নিজস্ব প্রতিবেদক

  ১৩ মে, ২০২২

করোনা মোকাবিলা : সেবায় সামনে সুবিধায় পিছিয়ে সেবিকারা

করোনা মহামারিকালে সম্মুখসারির অন্যতম যোদ্ধা ছিলেন সেবিকারা। সংক্রমণভীতি উপেক্ষা করে আক্রান্ত রোগীদের পাশে থেকেই তারা দিয়েছেন নিরলস সেবা। অনেক সময় পর্যাপ্ত সুরক্ষা ব্যবস্থাও হয়তো পাননি। তাতেও সেবাদানে পিছপা হননি তারা। দেশে মহামারি শুরুর পর সম্মুখসারির যোদ্ধাদের জন্য প্রধানমন্ত্রী বিশেষ প্রণোদনা ঘোষণা করলেও তা অনেকেই ঠিকমতো পাননি। নার্সিং অধিদপ্তর থেকে ২২ হাজার ৮৩ জন সেবিকার জন্য প্রণোদনার আবেদন করা হলেও পেয়েছেন ১৩ হাজার ৫৫২ জন। বাকিদের আবেদন মন্ত্রণালয়ে গেলেও প্রণোদনা পাননি তারা।

করোনা সংক্রমণের সবচেয়ে কঠিন দিনগুলোতেও সেবার মানসিকতা নিয়ে পেশাগত দায়িত্ব পালন করার সময় পাঁচ হাজারের বেশি নার্স ও মিডওয়াইফ সংক্রমিত হন। এ সময়ে তাদের মধ্যে মারা যান ৩৬ জন।

সম্মুখসারির যোদ্ধা হিসেবে আবেদন করেও প্রধানমন্ত্রী ঘোষিত প্রণোদনা কেন পাননি, এ বিষয়ে জানতে চাইলে নার্সিং ও মিডওয়াইফারি অধিদপ্তরের ডেপুটি প্রোগ্রাম ম্যানেজার মো. আবদুুল লতিফ জানান, প্রণোদনা সরকার সাধারণত হাসপাতালগুলোর মাধ্যমে দিয়ে থাকে। সেক্ষেত্রে প্রণোদনার টাকা নার্সদের দিতে কিছু হাসপাতাল গড়িমসি করতে পারে। আমরা মন্ত্রণালয়ে প্রণোদনার জন্য আবেদন জানিয়েছি। সেক্ষেত্রে অনেককেই দেওয়া হয়েছে। করোনা ইউনিটে যারা কাজ করেছেন শুধু তাদের জন্যই প্রণোদনার আবেদন করা হয়েছিল। মহাখালী বক্ষব্যাধী হাসপাতালের সিনিয়র স্টাফ নার্স রাজিয়া বলেন, এখন আমাদের লোকবল বেড়েছে। আমাদের এখানে এখন প্রায় ৮০০ নার্স কাজ করছেন। করোনাকালীন অনেক সমস্যা নিয়েও কাজ করতে হয়েছে। আমাদের পর্যাপ্ত নিরাপত্তা সরঞ্জাম ছিল না। আমাদের অনেক সহকর্মী আক্রান্ত হয়েছিল। দলবদ্ধভাবে আমাদের কাজ করতে হয় তখন। এর মাঝে বিভিন্ন সমস্যা তো থাকবেই। কোভিড ওয়ার্ডে যারা কাজ করেছেন তারা সবাই না পেলেও কেউ কেউ প্রণোদনা পেয়েছেন। তবে কোভিড ওয়ার্ডের বাইরেও যারা কাজ করেছেন তাদেরও অনেক ঝুঁকি ছিল। এক্ষেত্রে হাসপাতালে সেবাদান সংশ্লিষ্ট সবাইকেই প্রণোদনার আওতায় আনা উচিত।

রুমা সাহা নামে অন্য একজন স্টাফ নার্স জানান, করোনাকালে সবাইকে কোভিড ওয়ার্ডে দেওয়া হয়নি। সেক্ষেত্রে আমাদের অনেকেই অন্য রোগীদের সেবা দিয়েছে। অনেকে জেনারেল ওয়ার্ডে ছিল। কোভিড ওয়ার্ডে না থেকেও অনেক নার্সকে আক্রান্ত রোগীর সংস্পর্শে আসতে হয়েছিল। কারণ, আক্রান্ত হিসেবে শনাক্ত হওয়ার আগ পর্যন্ত এসব রোগীদের জেনারেল ওয়ার্ডে রাখা হতো। রিপোর্ট পজিটিভ হলেই আমরা তাদের করোনা ইউনিটে পাঠিয়ে দিতাম। সেক্ষেত্রে সবাইকেই করোনার চ্যালেঞ্জ নিয়ে কাজ করতে হয়েছে।

