নিজস্ব প্রতিবেদক

  ১৪ মে, ২০২২

জুনে পদ্মা সেতু উদ্বোধন, জুলাইয়ে বসছে রেললাইন

সব কাজ শেষ, এবার উদ্বোধনের অপেক্ষা পদ্মা সেতু। এরই মধ্যে মূল সেতুর প্রায় ৯৮ শতাংশ কাজ শেষ। প্রকল্পের সার্বিক কাজের অগ্রগতি হয়েছে ৯৩ দশমিক ৫০ শতাংশ এবং নদীশাসনের কাজ শেষ হয়েছে ৯২ শতাংশ। সেতুর কার্পেটিংয়ের কাজ ৯১ শতাংশ শেষ।

সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেছেন, প্রধানমন্ত্রী সময় দিলে আগামী জুন মাসে পদ্মা বহুমুখী সেতু উদ্বোধন করা হবে। এদিকে, সেতুর হাঁটার জায়গা ও গ্যাসের পাইপলাইন স্থাপনের কাজও শেষের পথে। আগামী জুলাইয়ের মাঝামাঝি সময় বাংলাদেশ রেলওয়েকে তাদের কাজ করার জন্য সেতুটি হস্তান্তর করা হবে বলে জানিয়েছে বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষ। তবে এখনো তারিখ ঠিক হয়নি।

জানা গেছে, সেতু বুঝে পাওয়ার পর তাতে রেললাইন বসাতে সময় লাগবে প্রায় ছয় মাস। চলতি বছরের ১৬ ডিসেম্বর পদ্মা সেতুতে ট্রেন চালাতে চায় রেল কর্তৃপক্ষ। রেলের কর্ম পরিকল্পনা অনুযায়ী, মাওয়া থেকে ভাঙ্গা অংশের কাজ এ বছরই শেষ হবে। আর ঢাকা থেকে মাওয়া এবং ভাঙ্গা থেকে যশোর পর্যন্ত রেলপথের কাজ শেষ হবে আগামী বছর।

পদ্মা সেতু রেলসংযোগ প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক আফজাল হোসেন বলেন, সেতু বিভাগ নির্দিষ্ট তারিখ না দিলেও জুলাইয়ের মাঝামাঝি রেল সেতু বুঝিয়ে দেবে বলে জানিয়েছে। সেতু বুঝে পাওয়ার পর ডিসেম্বরে ট্রেন চালানোর লক্ষ্যে আমরা দ্রুত কাজ শুরু করব। আমাদের অন্য অংশের কাজগুলো পুরোদমে চলছে।

৩৯ হাজার ২৪৬ কোটি ৮০ লাখ টাকা ব্যয়ে নির্মাণাধীন পদ্মা সেতু রেলসংযোগ প্রকল্পে ১৮ হাজার ২১০ কোটি ১১ লাখ টাকা দিচ্ছে বাংলাদেশ সরকার। বাকি ২১ হাজার ৩৬ কোটি ৬৯ লাখ টাকা ঋণ দিয়েছে চায়না এক্সিম ব্যাংক। প্রকল্পের মেয়াদ ধরা হয় ২০১৬ সালের ১ জানুয়ারি থেকে ২০২৪ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত। ২০১৬ সালের ২৭ এপ্রিল প্রকল্পটি সরকারের ফার্স্ট ট্র্যাক প্রকল্পের তালিকাভুক্ত করা হয়।

তিন ভাগে বিভক্ত প্রকল্পের কাজ হচ্ছে ঢাকা-মাওয়া, মাওয়া-ভাঙ্গা ও ভাঙ্গা-যশোর অংশে। এর মধ্যে ঢাকা-মাওয়া ও ভাঙ্গা-যশোরের বাস্তবায়নকাল ধরা হয়েছে ২০২৩ সাল। আর মাওয়া-ভাঙ্গা সেকশনের মেয়াদ ধরা হয়েছে ২০২২ সাল। প্রকল্পের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান চায়না রেলওয়ে গ্রুপ লিমিটেড (সিআরইসি)। পরামর্শক প্রতিষ্ঠান হিসেবে কাজ করছে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর কনস্ট্রাকশন সুপারভিশন কনসালট্যান্ট (সিএসসি)।

পদ্মা রেল সংযোগ প্রকল্পের সর্বশেষ ৩০ এপ্রিল পর্যন্ত অগ্রগতি প্রতিবেদনের তথ্য বলছে, মাওয়া-ভাঙ্গা অংশের কাজের অগ্রগতি হয়েছে ৭৮ শতাংশ। ঢাকা-মাওয়া অংশের অগ্রগতি ৫৫ শতাংশ আর ভাঙ্গা-যশোর অংশের নির্মাণকাজের অগ্রগতি হয়েছে ৪৯.৫০ শতাংশ। পুরো প্রকল্পের সার্বিক ভৌত অগ্রগতি হয়েছে ৫৭.৫০ শতাংশ।

প্রকল্প পরিচালক আফজাল হোসেন বলেন, সেতুর মাওয়া প্রান্তে প্রায় দেড় কিলোমিটার রেললাইন বসানো হয়েছে। জাজিরা প্রান্তে প্রায় আড়াই কিলোমিটার এবং কেরানীগঞ্জ এলাকায় প্রায় চার কিলোমিটার রেললাইন বসানোর কাজ শেষ হয়েছে। এখন প্রতিদিন ৫০ জনের একটি গ্রুপ ৫০০ মিটার করে রেললাইন বসাচ্ছে। চাইলে দুই প্রান্ত মিলিয়ে প্রতিদিন এক কিলোমিটার রেললাইন বসানো সম্ভব।

রেলের কর্মপরিকল্পনা অনুযায়ী, প্রথম ধাপে মাওয়া থেকে ভাঙ্গা পর্যন্ত পদ্মা সেতুর ওপর দিয়ে ট্রেন চলার কথা। যদিও এক অনুষ্ঠানে রেলপথমন্ত্রী নূরুল ইসলাম সুজন বলেছিলেন, ২০২২ সালের ডিসেম্বরে ঢাকা থেকে ভাঙ্গা পর্যন্ত ট্রেন চালানোর লক্ষ্য নিয়ে কাজ করা হচ্ছে।

প্রকল্প পরিচালক বলেন, মূলত ব্রিজ, কালভার্ট আর মাটির কাজ করতে বেশি সময় লাগে। আমরা এই কাজগুলো প্রায় শেষ করে ফেলেছি। বাকি কাজগুলো নির্ধারিত সময়ের মধ্যে শেষ করা সম্ভব।

পদ্মা সেতুতে যান চলাচল শুরু হওয়ার পর নিচে রেললাইন বসাতে কোনো সমস্যা হবে কি না জানতে চাইলে প্রকল্প পরিচালক বলেন, এমন সমস্যা হওয়ার নজির অন্য কোনো সেতুতে নেই। ঠিকাদাররা তাদের অভিজ্ঞতা থেকে জানিয়েছেন, গাড়ি স্বাভাবিক গতিতে চলতে পারবে। তবুও প্রথম দিকে আমরা পর্যবেক্ষণ করব। সমস্যা হলে সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close