নিজস্ব প্রতিবেদক

  ১৪ মে, ২০২২

আগারগাঁও পাসপোর্ট অফিস

লাইন লম্বা, ভোগান্তি শুরু থেকে শেষ

সেবাপ্রার্থীদের ভোগান্তি পিছু ছাড়ছেই না রাজধানীর আগারগাঁও পাসপোর্ট অফিসে। সকালে এসে দুপুর পেরিয়ে যায়, পাসপোর্ট জমা দিতে আসাদের লাইন যেন এগোয় না। অপেক্ষমাণ সেবাপ্রার্থীদের বসা তো দূরের কথা ঠিকঠাক দাঁড়ানোরও জায়গা নেই আগারগাঁও পাসপোর্ট অফিসে। এছাড়া কাজ দ্রুত করে দেওয়ার নামে আছে দালালদের দৌরাত্ম্যও। আসলে আবেদন জমা, সংশোধন, ছবি তোলা, আঙুলের ছাপ নেওয়ার প্রতিটি ধাপেই সেবাপ্রার্থীদের লম্বা লাইন। কী রোদ, কী বৃষ্টি; এই লাইন ছাড়িয়ে যায় আশপাশের রাস্তাও। আবার পাসপোর্ট নিতে গিয়েও ঘণ্টার পর ঘণ্টা থাকতে হয় দাঁড়িয়ে।

পাসপোর্ট অফিসে আসা এক ভুক্তভোগী বলেন, আমরা এখানে পাসপোর্টের জন্য এসেছি, দুর্যোগের পর ত্রাণ নিতে আসিনি। আমরা যথাযথ ফি দিয়ে আবেদন করেছি। অন্তত একটু বসার জায়গা থাকা উচিত।

ভোগান্তির বিষয়ে জানতে চাইলে আগারগাঁও পাসপোর্ট কার্যালয়ের পরিচালক আবদুুল্লাহ আল মামুন বলেন, ৫০০ মানুষকে সেবা দেওয়ার জনবল ও অবকাঠামো নিয়ে দুই হাজার ৫০০ মানুষকে সেবা দিতে গেলে সেবার মান তো কমবেই। ১০টা অফিসের কাজ আমরা ৩টা অফিস করে যাচ্ছি। বিশেষ করে আগারগাঁওয়ে তুলনামূলক চাপ অনেক বেশি।

আবদুল্লাহ আল মামুন বলেন, আগারগাঁও অফিসে প্রতিদিন দুই হাজার ৫৬০টি আবেদন ফরম গ্রহণ করা হয়। সমপরিমাণ বা তার বেশি পাসপোর্ট ডেলিভারি দেওয়া হয়।

এদিকে, সরকার প্রত্যেক নাগরিককে ই-পাসপোর্ট দেওয়া শুরু করেছে। বিশ্বে কয়েকটি দেশে আধুনিক প্রযুক্তিনির্ভর এই পাসপোর্ট দেওয়া হয়। নতুন আবেদনকারী প্রত্যেক নাগরিক ই-পাসপোর্ট পাচ্ছেন। তাই মেশিন রিডেবল পাসপোর্ট (এমআরপি) দেওয়া বন্ধ রয়েছে। এমআরপির মেয়াদ শেষ হওয়ায় যারা আবেদন করছেন তারাও ই-পাসপোর্ট পাচ্ছেন।

কিভাবে আবেদন করবেন : ই-পাসপোর্টের জন্য আবেদন ফরম অনলাইনে পূরণ করতে হয়। ইমিগ্রেশন ও পাসপোর্ট অধিদপ্তরের ওয়েবসাইটে ই-পাসপোর্টের জন্য অনলাইনে আবেদন ফরম রয়েছে। কয়েকটি ধাপে এই ফরমে ব্যক্তিগত তথ্য দিয়ে অনলাইনে সাবমিট করতে হয়। ফরম পূরণ করার সময় আপনি পছন্দ অনুযায়ী সাক্ষাতের তারিখ নির্ধারণ করতে পারবেন। তবে ওই দিন অবশ্যই সাক্ষাতের নির্দিষ্ট আসন যদি খালি থাকে, তাহলে আপনার পছন্দের তারিখ অনলাইনে গ্রহণ হবে, না হলে অন্য তারিখ নির্বাচন করতে হবে।

