প্রতিদিনের সংবাদ ডেস্ক

  ১২ মে, ২০২২

সাগর তলের খনিজ...

প্রযুক্তির উন্নতি, বেড়ে চলা চাহিদা এমনকি পরিবেশ সংরক্ষণের তাগিদও কাঁচামালের অভাব প্রকট করে তুলছে। ফলে খোঁজ চলছে খনিজ পদার্থের বিকল্প উৎসের। সমুদ্রের তলদেশ থেকে খনিজ উত্তোলনের কথা ভাবা হচ্ছে। কেননা সাগর ও মহাসাগরের তলদেশে রয়েছে মূল্যবান সব ধাতু। এসব অতি মূল্যবান ধাতব খনিজ এখন উত্তোলনের কথা ভাবছে বিভিন্ন দেশ ও বৈজ্ঞানিকরা।

কোবাল্ট, তামা ও নিকেল ‘ট্রানজিশন মেটাল’ হিসেবে পরিচিত। আমাদের চারপাশে থাকলেও সেগুলোকে বিরল উপাদান হিসেবে গণ্য করা হয়। এমন উপাদান ব্যাটারি, স্মার্টফোন, ল্যাপটপ, ইলেকট্রিক গাড়ি, ফটোভোল্টাইক সিস্টেম এবং অন্য ধরনের পাওয়ার স্টোরেজ হিসেবে কাজে লাগে। খনিতে তামা, কোবাল্ট ও নিকেলের পরিমাণ অত্যন্ত সীমিত। অদূর ভবিষ্যতে সেগুলোর জোগান শেষ হয়ে যাবে। বিশেষ করে কোবাল্টের আকাল অনিবার্য। ২০২৬ সালের মধ্যে এর চাহিদা দ্বিগুণ হয়ে যাবে বলে অনুমান করা হচ্ছে। কংগো ও অস্ট্রেলিয়ায় কোবাল্টের সবচেয়ে বড় ভা-ার রয়েছে। প্রায়ই খনির পরিবেশ শ্রমিকদের জন্য অসহনীয় হয়।

সমুদ্রের নীচে পলিমেটালিক নডিউল হয়তো সমস্যার কিছুটা সমাধান করতে পারে। সেগুলির মধ্যে আনুমানিক ২৭ কোটি টন নিকেল লুকিয়ে রয়েছে। সে সঙ্গে ২৩ কোটি টন তামা এবং ৫ কোটি টন কোবাল্ট।

সমুদ্রতলে ৩ হাজার ৫০০ থেকে ৬ হাজার ৫০০ মিটার গভীরে বিশাল এলাকাজুড়ে সেই নডিউলগুলো ছড়িয়ে রয়েছে। সেই পরিবেশ এখনো মানুষের অগোচরে থেকে গেছে। পলিমেটালিক নডিউল খুব ধীরে গড়ে ওঠে। তার জন্য প্রয়োজন অক্সিজেন ও সুমেরু অঞ্চলের গভীর স্রোত।

নডিউল গড়ে ওঠার প্রক্রিয়া অত্যন্ত জটিল। সহজে বলতে গেলে শামুকের খোলস বা হাঙরের দাঁতের ক্ষুদ্র টুকরোর মতো জৈব কণা দিয়ে সেই প্রক্রিয়া শুরু হয়। লাখ লাখ বছর ধরে সমুদ্রের পানি ধাতব যৌগ দ্রবীভূত করে। প্রতি ১০ লাখ বছরে জৈব কণার উপর এক সেন্টিমিটার প্রলেপ যুক্ত হয়। তরপর আলু বা ফুলকপির মাথার মতো আকার সৃষ্টি হয়। ‘মাইনিং ইমপ্যাক্ট’ প্রকল্পের মাটিয়াস হেকেল বলেন, ‘১৮৭৪ সালে চ্যালেঞ্জার অভিযানে প্রথমবার ধাতব নডিউল আবিষ্কৃত হয়। অর্থাৎ অনেক সময় আগে এর অস্তিত্ব জানা গিয়েছিল। সে সময়ে সমুদ্রতলের নমুনা সংগ্রহের যন্ত্রপাতি দিয়ে কয়েকটি নডিউল তোলা হয়েছিল। সত্তরের দশকে অর্থনৈতিক কারণে আবার আগ্রহ জেগে ওঠে। মানুষ সেগুলোর মধ্যে ধাতুর সন্ধান পায়। তখন থেকেই আরো অভিযান শুরু হয়।’

অর্থাৎ শুধু বিজ্ঞানীরাই পলিমেটালিক নডিউলে আগ্রহী নন। বেশ কয়েকটি কোম্পানিও সেই ধাতু উদ্ধার করে কাজে লাগাতে চায়।

গভীর সমুদ্রে খননের প্রবক্তাদের মতে, সমুদ্রের নিচ থেকে নডিউল বের করা প্রথাগত খননকার্যের তুলনায় অনেক বেশি টেকসই পদ্ধতি। কারণ সেখানে কোনো জঙ্গল ধ্বংস করতে হয় না এবং মাটিও খুঁড়তে হয় না। শিশু শ্রম ও টক্সিক ধোঁয়ারও কোনো আশঙ্কা নেই। সমুদ্রতল থেকে নডিউল সংগ্রহ করলেই চলে।

অন্তত কাগজে-কলমে সেটাই হলো প্রক্রিয়া। কিন্তু গভীর সমুদ্রে তীব্র চাপ ইঞ্জিনিয়ারদের জন্য অন্যতম সমস্যা। এখনো পর্যন্ত কোনো যন্ত্র সমুদ্রতল থেকে বাণিজ্যিক আকারে নডিউল উদ্ধার করতে পারে না। ভ্যাকুয়াম ক্লিনারের মতো দেখতে যন্ত্র নিয়ে বর্তমানে পরীক্ষা-নিরীক্ষা চলছে। আরো কিছু প্রোটোটাইপ তৈরি করা হচ্ছে। সামুদ্রিক প্রাণিজগতের উপর সেই প্রযুক্তির প্রভাব আপাতত সবচেয়ে বড় দুশ্চিন্তার কারণ। কারণ ভবিষ্যতে যন্ত্র সমুদ্রতল থেকে শুধু নডিউল শুষে নেবে না। এর প্রভাব পড়বে সমুদ্রের গভীরে বাস করা জলজপ্রাণী প্রজাতির ওপর।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close