খুলনা ব্যুরো

  ১৫ মে, ২০২২

খুলনাঞ্চলের উপকূলে সুপেয় পানির সংকট

* কাজে আসছে না কোনো উদ্যোগ * টেকসই পরিকল্পনার পরামর্শ

খুলনাঞ্চলের উপকূলীয় ১০ উপজেলার মানুষ সুপেয় পানির তীব্র সংকটে ভুগছে। বছরের ৬ মাস তাদের এ কষ্ট সইতে হয়। পানি সমস্যা সমাধানে সরকারি-বেসরকারি নানা উদ্যোগ গ্রহণ করা হলেও তা কাজে আসে না। স্বল্প, মধ্য ও দীর্ঘমেয়াদি টেকসই পরিকল্পনা নিয়ে সামনে এগোনোর পরামর্শ দিচ্ছেন বিশেষজ্ঞরা।

জানা গেছে, বছরের জুলাই থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত তারা ভালোভাবে পানযোগ্য পানি পেয়ে থাকেন। বাকি ৬ মাস তাদের পানির জন্য সংগ্রাম করতে হয়। খুলনার কয়রা, দাকোপ, পাইকগাছা, বটিয়াঘাটা উপজেলা, সাতক্ষীরার আশাশুনি, শ্যামনগর ও কালীগঞ্জ উপজেলা এবং বাগেরহাটের রামপাল, মোংলা ও মোড়েলগঞ্জ উপজেলার মানুষ বেশি পানির কষ্টে ভোগেন।

ভুক্তভোগীরা জানাচ্ছেন, এসব এলাকায় পানি সমস্যা সমাধানে স্বল্পমেয়াদি উদ্যোগ আরো দুর্ভোগ বাড়িয়েছে। স্থাপন করা পিএসএফ ও রেইন ওয়াটার হার্ভেস্টিং প্লান্ট সংরক্ষণের অভাবে দ্রুত নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। পরে সেগুলো আর মেরামত বা সংরক্ষণ করা হয় না। সরকারি উদ্যোগের কারণে স্থানীয় মানুষ পানি সংরক্ষণে নিজস্ব পদ্ধতি ব্যবহারেও আগ্রহ হারাচ্ছে। ফলে কষ্ট লাঘব হচ্ছে না। এছাড়া এনজিওগুলো পৌর এলাকায় ওভারহেড ট্যাংকের মাধ্যমে পাইপলাইনে পানি সরবরাহ, রিভার্স অসমোসিস প্লান্ট, বায়ো স্যান্ড ফিল্টার বসানোর পর সেগুলোও নষ্ট হচ্ছে। প্রকৃতি নির্ভর টেকসই প্রকল্প গ্রহণ না করায় এর সুফল পাচ্ছে না মানুষ।

খুলনা জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের দেওয়া তথ্য মতে, জেলার ৬৭ শতাংশ মানুষ সুপেয় পানি ব্যবহার করতে পারে। বাকি ৩৩ শতাংশ মানুষকে নিজস্ব পদ্ধতিতে পানির জোগান দিতে হয়। তবে সরকারি এ হিসাবের সঙ্গে একমত নন বেসরকারি সংস্থার কর্মকর্তারা। সংস্থাটির নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আকমল হোসেন জানিয়েছেন, জেলায় ১ হাজার ৮৪৮টি নলকূপ চালু রয়েছে। যেগুলো দিয়ে সুপেয় পানি উত্তোলন করা হয়। এছাড়া ২ হাজারের মতো রেইন ওয়াটার হার্ভেস্টিং ও পিএসএফ প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। একই সঙ্গে জেলার সুপেয় পানি সমস্যা সমাধানে দাকোপে আরো ফিল্টার স্থাপন, দাকোপ, পাইকগাছা ও কয়রা উপজেলায় জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর এবং মহিলাবিষয়ক অধিদপ্তরের উদ্যোগে কমিউনিটিভিত্তিক ১৫ হাজার লিটার ধারণক্ষমতাসম্পন্ন রেইন ওয়াটার হার্ভেস্টিং প্লান্ট স্থান করা হচ্ছে। এগুলো বাস্তবায়ন হলে ওই এলাকার মানুষের দুর্ভোগ কিছুটা কমবে।

