাইন মুহাম্মদ আল-মুজাহিদ বলেন, এই আইন বাস্তবায়নে মৎস্য অধিদপ্তর, নৌবাহিনী, কোস্টগার্ড, পুলিশ, উপজেলা প্রশাসন ও স্থানীয় মৎস্য দপ্তরের উদ্যোগে ব্যাপকভাবে অভিযান পরিচালনা করা হবে। নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের নেতৃত্বে চলবে ভ্রাম্যমাণ আদালত। আইন অমান্য করলে সামুদ্রিক মৎস্য আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close