বেড়া-সাঁথিয়া (পাবনা) প্রতিনিধি

  ২৯ জানুয়ারি, ২০২২

স্কাইলার্ক পথপাঠাগারে কাশিনাথপুরে সাড়া

পাবনার সাঁথিয়া উপজেলার কাশিনাথপুরে স্কাইলার্ক ইন্টারন্যাশনাল স্কুলের মূল ফটকের বাইরে রাস্তার পাশে গড়ে উঠেছে ভিন্নধর্মী এক পাঠাগার। নাম স্কাইলার্ক পথপাঠাগার। এই পাঠাগারের দারুণ নিয়ম। এখানে রেজিস্টারে নিজের নাম, ঠিকানা আর ফোন নম্বর লিখে যে কোনো পথচারী ইচ্ছেমতো বিনামূল্যে পছন্দের বই বাসায় নিয়ে যেতে পারেন। বই নিলে সেটি পড়ে ফেরত দিতে হয়। সে সঙ্গে নিজের কাছে থাকা নতুন বা পুরাতন বই পাঠাগারে দান করার আহ্বানও করা হয়েছে পাঠাগারের পক্ষ থেকে। দেশের বাইরে এমন অনেক পাঠাগার দেখা গেলেও বাংলাদেশে উদ্যোগটি বিরল।

জানা যায়, ২৩ জানুয়ারি এই পথপাঠাগারের যাত্রা শুরু। কাশিনাথপুরের নাম করা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান স্কাইলার্ক ইন্টারন্যাশনাল স্কুলের অর্থায়নে সাংবাদিক, গীতিকার ও শিক্ষক আলাউল হোসেন পথপাঠাগারটি গড়ে তোলেন। তাকে সহায়তা করেন স্কুলটির সভাপতি প্রভাষক সালাহউদ্দিন আহমেদ ও পরিচালক ফজলুর রহমান।

আলাউল হোসেন নিজের সংগ্রহের প্রায় শতাধিক বই দিয়ে পাঠাগারটি শুরু করেন। পরে কলি প্রকাশনীর কর্ণধার ও কাশিনাথপুরের ‘প্রয়াস’ পাবলিক লাইব্রেরির সেক্রেটারি দুই শতাধিক বই দান করেন। এরপর এলাকার অনেক সচেতন মানুষ দু-চারটি করে বই দিয়ে পাঠাগারটি সমৃদ্ধ করে তোলেন। প্রতিষ্ঠার ৫ দিনের মাথায় এখন পাঁচ শতাধিক বই রয়েছে পাঠাগারে। প্রতিদিন ৫০ থেকে ৬০ পথচারী নিজেদের পছন্দের বই পাঠাগার থেকে নিয়ে যাচ্ছেন এবং পড়া শেষে আবার ফেরত দিয়েও যাচ্ছেন বলে জানা গেছে।

পাঠকদের অধিকাংশই স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থী। পথপাঠাগারটি সার্বক্ষণিক দেখভাল করছেন শিরিন স্টোরের স্বত্বাধিকারী সুরুজ আলী ও ‘আস্থা মেগাশপ’-এর ম্যানেজার আবির মাহমুদ সম্রাট। পাঠাগারের পাশেই তাদের প্রতিষ্ঠান। প্রতিদিন সকাল ৮টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত পাঠাগারটি সবার জন্য উন্মুক্ত থাকে। সকালে চাবি দিয়ে খোলা ও সন্ধ্যার পরে চাবি দিয়ে পাঠাগারের গ্লাস বন্ধ করে দেন স্বেচ্ছাসেবকরা। আশপাশের দোকানমালিকরাও অবসরে পাঠাগার থেকে বই নিয়ে পড়াশোনা করছেন।

আলাউল হোসেন এ ব্যাপারে বলেন, ‘জীবনের ব্যর্থতা, শূন্যতা ও হতাশা থেকে পরিত্রাণের একমাত্র উপায় বইপড়া। আমাদের সময় অ্যাকাডেমিক লেখাপড়ার পাশাপাশি সৃজনশীল পড়ে অথবা খেলাধুলা করে সময় কাটাত। এখন সেই জায়গা দখল করেছে ফেসবুক, স্মার্টফোন, ইন্টারনেট, ইউটিউব। এতে শিক্ষার্থীর মননশীল চর্চা একেবারেই কমে গেছে। সামাজিক মাধ্যমগুলোর অবাধ অপব্যবহার এই প্রজন্মকে অসহনশীল, অশালীন, অমার্জিত ও অসামাজিক করে গড়ে তুলছে।

তিনি আরো বলেন, নতুন প্রজন্মকে এই পথ থেকে ফেরানোর একটাই উপায়-বই পড়ানো। এই দিক বিবেচনায় আমি পথপাঠাগারের উদ্যোগ নিয়েছি। শুরুর দিকে ৫ দিনে শতাধিক পাঠক বই নিয়ে গেছেন। যাদের অধিকাংশ শিক্ষার্থী। স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীদের মধ্যে সাড়া জাগাতেই স্কুল-কলেজে যাতায়াতের কাশিনাথপুরের সবচেয়ে ব্যস্ততম রাস্তার ধারে পাঠাগারটি স্থাপন করেছি। আগামীতে এর পরিসর বাড়ানো হবে। সহযোগী পেলে আমি আমার নিজ জেলা পাবনার প্রতিটি উপজেলায় একটি করে পথপাঠাগার গড়ে তুলতে চাই।’

স্কাইলার্ক স্কুলের সভাপতি সালাহউদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘মানুষকে আলোকিত করার স্বপ্ন দেখাতেই এই পথপাঠাগারের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। একটি তথ্যনির্ভর ও আধুনিক সমাজ বিনির্মাণে নতুন প্রজন্মকে বইপড়ায় সম্পৃক্ত করতে পারলে সমাজ পরিবর্তন সম্ভব সহজেই।’

আরেক উদ্যোক্তা ফজলুর রহমান বলেন, ‘স্কাইলার্ক পথপাঠাগার তরুণের মধ্যে এরই মধ্যে সাড়া জাগাতে সক্ষম হয়েছে। পাঠকের আগ্রহ সত্যিই অবিশ্বাস্য!’

পাঠাগারের পাশেই অবস্থিত মীর ইলেকট্রিকের মালিক মীর আবদুল বারেক বলেন, ‘এই পাঠাগারটি সম্পূর্ণ আলাদা। এখানে বই নিতে বা ফেরত দিতে কারো শরণাপন্ন হতে হয় না। এরকম একটি আয়োজন আমার ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের পাশেই, ভাবতেই ভালো লাগছে। অবসরে দোকানে বসে পছন্দের বই পড়তে পারছি।’

?‘বোধোদয়ের আন্দোলনে স্কাইলার্ক পথপাঠাগার’-এ রকম স্লোগান নিয়ে যাত্রা শুরু হয়েছে ওই পথপাঠাগারের। সেলফে দুই হাজারের অধিক বই রাখা যাবে বলে জানান উদ্যোক্তারা। প্রায় ৩০ হাজার টাকা ব্যয়ে সেলফটি তৈরি করা হয়েছে। বৃষ্টি হলে যাতে পানি না ঢোকে সেজন্য মোটা থাই গ্লাস দেওয়া হয়েছে।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close