প্রাকৃতিক দুর্যোগ এবং স্থানীয় মানুষের অসচেনতায় পিএসএফ এবং বৃষ্টির পানি সংরক্ষণাগারগুলো নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। ২০১৮ সালে দাকোপের তিলডাঙ্গা ইউনিয়নের বটবুনিয়ায় একটি পিএসএফ স্থাপন করে দুস্থ স্বাস্থ্য কেন্দ্র (ডিএসকে)। স্থানীয়রাই এটির দেখাশোনা করত। দুই বছর পর ২০২০ সালের ঘূর্ণিঝড় আম্পানে পুকুরটি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এরপর থেকে সেটি বন্ধ রয়েছে। মানুষের পানির জন্য এখন মজা পুকুরের পানিই পান করতে হচ্ছে।

২০১১ সালে কয়রার বাগালী ইউনিয়নের বাঁশখালী মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে একটি পিএসএফ বসায় জেজেএস। ২০১৬ সালের ২০ আগস্ট একই স্কুলে দুই হাজার লিটার ধারণক্ষমতার রেইন ওয়াটার হার্ভেস্টিং সিস্টেম স্থাপন করে একই বেসরকারি সংস্থা। বর্তমানে এই দুটি পদ্ধতি থেকে আর পানি পাচ্ছে না মানুষ। এগুলো রক্ষণাবেক্ষণ না করায় দুটোই নষ্ট হয়েছে।

এই গ্রামের বাসিন্দা আবদুস সাত্তার বলেন, আমাদের বাড়ি থেকে বাঁশখালী স্কুল প্রায় ৫ কিলোমিটার দূরে। প্রথম দিকে আমরা ভালো পানি পেতাম। তবে এখন ওই সিস্টেম নষ্ট হয়ে গেছে। আমরা এখন এলাকার পুকুরের পানি খাই।

দক্ষিণ বেদকাশি ইউনিয়নের বাসিন্দা আনোয়ার হোসেন বলেন, আমাদের এলাকায় চারদিকে (নদীর পানি) পানি। তবে খাবার পানি আনতে হয় ৮ কিলোমিটার দূরের একটি নলকূপ থেকে। সরকার যে উদ্যোগই নেয় প্রতি বছরের ঝড়ে তা নষ্ট হয়ে যায়। লবণ পানির ব্যবহারের কারণে এলাকার নারী ও শিশুদের মধ্যে রোগ বাড়ছে। দুর্গম এলাকা হওয়ায় কেউ কাউকে সাহায্য পর্যন্ত করতে পারে না।

পানি সমস্যা নিয়ে কাজ করে বেসরকারি সংস্থা এওসেড। সংস্থাটির নির্বাহী পরিচালক শামীম আরেফিন বলেন, এ অঞ্চলে প্রতি তিন কিলোমিটাররের মধ্যে পরিবেশ এবং প্রতিবেশ পরিবর্তন হয়। একইভাবে ভূগঠনও ভিন্ন। পৃথিবীতে এমন অবস্থা আর কোথাও আছে কিনা জানা নেই। এর জন্য প্রয়োজন দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা। মানুষের সমস্যা সমাধানে সরকারি বেসরকারিসহ সব দপ্তরের সমন্বয়ে স্বল্প, মধ্য এবং দীর্ঘমেয়াদি উন্নয়ন পরিকল্পনা গ্রহণ করা প্রয়োজন। তাহলে অর্থের অপচয় হবে না এবং মানুষ সুফল ভোগ করতে পারবে।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close