বাংলাদেশ নার্সিং অধিদপ্তর বলছে, বাংলাদেশে রেজিস্টার্ড নার্স আছে ৭৬ হাজার ৫১৭ জন। আর মিডওয়াইফ আছেন ৬ হাজার ২৮৫ জন। এর মাঝে সরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে কাজ করছেন ৪২ হাজারের বেশি নার্স ও মিডওয়াইফ। এছাড়াও বেসরকারিভাবে কাজ করছেন প্রায় ৩০ হাজার।

সরকারি ও বেসরকারি মিলিয়ে নার্সিংয়ের ট্রেনিং ইনস্টিটিউট আছে ৪২৯টি। এর মাঝে সরকারি ডিপ্লোমা ইনস্টিটিউট আছে ৪৪টি। বেসরকারি ডিপ্লোমা ইনস্টিটিউট আছে ৩০০টির বেশি। সরকারি নার্সিং কলেজ বিএসসি ১৩টি আর বেসরকারি ১৪৫টি। এছাড়া সরকারিভাবে পোস্ট গ্র্যাজুয়েট কলেজ আছে একটি।

দেশের প্রায় সব হাসপাতালেই প্রয়োজনের তুলনায় নার্সের সংখ্যা অপ্রতুল। আন্তর্জাতিকভাবে একজন চিকিৎসকের সঙ্গে তিনজন নার্স থাকাই স্বীকৃত। কিন্তু সে হিসেবে বাংলাদেশে প্রত্যেক চিকিৎসকের বিপরীতে নার্স রয়েছেন ১ দশমিক ৬৬ জন। এছাড়াও প্রতিটি হাসপাতালের মোট শয্যার ১০ শতাংশ স্পেশালাইজড বেড থাকার কথা। আর সেক্ষেত্রে প্রতি চার বেড অনুপাতে একজন নার্স ও প্রতিটি স্পেশালাইজড বেডের বিপরীতে একজন করে নার্স থাকবে। সেখানে পৃথক তিন সিফটে সমপরিমাণ সেবা দেবেন নার্সরা। কিন্তু এক্ষেত্রে দেশের হাসপাতালগুলোতে নার্সের বড় ঘাটতি রয়েছে।

বাংলাদেশে বিশাল সংখ্যক নার্স ও মিডওয়াইফ গত ১০ বছরে নিয়োগ হয়েছে উল্লেখ করে নার্সিং ও মিডওয়াইফারি অধিদপ্তরের ডেপুটি প্রোগ্রাম ম্যানেজার আবদুল লতিফ বলেন, ২০১০ থেকে ২০২১ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত প্রায় ৩৪ হাজার নার্স ও মিডওয়াইফ নিয়োগ পেয়েছেন। এর আগে দেশে নার্স ছিল মাত্র ৯ থেকে ১০ হাজার। এখন সেটি কয়েকগুণ বেড়েছে। তবুও অনেক হাসপাতালে নার্স সংকট। এটা ঠিক যে জনবল বাড়লে সেবার গুণগত মানও বাড়ছে। নতুন যে নার্সরা নিয়োগ পাচ্ছেন পর্যবেক্ষণ ও মনিটরিংয়ের মাধ্যমে তাদের আরো যোগ্য ও দক্ষ করে তুলতে হবে।

আবদুুল লতিফ বলেন, আমাদের বটম লেভেলে পরিবর্তন হলেও আপার লেভেলে তেমন হয়নি। পুরোনো আদলেই কাজ চলছে। হাসপাতালগুলোতে যে নার্সরা আছেন তাদের গাইড করা বা কোনো ধরনের প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে না। বিএসসি নার্সিং কলেজগুলোতে আমরা অবকাঠামো পরিবর্তনের কাজ শুরু করলেও তেমন অগ্রগতি নেই। কোনো কলেজেই পূর্ণাঙ্গ অবকাঠামো ঠিক হয়নি। লোকবল নিয়োগ হচ্ছে না। এভাবে চললে নার্সিং শিক্ষায় ধস নামতে পারে। আমাদের দক্ষ প্রশিক্ষকের অভাবও রয়েছে। অনেক কাজ করার মোটিভেশন পায় না।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close