প্রাপ্তবয়স্ক হলে জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি) নম্বর ফরমে দিতে হবে। ১৮ বছরের কম বয়সি হলে তাকে জন্মনিবন্ধন দিতে হবে। আবেদন সাবমিট করার পর সেটি সফলভাবে অনলাইনে গ্রহণ হলে এক সেট প্রিন্ট করতে হবে।

ব্যাংকে ফি জমা : ই-পাসপোর্ট আবেদন অনলাইনে দাখিল করার পর নির্ধারিত ব্যাংকে ফি পরিশোধ করতে হয়। পাসপোর্ট ফি পরিশোধের সময় আবেদনকারীর প্রিন্ট করা আবেদন ফরমের সেটটি নিয়ে যেতে হবে। এ সময় জাতীয় পরিচয়পত্র সঙ্গে রাখতে হবে, ব্যাংকে জাতীয় পরিচয়পত্রের ফটোকপি জমা রাখবে।

পাসপোর্ট ফি : ৪৮ পাতার পাসপোর্টের মেয়াদ ৫ বছর। সাধারণ ডেলিভারি, ২১ দিন, ফি ৪০২৫ টাকা। এক্সপ্রেস ডেলিভারি ১০ দিন, ফি ৬৩২৫ টাকা। সুপার এক্সপ্রেস ডেলিভারি ২ দিনে ৮৬২৫ টাকা।

৪৮ পাতার পাসপোর্টের মেয়াদ ১০ বছর। সাধারণ ডেলিভারি ২১ দিন, ফি ৫৭৫০ টাকা, এক্সপ্রেস ডেলিভারি ১০ দিন, ৮০৫০ টাকা, সুপার এক্সপ্রেস ডেলিভারি ২ দিন, ১০৩৫০ টাকা।

৬৪ পাতার পাসপোর্টের মেয়াদ ১০ বছর। সাধারণ ডেলিভারি ২১ দিন, ফি ৬৩২৫ টাকা, এক্সপ্রেস ডেলিভারি ১০ দিন, ফি ৮৬২৫ টাকা, সুপার এক্সপ্রেস ডেলিভারি ২ দিন, ফি ১২০৭৫ টাকা।

আর ৬৪ পাতার পাসপোর্টের মেয়াদ ১০ বছর। সাধারণ ডেলিভারি, ২১ দিন, ফি ৮০৫০ টাকা, এক্সপ্রেস ডেলিভারি ১০ দিন, ফি ১০৩৫০ টাকা, সুপার এক্সপ্রেস ডেলিভারি ২ দিন, ১৩৮০০ টাকা।

যেসব ব্যাংকে ফি জমা দেওয়া যাবে : ওয়ান ব্যাংক, প্রিমিয়ার ব্যাংক, সোনালী ব্যাংক, ট্রাস্ট ব্যাংক, ব্যাংক এশিয়া, ইসলামী ব্যাংক এবং ঢাকা ব্যাংকে নির্ধারিত ফি পরিশোধ করতে হয়। ব্যাংক কর্মকর্তা একটি রিসিট ফরমের সঙ্গে অ্যাটাচ করে দিবেন, ব্যাংকের জমা রিসিট নম্বরটি আবেদন ফরমের নির্ধারিত কলামে লিখে দিবেন।

ব্যাংকে টাকা জমা দেওয়ার পর সাক্ষাতের প্রস্তুতি বা আবেদন ফরমটি আঞ্চলিক অফিসে জমা দেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু হয়। এজন্য আপনাকে আবেদন ফরমে উল্লেখিত নির্ধারিত তারিখে আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিসে যেতে হবে। এ সময় আবেদন ফরমটির সঙ্গে জাতীয় পরিচয়পত্র বা জন্মনিবন্ধন সনদ সঙ্গে রাখতে হবে। আপনার পেশার পরিচয়পত্রটিও রাখুন। আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিসের নির্ধারিত কাউন্টারে আবেদনপত্রটি জমা দিতে হবে।

ছবি তোলা ও বায়োমেট্রিক : ই-পাসপোর্টের সব কার্যক্রম একদিনেই সম্পন্ন হয়। আবেদন ফরমটি জমা দেওয়ার পর দুটি কাউন্টারে সেটি ভালো করে যাচাই-বাছাই করা হয়। আবেদনপত্রে দেওয়া তথ্যগুলো ঠিক আছে কিনা দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা তা দেখবেন। সবকিছু ঠিকঠাক থাকলে তিনি আবেদন ফরমটি সার্ভারে রানিং করে দিবেন- এভাবে পরের ধাপের কার্যক্রম শুরু হবে। এরপর ছবি তোলা ও বায়োমেট্রিকের জন্য আবেদনকারীকে অন্য একটি কক্ষে পাঠানো হয়। ছবি তোলার জন্য অবশ্যই রঙ্গিন পোশাক পরতে হবে। সাদা পোশাক পরে ছবি তোলা যাবে না। কপালে টিপ পরা যাবে না, মুখে মেকআপ করা যাবে না, চোখে এমন কিছু ব্যবহার করা যাবে না, যাতে চোখের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য বিকৃত হয়। ছবি তোলার সময় কান বের করে রাখতে হবে। তাই মাথায় এমনভাবে কাপড় পরা যাবে না, যাতে কান দেখা না যায়। এক্ষেত্রে যিনি ছবি তুলবেন তিনি আপনাকে পরামর্শ দিয়ে সহযোগিতা করবেন।

বায়োমেট্রিক ও ছবি তোলার সময় দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আবেদন ফরমে কোনো ভুল রয়েছে কিনা তা পুনরায় জানতে চাইবেন, নাম বা তথ্যগত ভুল হলে তখনই বলতে হবে, কারণ এরপর আর পরিবর্তনের সুযোগ নেই। এরপর আপনার বায়োমেট্রিক সম্পন্ন করে ডিজিটাল স্বাক্ষর নেওয়া হবে, ছবি তুলে আপনাকে একটি ডেলিভারি রিসিট দিয়ে বিদায় দেওয়া হবে। রিসিটে পাসপোর্ট ডেলিভারির তারিখ দেওয়া থাকবে। ওই তারিখ অনুযায়ী আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিস থেকে পাসপোর্ট সংগ্রহ করতে হবে।

পুলিশ ভেরিফিকেশন : পাসপোর্টপ্রাপ্তির ক্ষেত্রে পুলিশ ভেরিফিকেশন গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। পুলিশ ভেরিফিকেশন ইতিবাচক না হলে, আবেদনকারী পাসপোর্ট পাবেন না। প্রথম কোনো নাগরিক পাসপোর্টের জন্য আবেদন করলে, তাকে অবশ্যই পুলিশ ভেরিফিকেশন রিপোর্ট নিতে হবে। রি-ইস্যুর ক্ষেত্রে প্রয়োজন নেই। তবে রি-ইস্যুর সময় যদি বাবার নাম, স্থায়ী ঠিকানা, বৈবাহিক অবস্থার তথ্য পরিবর্তন করতে চান, তাহলেও পুলিশ ভেরিফিকেশন প্রয়োজন। এক্ষেত্রে রি-ইস্যু হলেও আবেদনকারীকে পুলিশ ভেরিফিকেশন রিপোর্ট নিতে হবে।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close